কক্সবাজারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ চায় চাঁদপুরবাসী
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি রেল যোগাযোগ শুরু হতে যাচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ প্রকল্প নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই উদ্বোধন হতে পারে। এবার কক্সবাজারের সঙ্গে চাঁদপুরের রেল যোগাযোগ স্থাপনের দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছেন চাঁদপুর স্টেশনের মাস্টার সোয়াইবুল সিকদার।
চিঠিতে বলা হয়েছে, চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ হয়ে ৩৮ বছর ধরে একটি ট্রেন আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস সরাসরি যাতায়াত করে। এই ট্রেনে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ চলাচল করে থাকে। ট্রেনটি ভোর ৫টায় চাঁদপুর ছেড়ে চট্টগ্রামে পৌঁছায় সকাল সাড়ে ৯টায়। এর পর প্রায় ৮ ঘণ্টা চট্টগ্রাম স্টেশনে অলস সময় কাটিয়ে বিকেল ৫টায় চাঁদপুরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছাড়ে। এই ৭-৮ ঘণ্টা অলস বসে না থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছার ২০ মিনিট পরই কক্সবাজারের উদ্দেশে ছাড়লে দুপুর দেড়টা কিংবা পৌনে ২টার মধ্যে পৌঁছাতে পারে। কক্সবাজার থেকে বিকেল আড়াইটায় ছেড়ে এলে পর্যটকদের নিয়ে বিকেল ৫টার আগেই চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাতে পারে। সেখান থেকে বিকেল ৫টা কিংবা সাড়ে ৫টায় ছেড়ে এলে রাত ১০টার মধ্যেই চাঁদপুরে পৌঁছে যাবে ট্রেনটি। কোনো সমস্যাই হবে না।
রেল কর্মকর্তা সোয়াইবুল সিকদার বলেন, মেঘনা আন্তঃনগর কখনোই অলাভজনক হয়নি। আর কক্সবাজারের সঙ্গে যদি তার সংযোগ হয়, তাহলে ট্রেনটি পর্যটক কিংবা যাত্রী বহন করে তো লাভবান হবে।
কক্সবাজারের সঙ্গে চাঁদপুরের রেল যোগাযোগ স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মনিরা আক্তার বলেন, কক্সবাজারের সঙ্গে চাঁদপুরের রেল যোগাযোগ শুরু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটকদের দ্বার উন্মোচিত হবে। বেহাল ট্রেন যোগাযোগের কারণে মার খাচ্ছে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য। যোগাযোগ দুর্ভোগের কারণে এখানকার ভ্রমণপিপাসু মানুষ সহজে কক্সবাজার যেতে পারে না।
কথা হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চাঁদপুর-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন ব্যবস্থা যে কতটা বড় সুফল দেবে, তা আমি বর্ণনা করতে পারব না ভাই। আমাদের কলেজেরই ১৭টা ডিপার্টমেন্ট। শুধু আমার ডিপার্টমেন্ট থেকেই আমরা বছরে ৬-৭টা শিক্ষা সফরে কক্সবাজারে যাই। এ রকম মনে করে প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট থেকেই শিক্ষার্থীদের কক্সবাজার যাওয়া হয়। বাসে ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ ও অনেক টাকাও খরচ হয়। সময়ও লাগে ১২-১৩ ঘণ্টা। আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন যদি কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে ৮ ঘণ্টা বা তারও আগে পৌঁছানো যাবে নিরাপদে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারীর সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, চাঁদপুরের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। হাজার হাজার মানুষ চাঁদপুর থেকে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়া-আসার কষ্ট ভোগ করেন। এখন কক্সবাজারের সঙ্গে যেহেতু রেল যোগাযোগ স্থাপিত হতে যাচ্ছে, সেহেতু এই রুটে ট্রেন যাত্রা সহজতর হবে। আর সেটি মেঘনা আন্তঃনগর হলেও ভালো বা সরাসরি আরেকটি ট্রেন দেওয়া যায় কিনা, সেটাও ভাবা দরকার।
এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের জনারেল ম্যানেজার ( জিএম) মো: জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, চাঁদপুর-কক্সবাজার ট্রেন যোগাযোগে আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে কথাবার্তাও হয়েছে, হচ্ছে। লাইনটা শুরু হোক এবং দেখা যাক কতোটা বাস্তবায়ন করা যায়।