ঘুর্ণিঝড়ে চাঁদপুরে বিদ্যুৎ বিপর্যয় : পল্লী বিদ্যুতের ৭২টি খুঁটি ভেঙেছে
* ফসল, ঘর, গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে চাঁদপুর শহর ও ৮টি উপজেলায় বিদ্যুত সরবরাহ মারাত্মক বিঘœ ঘটেছে। ঘূর্ণিঝড়টির ঝড়ো হাওয়াতেই ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। ২৪ অক্টোবর ঝড়ের শুরুর দিকে বাতাসের গতি বাড়তেই বন্ধ হয়ে যায় পুরো চাঁদপুর জেলা। এছাড়া এ ঝড়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে পড়ে বসতঘরের ক্ষয়ক্ষতি এবং ফসলের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ঝড় শুরু হওয়ার পর চাঁদপুর শহরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও পৌর এলাকার ষোলঘর, বিষ্ণুদী রোড, ব্যাংক কলোনী, বাগাদীসহ অনেক এলাকাই প্রায় ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকে। আর পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন ৮টি উপজেলার গ্রামাঞ্চল আরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। এতে করে এসব এলাকার বাসিন্দারা পড়েন চরম দুর্ভোগে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বাসা-বাড়ির ফ্রিজে থাকা মাছ, মাংসসহ অন্যান্য কাচা খাদ্যপন্য গন্ধ ছড়ায়।
শহরের কয়েকজন গৃহীনি বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় ঝড়ো হাওয়া শুরু হওয়ার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। আমরা ভেবেছিলাম ঝড়ের কারণে হয়তো দু’-চার ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকবে না। কিন্তু পুরো রাত এবং মঙ্গলবার পুরো দিন কাটে বিদ্যুৎবিহীন। এর মধ্যে বহুবার বিদ্যুৎ বিভাগে কমপ্লেইন করার পরও বিদ্যুৎ আসেনি। প্রায় ২৪ ঘন্টার মতো দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বাসা-বাড়িতে পানি সংকট দেখা দেয়। এতে গৃহস্থলির কাজসহ স্বাভাবিক জীবন-যাপনে সমস্যা হয়। এছাড়া ফিজের মাছ-মাংস নষ্ট হয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত ডিভাইজগুলো। বিশেষ করে মোবাইল ফোন, লেপটপ, কম্পিউটার এবং আধুনিক অন্যান্য যন্ত্রপাতি পরিচালনায় যুক্ত ব্যাক্তিরা।
এ বিষয়ে চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছিল। তবে মঙ্গলবার সকালেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। সন্ধ্যার আগেই প্রায় সবকটি এলাকার সমস্যা সমাধান করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হয়েছে। শুধুমাত্র বাগাদী এলাকার সমস্যা সরানো যায়নি। বুধবারের মধ্যেই তাও ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, চাঁদপুরে বিদু্যুতের বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। লাইনের মধ্যে গাছপালা পড়েছিল। দু’ একটা পুল হেলে গিয়েছে।
তিনি জানান, চাঁদপুরে গতকাল থেকে চাহিদা পুরোপুরি অর্থাৎ ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছি।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা বিচ্ছিন্ন। সদর উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ ছিল না। গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের ওপরে অনেক স্থান গাছ ভেঙে পড়েছে। যে কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ।
এদিকে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ-২ এর জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ঝড় শুরু হওয়ার পর কোথাও বিদ্যুৎ রাখা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে রাত ১০টার পর থেকে যেভাবে বাতাসের গতি বেড়েছিল এতে বিদ্যুৎ রাখার কোন সুযোগ ছিল না।
তিনি জানান, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ঝড়ে ৩২টি খুটি ভঙেছে। লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে আমাদের লোকজন সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে। অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। কিছু জায়গায় এখনো বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হয়নি। আশাকরি, বুধবারের মধ্যেই সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
অন্যদিকে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ-১ অঞ্চলে ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেনারেল ম্যানেজার। তিনি জানান, অন্তত ৪০টি খুটি ভেঙে গেছে। ১২টি ট্রান্সফর্মার নষ্ট হয়েছে। ঝড় শুরু হওয়ার পর পুরো এলাকাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে গতকাল পর্যন্ত ৭০ ভাগ এলাকাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে। বাকী ৩০ ভাগ এলাকাতে দ্রæতই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।