চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় স্বীয় সৌন্দর্য্যে ফিরে এলো ২টি ভাস্কর্য
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের প্রচেষ্টায় চাঁদপুর জেলায় সংস্কারের অভাবে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের দু ‘টি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ভাস্কর্য “অঙ্গীকার” ও “রক্তধারা” পুনঃসংস্কার করা হয়। ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের ছাত্র শিল্পী আনিস মামুনের তত্ত্বাবধানে এই কাজটি সম্পূর্ন করা হয়। এ দু’টি বাস্তবায়নে একটি কমিটি করা হয়। কমিটি কাজটি তদারকি করেন এবং পুনসংস্কারের অর্থ যথাযথভাবে খরচ করেন। কমিটির সভাপতি চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও জেলা সাহিত্য একাডেমির মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত। একাজে সহযোগিতা করেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, লেখক ছড়াকার পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শান্ত, লেখক ফরিদ হাসান। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২৬ মার্চ ২০২২ দুপুরে পুনঃসংস্কারকৃত ভাস্কর্য দু’টির ফলক উন্মোচন করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ স্বাধীনতার পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরীকে সাথে নিয়ে দু’ টি ভাস্কর্যই উদ্বোধন করেন। এসময় পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেন সংস্কার কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ মহতী কাজটি করায় আনন্দে জেলা প্রশাসককে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন্নাহার।
জেলা প্রশাসক অঙ্গীকার পূনঃসংস্কারে যে কাজটি করেছেন, তা এটি তৈরির তিন দশকেও কেউ চিন্তা করেনি। আর তা হচ্ছে – এটির নির্মাতা আবদুলাহ খালিদের নাম নিশানার দিকে কেউই নজর দেননি। তাঁর নামটা কোথাও ছিলো না। অপারেজয় বাংলার নির্মাতার এ অসাধারণ সৃষ্টিকারির নাম ফলকটি লাগিয়ে দেন জেলা প্রশাসক। আবদুল্লাহ খালিদের ছাত্র এটির পুনঃসংস্কারে হাত দেয়া শিল্পী আনিস মামুনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশ মহোদয় স্যারের নামফলকটা দিয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।এটি একজন খ্যাতিমান শিল্পীর প্রতি যথার্থ সম্মান।
উল্লেখ্য, প্রায় ৩৩ বছর পর “অঙ্গীকার” এর সংস্কার নিয়ে কতিপয় লোক সামাজিক যোগাযোগে অসংলগ্ন কিংবা না বুঝেই অথবা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নানা মন্তব্য করা শুরু করেন, যদিও চাঁদপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ বেশির ভাগ মানুষই এ কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা সমালোচনা করতে গিয়ে বলছেন, জেলা প্রশাসক তার নামখঁচিত করেছেন, এটির মধ্যে সাদা রং লাগানো হয়েছে ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে এর পুনঃসংস্কারে আসা শিল্পী আনিস মামুন বলেন, সাদা যে রং মাখা হয়েছে, এর কোন বিকল্প ছিলো না, কারন মাঝে মাঝেই এর শরীরে না বুঝেই মেটে রং না দিয়ে সাদা রং লাগানো হয়েছে। এবার আমি কাজ করতে এসে তা দেখলাম। তিনি বলেন, এই পুরানো রং যদি ফেলতে যাই আর সে রং দিতে যাই তা ফিরবে না। ফলে আমি আবদুল্লাহ খালিদ স্যারের মেয়ের সাথে ( তিনিও শিল্পী) যোগাযোগ করে সাদা রংটি দেই। আর এটা না করলে সমস্যায় পড়তে হতো। জেলা প্রশাসক অন্জনা খান মজলিশ বলেন, অঙ্গীকার পূনঃসংস্কার করতে গিয়ে আমি আগের উদ্বোধন কিংবা ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এসবে হাত দেইনি। শিল্পী আবদুল্লাহ খালিদের নামফলক দিয়েছি। আর যেহেতু এটি পুনঃসংস্কার আমাদের জেলা প্রশাসন করেছে, তাই জেলা প্রশাসক হিসাবে আমার ফলক দেয়া হয়েছে। এর আগে শামসুল আলম স্যার শুভ উদ্বোধন করেন এবং এরশাদ সাহেন এটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। আমরা সেগুলোকে হাত দেইনি। তিনি বলেন, ভালো কাজে একধরণের লোকরা দোষ খোঁজে, সমালোচনা করে। এটা তাঁদের একরকম নিয়মিত কাজ। জেলা প্রশাসক বলেন,মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া, মহান স্বাধীনতার মাসে স্বাধীনতা দিবসে কাজটা করতে পেরেছি। তিনি বলেন, এর কমিটির সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানাই।