চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ ৪ নদীতে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ
চোরাই বালু পরিবহণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ, ধরা পড়লে আইনগত ব্যবস্থা
– ইব্রাহীম রনি :
ইলিশের আবাসস্থল নিরাপদ রাখতে এবং সরকারি সম্পদ রক্ষায় চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনায় অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো। নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ড্রেজার ও বালুবাহী বাল্কহেড জব্দ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে চাঁদপুরের ৪টি নদী অঞ্চল থেকে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ এবং সেই সাথে বালু পরিবহণ ও বিক্রিও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়ের বাইরে নির্ধারিত এলাকায় এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ২৫ মার্চ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
এদিকে জেলা প্রশাসকের এক সতর্ককরণ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের বাইরে নির্ধারিত এলাকায় বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হলো। বালু উত্তোলনের পর পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হলো। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া, ধনাগোদা নদী হতে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হলে তা চোরাই বালু হিসেবে ঘোষণা করে বালু বিক্রিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ কাজে ব্যবহৃত জলযানগুলো জব্দ করা হবে। যেসব জায়গায় বেআইনিভাবে চোরাই বালু জড়ো করে রাখা হয়েছে তা বিধি মোতাবেক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনে নেয়া হবে এবং এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, সমস্ত নদীর মালিক হচ্ছে সরকার। যে জেলার উপর দিয়ে যে নদীর যতটুকু বয়ে গেছে তা সরকারের পক্ষে নদী রক্ষার জন্য দায়-দায়িত্ব হচ্ছে জেলা প্রশাসকের। কারণ, নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। সেক্ষেত্রে যেহেতু এখানের কোন নদীতে কোন বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়নি, তাই কোন পক্ষের অনুমতি ছাড়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। বালু উত্তোলন করে যদি কেউ বিক্রি করে সেটি চোরাই বালু হবে। আর যেখানেই আমরা চোরাই বালু পাবো সেখানেই আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বালু উত্তোলনের কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। সরকার বঞ্চিত হয়েছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্র। এ অবস্থায় চাঁদপুরের নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে ভাঙন কবলিত মানুষ, জেলে ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিআইডব্লিউটিএ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামত ও চিঠির আলোকে সরকারি সম্পদ ও ইলিশ রক্ষায় ভূমি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নদী রক্ষা কমিশসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
ওই চিঠির পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে সম্পৃক্ত অবৈধ নৌযান জব্দ ও চোরাই বালু বিপণন কার্যক্রমে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনার পর ২৪ মার্চ জেলা, উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে নদীতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই অভিযানে ৩টি ড্রেজার ও ৮টি বালু পরিবহনকারী বাল্কহেড জব্দসহ ২২ জনকে আটক করা হয়। পরে ২১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
চাঁদপুর নৌ থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আটককৃতদের ভ্রামম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান শেষে রাত সাড়ে ৯টায় জেলা হাজতে প্রেরণ করা হয়। জব্দকৃত অবৈধ ড্রেজার ও বাল্কহেডগুলো নৌথানার হেফাজতে রয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।