চাঁদপুরের সরকারি হাইস্কুলগুলোতে শিক্ষক সংকট, একটিতেও নেই প্রধান শিক্ষক

দেলোয়ার আহমেদ :
চাঁদপুর জেলায় সরকারি হাই স্কুলগুলোতে শিক্ষক সংকটে মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান। এসব স্কুলে সহকারি শিক্ষকের পদ শুন্য ৫০টি। তাছাড়া এগুলোতে দীঘর্দিন যাবত নেই প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকও। বছর ঘুরতেই চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেল, জেলায় নতুনগুলো বাদে পুরাতন সাতটি সরকারি হাই স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে, ৩টি জেলা সদরে, ২টি হাইমচরে ও ২টি কচুয়া উপজেলায়। এই সরকারি হাই স্কুলে ৫০ সহকারি শিক্ষকের পদ শুন্য পড়ে আছে দীঘর্দিন যাবত। ৭টি সরকারি স্কুলের একটিতেও নেই প্রধান শিক্ষক। বছরের পর বছর চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। ৬টি সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদও দীঘর্দিন যাবত শূন্য পড়ে আছে। সহকারি শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। এতে ব্যাহত হচ্ছে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান। এমনটাই জানালেন বেশ কিছু শিক্ষক ও সচেতন অভিভাবক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার মো গিয়াসউদ্দীন পাটোয়ারীও এ সংবাদ নিশ্চিত করেন।
দেশে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমনের হার কমে আসার পরে সরকারি হাই স্কুলগুলো খোলার পর আবার প্রাণ ফিরেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শুরু হয় জোরে শোরে পাঠদান। কিন্তু সহকারি শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে এসব সরকারি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে সুষ্ঠু পাঠদান।
শিক্ষক সংকটেতো শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে! করোনায় যা ক্ষতি হয়েছে তা পূরন করে সামনে এগিয়ে যাবার জন্য শিক্ষক সংকট দূর করা একান্ত জরুরী – এমনটাই জানালেন বেশ বিশ কিছু শিক্ষক ও সচেতন অভিভাবক।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো গিয়াস উদ্দীন পাটোয়ারি জানান, জেলায় একটি কারিগরি হাই স্কুলসহ ৭টি সরকারি হাই স্কুল রয়েছে। এ সব স্কুলের একটিতেও নেই প্রধান শিক্ষক। ৫টিতে নেই সহকারি প্রধান শিক্ষক। চলছে সিনিয়র শিক্ষক দিয়ে। সিনিয়র শিক্ষকগণই এসব স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। সহকারি প্রধান শিক্ষক ৯ জনের স্থলে আছে ৩ জন। বাকি ছয়জন নেই দীঘর্দিন যাবত।
সহকারি শিক্ষক সংকট আছে অনেক। এসব স্কুলে ৫০ জন সহকারি শিক্ষক নেই দীঘর্দিন যাবত। অবশ্য, তিনি আশাপ্রকাশ করে বলেন, এ সংকট ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার ১৩৫ বছরের ওইতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন ও জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান “হাসান আলী সরকারি হাই স্কুলে’ অনেক সহকারি শিক্ষকই নেই। এখানে পাবলিক পরীক্ষায় বরাবরই ১০০% পাস করে। জেলার শ্রেষ্ঠ ফলাফল করে এখানে। শিক্ষক সংকটের ফলে ব্যাহত হচ্ছে সুষ্ঠু পাঠদান। জোড়াতালি দিয়ে কি পাঠদান চলে? জানালেন কিছু সচেতন অভিভাবক। এ স্কুলে ২ শিফটে ছাত্রসংখ্যা প্রায় ১২শত -জানান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বেগম। এ স্কুলে ১৬ জন সহকারি শিক্ষক নেই দীঘর্দিন যাবত। এসব সীমাবদ্বতা থাকা সত্বেও সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কাযর্ক্রম চালিয়ে যাচ্ছি –জানান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। তবে এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা ফেরদৌস আরা বেগম আগে থেকেই প্রশাসনিকভাবে অত্যন্ত দক্ষ বলেই তিনি তা সামলে নিতে পারছেন।
একই অবস্থা জেলার একমাত্র কারিগরি প্রতিষ্ঠান “চাঁদপুর সরকারি টেকনিক্যাল হাই স্কুলে’’। এখানে দীঘর্দিন যাবত সহকারি শিক্ষক নেই ১৫ জন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে কাজ চলছে দীঘর্দিন যাবত। নেই সহকারি প্রধান শিক্ষকও।
একই অবস্থা শহরের আরেক সুপ্রাচীন (প্রায় শতবর্ষী) বিদ্যাপীঠ- “মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’’। এখানেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে দীঘর্দিন যাবত। সহকারি শিক্ষক নেই ১০ জন। এটিও জেলার শ্রেষ্ঠ বালিকা বিদ্যালয়।
হাইমচর সরকারি হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: ফজলুল হক জানান, তাঁর স্কুলে সহকারি শিক্ষক নেই ৪ জন। নেই ক্রিড়া শিক্ষক। ফি বছর জুড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এ প্রতিষ্ঠান চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে।
ওদিকে হাইমচর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ও চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সিনিয়র শিক্ষক) দিয়ে। এভাবেই চলছে দীর্ঘ ছয় বছর যাবত, জানালেন বতর্মান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সিনিয়র শিক্ষক) মো: শাহ ইমরান। তিনি বলেন, আমি নিজেই ক্রীড়া শিক্ষক। সম্প্রতি নতুন চারজন শিক্ষক বদলিজনিত কারণে কুমিল্লা থেকে এসে এখানে যোগদান করায় এখানে প্রায় সব শিক্ষকই কর্রমরত আছেন। একটি সহকারি শিক্ষকের পদ শুন্য।
এদিকে কচুয়া সরকারি পাইলট হাই স্কুলও চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। সহকারি শিক্ষক নেই ৪ জন। সহকারি প্রধান শিক্ষকও নেই। ওদিকে সম্প্রতি কয়েকজন শিক্ষক বদলী হয়ে আসায় সরকারি শহীদ স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ে নেই শিক্ষক সংকট। তবে দীঘর্দিন যাবত স্কুলটি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সিনিয়র শিক্ষক) দিয়ে।
তাছাড়া অধিকাংশ স্কুলেই নেই ক্রিড়া শিক্ষক।
এদিকে জেলা শিক্ষা অফিসার গিয়াস উদ্দিন জানালেন, পুরাতন ৭টি সরকারি স্কুল বাদেও চাদপুরে সরকার আরও ৫টি স্কুলকে জাতীয়করণ করেছে। এগুলো হচ্ছে ছেঙ্গারচর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মতলবগঞ্জ জেবি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, শাহরাস্তি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, হাজীগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ। এর মধ্যে প্রথম দু’টির শিক্ষকরা সরকারি স্কুলের বেতন পান। তবে তাদের কোন বদলি বা অন্যান্য কোন সুবিধাদি এখনো হয়নি। বাদ বাকি ৫টি স্কুল সরকারি হয়েছে তবে শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি আগের মতোই বেসরকারি পর্যায় থেকে পান।

শেয়ার করুন

Leave a Reply