জেলেদের চাল নিয়ে অনিয়ম ঠেকাতে অভিযানে দুদক
ইব্রাহীম রনি :
চাঁদপুরে জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম ঠেকাতে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণকালে সেখানে হাজির হয় দুদকের টিম। প্রাথমিক তদন্তে জেলেদের চাল কম দেওয়ার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। যদিও ওই ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বরাদ্দ কম পাওয়ায় সব জেলেদের মতামতের ভিত্তিতে সবাইকে চাল দিতে গিয়ে কিছুটা কমবেশি হয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকেই হানারচর ইউনিয়নে জেলে চাল বিতরণ শুরু হয়। বিতরণের এক পযার্য়ে সেখানে উপস্থিত হয় চাঁদপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালকের মো. আজগর হোসেনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি টিম। এ সময় তারা প্রথমেই একাধিক চালের বস্তাসহ একটি ভ্যান জব্দ করে। একে একে তারা বিভিন্ন জেলের সাথে কথা বলে। জেলেদের দেওয়া একাধিক চালের বস্তা ওজন দেওয়া হয়। তখন কয়েকটি বস্তায় চালের পরিমাণ কিছুটা কম দেখা যায়। এ সময় জেলে চাল বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দুদক টিম ইউপি চেয়ারম্যান সাত্তার রাড়ীর কাছে জেলের সংখ্যা ও চাল সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে চায় এবং ভ্যানে থাকা একাধিক বস্তুার কার্ডধারী জেলেকে আসতে বলে। এক পযার্য়ে ওই চালের কার্ডধারীরা এলে তারা কে কি পেশায় আছে তা জানতে চান দুদকের কর্মকর্তারা। তখন বেশিরভাগ জেলের ভেতর দেখা যায় একজন মসজিদের মুয়াজ্জিন, কৃষকও নিচ্ছেন চাল। তাদের দাবি, তারা আগে জেলে ছিলেন, এখন পেশা পরিবর্তন করেছেন।
এ বিষয়ে চাঁদপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আজগর হোসেন বলেন, ১৩নং হানারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল ভুয়া জেলে কার্ড সৃষ্টি করে চাল দেওয়া হচ্ছে এবং জেলেদের চালগুলো অন্য জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী কার্ডধারী জেলেরা যে চাল পাওয়ার কথা তা না দিয়ে চাল পরিমাণে কম দেওয়া হচ্ছে। আমরা কমিশনের অনুমোদনক্রমে দুদকের টিম এখানে আসি। আমরা এসে অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত করেছি। কিছু ক্ষেত্রে সত্যতাও পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যেক জেলে ৪০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশন অনুযায়ী ৩৬.৮০ কেজি করে দেওয়ার কথা। কিন্তু এখানে এসে দেখেছি জেলেদেরকে ৩১ থেকে ৩৫ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা এখানে যেসব ফাইন্ডিংস পেয়েছি, সেটি প্রতিবেদন আকারে আমরা কমিশন বরাবর দাখিল করবো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হটলাইন ১০৬ নম্বরে ফ্রিতে কল করে অভিযোগ জানানো হলে কমিশনের অনুমোদনক্রমে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এছাড়া অভিযোগ পেলে অন্যান্য ইউনিয়নেও যাবে দুদক দল।
এ বিষয়ে হানাচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাত্তার রাঢ়ী বলেন, আমাদের ইউনিয়নে কার্ডধারী জেলে ২ হাজার ১৮১ জন। কিন্তু বরাদ্দ এসেছে ২ হাজার ৭ জনের। সকল জেলের জন্য চাল বরাদ্দ পাইনি। বরাদ্দ অনুযায়ী ১৭৪ জনের চাল কম পেয়েছি। গত বছরও ১৯২ জনের চাল কম এসেছিল, যেটি নিয়ে পরবর্তীতে সমস্যা হয়েছিল। তখন জেলেরা বলেছিল, যে চাল এসেছে তা সকল জেলেকে ভাগ করে দেওয়ার জন্য। তাই এ বছর জেলেদের মতামতের বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের এ বিষয়ে রেজুলেশন করে প্রাপ্ত চাল সকল জেলের মাঝে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, এবার প্রায় ৭ টন চাল কম এসেছে। যে চাল এসেছে সেটি ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে জেলেদের মতামেরত ভিত্তিতেই। এখানে উনারা (দুদক কর্মকর্তারা) এসে কয়েকটা বস্তা ওজন দিয়ে তার মধ্যে দুক একটি বস্তায় কিছুটা কম পেয়েছে। আবার কয়েকটিতে কিছুটা বেশি পেয়েছে। এর কারণ হচ্ছে- চালতো ওজন দিয়ে দেওয়া হয় না। চাল দেওয়া হয় বালতি মেপে। সে কারণে কিছুটা হয়তো কম বেশি হতে পারে।