ডাকাতিয়ায় বাল্কহেড-ট্রলারের সংঘর্ষে নিহত ৫, আটক ৪ : তদন্ত কমিটি গঠন
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে মাটিবাহী ট্রলারের সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি সোমবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে সদর উপজেলার মোমিনপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের সবার বাড়ি কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন এলাকায়। কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ ধারণা করছে, ঘনকুয়াশার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
নিহতরা হলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরের মো. আউয়াল মাঝি (৬৫), একই এলাকার মো. মোবারক হোসেন (৫৫), তিতাস উপজেলার মো. নাসির উদ্দিন (৩৫), মুরাদনগরের পুকুরিয়া এলাকার আল-আমিন (৩৫) ও তিতাস উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার নজরুল (৪০)।
এদিকে এ ঘটনায় বালুবাহী বাল্কহেড ইকবাল হোসেন-১ জব্দ করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে বাল্কহেডের ৪ জন স্টাফকে। আটককৃতরা হলেন : মো. জাবেদ, আবুল বাশার, মো. ইউনুস ও দিদার। তারা সকলেই ইকবাল হোসেন-১ নামক বালুবাহী বাল্কহেডের শ্রমিক। তবে সুকানি পালিয়ে গেছেন।
বেঁচে যাওয়া ট্রলার শ্রমিক ফরিদ হোসেন জানান, আমরা মাটিভর্তি ট্রলার নিয়ে আমাদের সাইট দিয়েই যাচ্ছিলাম। মমিনপুর এলাকায় পার হবার সময় কুয়াশায় উল্টো দিক থেকে আসা এমবি ইকবাল হোসেন-১ নামে একটি বালুবাহী বাল্কহেড আমাদের ট্রলারকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে আমাদের ট্রলারটি পানিতে ডুবে যায় এবং ট্রলারের থাকা আমাদের ১১ জন যাত্রীর মধ্যে ৫ জন নিহত হয়।
কোস্টগার্ডের কন্টিজেন কমান্ডার মো. নাসির উদ্দিন জানান, কোস্টগার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. মাশহাদ উদ্দিন নাহিয়ানের নির্দেশে আমরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছি। বালুভর্তি বাল্কডেহ ও মাটিভর্তি ট্রলারের সাথে সংঘর্ষের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে পরে ৬ জন সাঁতরে তীরে উঠলেও ৫ জন নিখোঁজ থাকেন। আমরা একজনের মরদেহ এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
বাগাদী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড মমিনপুর গ্রামের ইউপি সদস্য রিয়াজ উদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, বাল্কহেডটি চাঁদপুর থেকে বালু নিয়ে হাজীগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল এবং মাটিবাহি ট্রলারটি বিপরীত দিক থেকে মৈশাদী এএমএস ইটভাটার মাটি নিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থল মমিনপুর ডাকাতিয়া নদীর বাঁক এলাকায় বাল্কহেডের ধাক্কায় মাটিবাহী ট্রলারটি পানিতে নিমজ্জিত হয়। এতে ট্রলারে থাকা মাঝিসহ ১১ শ্রমিকের মধ্যে ৫ জন ডুবে যায়। এর মধ্যে মাঝি আউয়ালকে প্রথমে স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি সেখানেই মৃতুবরণ করেন।
চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উত্তর এর উপ সহকারী পরিচালক মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ডুবুরি দল ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। তাদের মৃতদেহ নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
চাঁদপুর নৌ থানার ওসি মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘনকুয়াশার কারণে সকাল পৌনে ৭টার দিকে বাল্কডেহ ও ট্রলারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌ ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। এ ঘটনায় ৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মরদেহ সুরতহালশেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা ইকবাল হোসেন-১ নামক বালুবাহী বাল্কহেডের ৪ জনকে আটক করেছি। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
নৌপুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে পুলিশ পরিদর্শক মুজাহিদ ও মিজানকে নিয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
তিনি বলেন, বাল্কহেডের বেপরোয়া গতির জন্যই মূলত এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা মনে করছি। পলাতক সুকানিকে আটকের জন্য চেষ্টা চলছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১৫-২০ হাজার টাকা সহযোগিতা দেয়া হবে। ইতোমধ্যেই তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।