প্রতিটি পূমন্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে : জেলা প্রশাসক
চাঁদপুর সম্প্রীতির শহর, এটি ধরে রাখতে হবে : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়
: আশিক বিন রহিম :
চাঁদপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে সভার শুরুতেই বিগত সভার কার্যবিবরণী পাঠ এবং সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমতিয়াজ হোসেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারি দুলাল, পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, এনএসআই চাঁদপুর এর উপ-পরিচালক শাহ আরমান আহমেদ, এডিএম নাসির উদ্দিন সারোয়ার, জেলা স্কাউট কমিশনার ও হরিভোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাড. রনজিত রায় চৌধুরী, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সদস্য সচিব রাধা গোবিন্দ গোঁপ, সদর উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, যুগ্ম সম্পাদক বিমল চৌধুরী, মতলব উত্তর উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি শ্যামল চন্দ্র প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হলো সম্প্রীতির বাংলাদেশ। এই সম্প্রীতি ধরে রাখতে হবে। কখনো গুজবে কান দিবেন না। গুজব যাচাই করবেন, সেটি প্রশাসনকে জানাবেন। কিন্তু সেটি নিয়ে যাতে ঝামেলা না হয়। হিন্দুধর্মালম্বিদের বড় উৎসব হলো দুর্গাপূজা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। দুর্গাপূজায় প্রতিটি মন্ডপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। মন্ডপ কমিটির পক্ষ থেকে প্রহরা নিশ্চিত করতে হবে। কিছু কিছু দুষ্কৃতকারী সবসময় সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টায় থাকে। তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পূজামণ্ডপে ধর্মীয় সংঙ্গীত বাজাবেন। বাংলা ভাষায় অনেক ভালো ভালো গান আছে। সেগুলো বাজাবেন। উচ্চ আওয়ার পরিহার করবেন। উগ্রতা করা যাবে না। আযানের সময়সূচি খেয়াল রাখবেন। এতে সম্প্রীতি সুন্দর হবে।
প্রতিটি মন্ডপের জন্যে সরকারি যে অনুদান বরাদ্দ হয়েছে তা সহসাই পৌঁছে দিবো। অনুদান যেন মন্ডপে যায়, অন্য কেথাও যেন না যায়। সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। সবাই মিলে নিরাপদে উৎসবটি পালন করতে চাই।
জেলা প্রশাসক বলেন, আপনাদের পূজা কমিটি ও নিরাপত্তা কমিটির তালিকা প্রশাসনকে দিবেন। বিজিবি, র্যাব যাতে মোতায়েন করা হয় সে বিষয়ে কথা বলবো। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসারদের নিয়ে সভা করে পরিকল্পনা করবো। স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করতে হবে। তাদের গলায় কার্ড ঝুলিয়ে রাখতে হবে। নারী স্বেচ্ছাসেবী রাখতে হবে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে আইনশৃঙ্খলা যাতে ব্যত্যয় না ঘটে। কোন নারী যাতে ইভটিজিংয়ের শিকার না হয়। প্রত্যেক উপজেলায় কন্ট্রোলরুম থাকবে। প্রত্যেক মন্ডপে থানা, ফায়ারসার্ভিসের ফোন নাম্বার ঝুলিয়ে রাখতে হবে। প্রতিমা বিসর্জনের সময় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল প্রস্তুত রাখতে হবে। আজকের সভায় পিডিবির লোকজন কেই। যা দুঃখজনক। গুরুত্বপূর্ণ সভায় তার থাকার কথা ছিলো। মন্ডপগুলোতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ রাখতে হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তার বলেন, দুর্গাপূজা হলো সার্বজনীন পূজা। প্রত্যেকটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান আমরা একত্রে করি। সবার ধর্মীয় উৎসবে সকলে সামিল হই। যদিও ধর্মীয় রিতিনীতিগুলো আলাদাভাবে পালন করি। দুর্গাপূজায় নিরাপত্তার চাদর নিশ্চিত করে উৎসব করা হবে। প্রতিটি মন্ডপে স্টাইকিং ফোর্স, মোবাইল টিম, কন্ট্রোল রুম থাকবে।
তিনি আরো বলেন, মন্ডপগুলোতে নিজস্ব জেনারেটর রাখবেন, ফায়ার সার্বিসের সাথে সমন্বয় রাখবেন। আনসারদের ২১টি টিম থাকবে। নারীরা যাতে ইভটিজিংয়ের শিকার না হয় সেটি নিশ্চিত করবেন। সার্বিকভাবে চাঁদপুর নিরাপত্তার চাদরে আচ্ছাদিত আছে। তারপরেও আমরা শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে বারতি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।আপনারা আমাদের সহযোগীতিা করবেন।
সুদীপ্ত রায় আরো বলেন, পূজামণ্ডপে নারী পুরুষের প্রতিমা দর্শনে আলাদা-আলাদা প্রবেশপথ করতে হবে। চেষ্ট করবো গুরুপূর্ণ মন্ডপগুলোতে পূজা চলাকালিন স্থায়ীভাবে পুলিশ মোতায়েন রাখতে। আমরা যেন ছোটখাট বিষয়গুলো সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে না নেই। স্যোশাল মিডিয়ার নজরদারী রয়েছে। গুজবের বিষয়ে আমরা কঠোর রয়েছি। যার যার অবস্থান থেকে সঠিকভাবে পালন করতে হবে। চাঁদপুর সম্প্রীতির শহর, এটি ধরে রাখতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, শান্তি শৃঙ্খলা আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না করলে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা হবে না। বাংলাদেশ একটি সম্প্রীতির দেশ। এর মধ্যে চাঁদপুর একটি অনন্য জেলা। এখানে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট। দুর্গাপূজা সার্বজনীন। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে এটা আমরা সবাই মিলে পালন করি। সবাই একে অন্যের ধর্ম এবং উৎসবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবো।
সভায় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদর সাধারণ সম্পাদক সকল পূজামণ্ডপ কমিটির পক্ষ থেকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সকল পূজামণ্ডপগুলো পরিদর্শনের অনুরোধ জানান।