ফরিদগঞ্জে চুরির অপবাদে নারীকে অমানবিক নির্যাতন, গ্রেফতার ২
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে স্বর্ণের চেইন চুরির অপবাদ দিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা তাসলিমা বেগম নামে এক নারীকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। পরে ওই নারীকে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান স্বজনরা। তাকে বেধড়ক পেটানোর ফলে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। হামলার শিকার নারীকে উদ্ধার করতে গিয়ে আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার রুস্তমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ২৬ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে ভিকটিম তাসলিমা বেগম বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মারধরকারী যুবক ইয়াছিনসহ দু’ জনকে গ্রেফতার করেছে।
মুঠোফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক নারী ও এক যুবক আরেক নারীর হাত জড়িয়ে ধরেছেন। এর মধ্যে আরেক যুবক তাকে কাঠ দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। ২ মিনিটেরও বেশি ওই ভিডিওতে এমন ঘটনার শেষের দিকে নির্যাতিতা নারীকে রক্ষায় কয়েকজন এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা চড়াও হতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধ আব্দুল মান্নানের সাত ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট তাসলিমা বেগম। আট বছর আগে বিয়ে হয় তার। কিন্তু স্বামী তাকে ছেড়ে যাওয়ার পর বাবার বাড়িতেই থাকেন তিনি। কয়েক মাস আগে প্রতিবেশী মোস্তফা মিয়ার ছেলে কাউসার আলমের স্ত্রীর গলার একটি স্বর্ণের চেইন হারিয়ে যায়। কিছুদিন আগে সেটি খুঁজে পেলেও এর জন্য দায়ী করা হয় একই বাড়ির স্বামী পরিত্যক্তা তাসলিমা বেগমকে।
ভিকটিম তাসলিমা বেগমের বড় বোন আমেনা বেগম জানান, এ জন্য তার ছোট বোনকে দায়ী করা হয়। আর এমন ঘটনার জের ধরেই কাউসার আলমের ছোট দুই ভাই ইয়াসিন ও মোফাচ্ছের এবং তাদের মা শামছুন্নাহার এমন পৈশাচিক নির্যাতন চালান তাসলিমা বেগমের ওপর।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী তাসলিমা বেগম জানান, বিনা কারণেই ঘর থেকে ডেকে নিয়ে বাড়ির উঠোনে তার ওপর হামলা চালানো হয়। তিনি চুরির কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।
সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, ওই নারীর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। তবে আপাতত শঙ্কামুক্ত। আরও কয়েক দিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে রোগীকে।
রোববার দুপুরে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ।
ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত বাহার উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় রোববার বিকেলে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামী করে থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে মারধরকারী ইয়াছিনসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।