বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর সম্পদ ক্রোকের সাইনবোর্ড উধাও
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম খুনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ির ক্রোককৃত সম্পত্তিতে সাটানো সাইনবোর্ড উধাও হয়ে গেছে। কে বা করা সেই সাইনবোর্ড সরিয়েছে তা বলতে পারছেন না কেউ। ২০১৪ সালে আদালতের ক্রোকাদেশ বাস্তবায়নে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ৬নং পূর্ব বড়কুল ইউনিয়নের সোনাইমুড়ী গ্রামে অবস্থতি ১ একর ১৫ শতাংশ সম্পত্তিতে সাইনবোর্ড ও লাল নিশানা সাটিয়ে ক্রোক করে উপজেলা প্রশাসন।
খুনি রাশেদ চৌধুরীর ভাতিজা আরেফিন ফয়সাল চৌধুরী বলেন, আমাদের এখানে রাশেদ চাচার কেউ থাকেনা। তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্কও নেই। প্রশাসন থেকে তার ১ একর ৪৬ শতাংশ জমি বাড়ীতে ও স্কুলের পুকুরের পাশের মাঠে ক্রোক করেছে বলে জেনেছি। তবে প্রশাসনের লাগানো সাইনবোর্ড কে খুলে নিয়েছে বলতে পারিনা।
স্থানীয় আহসান হাবীব বলেন, এই রাশেদ চৌধুরী শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই স্বপরিবারের হত্যা করেনি। ১৯৭৫ সালের ২ আগস্ট রাতে আমার বাবা আব্দুল লতিফ মাস্টারকেও স্কুল সংক্রান্ত বিষয়ে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিলো। আফসোস স্বাধীনতার এতো বছর পরেও ঐ খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করা গেলোনা।
একই কথা বলে মরহুম আব্দুল লতিফ মাস্টারের স্ত্রী ও ছোট মেয়ে নাছিমা আক্তার বলেন, প্রবাসী ভাইদের সহযোগিতা নিয়ে হলেও অবিলম্বে খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবী জানাচ্ছি।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ৬নং পূর্ব বড়কুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মোঃ শামসুদ্দিন মিয়াজী বলেন, অবিলম্বে খুনি রাশেদ চৌধুরীকে খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে আমাদের এই ইউনিয়নকে তথা সমগ্র দেশকে কলঙ্ক মুক্ত করার দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জের ইউএনও মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে কিছু দিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। যতটুকু জেনেছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ক্রোকাদেশ বাস্তবায়ন করেছে। এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে নতুন কোন নির্দেশনা থাকলে তা বাস্তবায়ন করবো।
তিনি বলেন, ৮ বছর আগে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছিলো। এ সময়ের মধ্যে দুস্কৃতকারীরা হয়তো সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলতে পারে। ওই জমিতে দ্রæতই সাইনবোর্ড টাঙানো হবে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে ক্রোকাদেশ বাস্তবায়ন করেছে। তাই ফাইলপত্র সব কিছু মন্ত্রণালয়ে আছে। আমাদের নিজস্ব কাজের ফাইল আমাদের কাছে থাকে। কাজেই এটি নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। তাছাড়া জমির খতিয়ান এসি ল্যান্ড অফিসে আছে। ওই সম্পত্তি নির্ধারিত। তাই এ সম্পত্তি এখন আর বিক্রি বা অন্য কিছু করা যাবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে জব্দকৃত ১ একর ১৫ শতাংশ জমিতে সাইনবোর্ড ও লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। তৎকালীন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনা আফরোজা জানিয়েছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রাশেদ চৌধুরীর বাবার ৯ একর ২৫ শতাংশ জমির মধ্যে তার প্রাপ্ত ১ একর ১৫ শতাংশ জমি জব্দ করা হয়েছে।
ইউএনও হোসনা আফরোজা আরও জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যায় দÐিত সেনা কর্মকর্তা এ এম রাশেদ চৌধুরীর সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ পাওয়ার পর প্রথমে তার পরিবারের সম্পদ সনাক্ত করে স্থানীয় প্রশাসন। রাশেদ চৌধুরীর বাবা শিহাব উদ্দিন চৌধুরীর সম্পত্তির ওয়ারিশ তার আট ছেলে ও এক মেয়ে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দÐিত পলাতক আসামিদের বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ওই বছরের ৩ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন দক্ষিণ শাখা থেকে একটি নির্দেশ আসে। রাশেদ চৌধুরীর সম্পত্তি জব্দের ওই নির্দেশপত্রে স্বাক্ষর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন দক্ষিণ শাখা বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-১ এর স্মারক নং ৭৮৩ ও ৭৮৪ অনুসারে, হাজীগঞ্জ উপজেলার সোনাইমুড়ী ২৪৬ মৌজার নাল, বাগান, ভিটি ও পুকুরে ১৩৬ নম্বর খতিয়ানে ৯.২২৫০ একর সম্পত্তি রয়েছে রাশেদ চৌধুরীর বাবা মৃত শিহাব উদ্দিন চৌধুরীর নামে। ওই হিস্যা অনুযায়ী রাশেদ চৌধুরীর নামে ১১৫ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে।