বড় বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে জনশুমারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে
ভোটার হওয়ার উপযুক্তরা যেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে
মডেল মসজিদের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে
বাজার মনিটরিং আরো জোরদার করতে হবে : জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ
অভিজিত রায় :
চাঁদপুরে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার ১৬ মে সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন, রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ।
জেলা প্রশাসক সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সমন্বয় বলতে যা বুঝায়, চাঁদপুর তারই উদাহরণ। চাঁদপুরের সকল দপ্তরের সাথে সকল দপ্তরের সুন্দর একটা সমন্বয় রয়েছে। যদি কখন কথাও কোন কাজে ব্যত্যয় ঘটছে আমি নিজেও বসে সমাধান করে দেই। কোন দপ্তরের সাথে কোন দপ্তরের দূরত্ব নেই। সবার মনোভাব সুন্দর এবং স্পষ্ট বিধায় আমাদের কাজ করতে সুবিধা হচ্ছে। একইসাথে জনপ্রতিনিধি যারা আছেন তারাও যথেষ্ট আন্তরিক। তার কারণে এখানে উন্নয়ন কাজ করা অনেকটাই সহজ। অনেক জায়গায় চাকরিরত অবস্থায় লক্ষ্য করেছি যে, এক দপ্তর আরেক দপ্তরের সাথে সমন্বয় বা সম্পর্ক ভালো থাকে না। কিন্তু এখানে সেটা নেই।
সমন্বয় সভার আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো জনশুমারি। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, ভোটার তালিকা আমাদের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামীতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সে লক্ষ্যে এ ভোটার তালিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কাজেই এখানে যেমন নির্বাচন অফিসকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে একই সাথে আমাদের জনপ্রতিনিধিদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। যারা ভোটার আছেন এবং ভোটার হওয়ার উপযুক্ত তারা যেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে সেজন্যে আমি অনুরোধ জানাবো। আর এজন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব পালন করতে হবে জেলা ও উপজেলা পরিসংখ্যান বিভাগের কর্মকর্তাসহ সকল মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের।
তিনি বলেন, জনশুমারী যা আমরা প্রতি ১০ বছর অন্তর অন্তর করে থাকি, তা এখন করা হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, দেশে এই প্রথম ডিজিটাল শুমারী হচ্ছে। বড় বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে এ জনশুমারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আর এ শুমারির স্বচ্ছতার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করা হবে। চাঁদপুরের প্রতিটি উপজেলার হিসাব যেন সঠিকভাবে আসে। যারা জনশুমারী করতে যাবেন তারা যেন কোন হয়রানির শিকার না হন এবং তারা যেন প্রত্যেক সঠিক তথ্য নিয়ে আসতে পারেন, তার জন্যে সংশ্লিষ্ট পুলিশ বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ জানাই।
জেলা প্রশাসক জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যারা সরকারি দায়িত্বে আছি, আমাদের কাজটা হচ্ছে প্লাটফর্ম তৈরি করে দেয়া। এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে দেয়া যেখানে সকলের মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকে। মনে রাখতে হবে, দেশ ও জনগনের স্বার্থে আমরা যেন সিন্ডিকেট না করি। তিনি বলেন, আমাদের যে কাজ সেটা নিরপেক্ষভাবে করে যাবো। আমি একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছি। এখন যে যার পছন্দের প্রতিনিধিকে নির্বাচনের মাধ্যমে বাছাই করে নেবে। এটাই আমাদের করা উচিত। আমি যেখানেই কাজ করেছি চেষ্টা করেছি নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে এবং চাঁদপুর জেলাতেও সে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং এরজন্যে সকলের সহযোগিতা পাচ্ছি। আশাকরি সবাইকে নিয়ে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলো সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
বাজার মনিটরিং প্রসঙ্গে বলেন, এটা এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেলের ব্যাপার নিয়ে যে তেলেসমাতি চলছিলো তাও আমরা ধরে ফেলেছি। এখন তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে বাজার মনিটরিং আরো জোরদার করতে হবে। কেউ যেন সিন্ডিকেট না করতে পারে।
জেলা প্রশাসক বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব কমাতে সারাদেশো প্রায় ১২ কোটি মানুষকে ১ম ও ২য় ডোজ টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে এটা আমাদের একটি বড় সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। যারা এখনো বুস্টার ডোজ দেয়া হয়নি, তাদেরকেও বুস্টার ডোজ তাড়াতাড়ি নেয়ার জন্যেও আহবান জানান। সভায়, জেলা সদরের মডেল মসজিদ নিন্মমানের পাথরে তৈরি হচ্ছে – এমন অভিযোগ আনেন সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগে সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ। তার পথ ধরেই বর্তমান চাঁদপুর পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান চৌধুরী জুয়েল। তারা বলেন, এ ব্যাপারে চরম উদাসীনতা দায়ী। নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি সকালে ফোন করলে তিনি বিকালে ধরে। আবার আমি কে এমনটাও এমনটাওন ! এটি দুংখজনক! মেয়র জিল্লুর বলেন, পাথর অনেক নিম্মমানের। এসব দোখভাল করতে হবে। একই কথা বল্লেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নিম্নমানের কোন প্রকারের সামগ্রী দিয়ে এ মসজিদ নির্মাণ হতে পারে না। এ বিষয়ে ঠিকাদরকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে।
জেলা প্রশাসক মডেল মসজিদের নির্মান সামগ্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, মডেল মসিজদের কাজ মডেলের মতই হতে হবে। মডেল মসজিদের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। নির্মাণ সামগ্রীর ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার। ভবিষ্যৎ এ যেন এধরণের অভিযোগ না আসে সে ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এটা একটা বড় উদ্যোগ। প্রত্যেকটি উপজেলার জন্যে মডেল মসজিদ একটি বড় ঐতিহ্য ও স্থাপনা। মডেল মসজিদ সুন্দরভাবে যেন হয় সেটা আসাদের সকলের দায়িত্ব। জেলা পর্যায়ে মডেল মসজিদের জায়গা যেহেতু এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। যদি কোন দানশীল ব্যক্তি থাকেন যে মসজিদের জন্যে দান করতে চান তাহলে আমাদের বলতে পারেন। মসজিদের জন্যে জায়গা দান করা অনেক বড় মহৎ কাজ। এছাড়াও যদি অন্য কোন জায়গা বা প্রাতিষ্ঠানিক জায়গা থাকে তাও আমাদের জানাতে পারবেন।
কৃষি বিষয়ক প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, কৃষকের একটি ধানও যেন নষ্ট না হয়। স্বেচ্ছাসেবক হোক বা যেভাবেই হোক তলিয়ে যাওয়ার আগে কৃষকদের সমস্ত ধান যেন কেটে ঘরে তুলে দেয়া হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেন এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. সাহাদাৎ হোসেন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহবুবুর রহমান, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন প্রমুখ।
সভায় সরকারি সকল দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।