মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের খালগুলো খনন না হওয়ায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে

কামরুজ্জামান হারুন :
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প। সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে ৫শ৬১ কি:মি: দৈর্ঘ্যের ছোট বড় খাল গুলো ৩৩ বছরেও খনন করা হয়নি। ফলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন কৃষকেরা। ১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে সেচ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।
সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে প্রতিবছর জলাবদ্ধতায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ফসলী জমি পানির নিচে থাকায় মতলব উত্তরের কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ফসল উৎপাদন কমেছে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন ।
নদী ও খাল দখল বন্ধ করি,অধিক ফসল ঘরে তুলি” প্রতিপাদ্যকে উদ্দেশ্য করে সেচ প্রল্পটি অধিক খাদ্য- শস্য উৎপাদনের উদ্দেশ্য নির্মিত হলেও সেচ কার্যক্রমে ভাটা পড়ায় আবাদি জমি ধ্বংসের পথে। এছাড়া ও সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র বাড়িঘর নির্মাণ করায় প্রতিবছর ফসলী জমি কমে গেছে।
মতলব উত্তরে উপজেলার ৬৪ কি:মি: বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ ১৭ হাজার ৫শ ৮৪ হেক্টর জমিকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি ১৩ হাজার ৬শ ২ হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নির্মাণ করা হলেও সেই জলাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপজেলাবাসি।
সেচ প্রকল্পের উদমদী, কালিপুর, এখলাসপুর, ডুবগী সহ মোট ৪টি পাম্প হাউজে মোট ৪শ৪২ দশমিক ১৯ কিউবিক মিটার পানি প্রতি সেকেন্ডে বাহির কিংবা প্রবেশ করানোর সক্ষমতা খাতা কলমে থাকলেও কার্যত তা বাস্তবতার ছোঁয়া পায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বোরো মৌসুমে ৭ হাজার হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ৫ হাজার ৬শ ১৯ দশমিক ৭৪ হেক্টর জমিতে গ্র্যাভেটি সিস্টেমের মাধ্যমে পানি সেচ প্রদান করা হয় । অবশিষ্ট ৮শ ৮৬ দশমিক ৮৬ হেক্টর জমিতে স্যালো টিউব এর মাধ্যমে কৃষক নিজেরা উত্তোলন করে । ৪শ ৯৩ দশমিক ৪০ হেক্টর জমিতে নিষ্কাশন খাল থেকে লো-লিফট পাম্পের মাধ্যমে সেচ প্রদান করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, কালিপুর ও উদমদি এই দু’টি পাম্প হাউজ এর ৪ টি করে ৮ টি মেশিন একত্রে মাত্র ৩০ কিউসেক মিটার পানি সেচ করতে সক্ষম। তবে খাতা কলমের সক্ষমতা কোথায় হারিয়েছে সে বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তিনি বলেন, অবৈধ ভরাট খাল খনন ও দখল মুক্ত করতে তারা শিগগিরই পরিকল্পনা করছেন।
তবে নিষ্কাশন খাল,সেচ খাল,প্রধান খাল, টারশিয়ারী খাল ও সেকেন্ডারি খাল সমূহের ৫শ ৬১ কিলোমিটারের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ভাবে ভরাট কারার ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি সরিয়ে নিতে যেমন বাধার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ,তেমনি বোরো মৌসুমে কৃষকের জমিতে পানি পৌছে দিতে ও সক্ষমতা হারিয়েছে কতৃপক্ষ।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরকার মোঃ আলাউদ্দিন জানান,৩০টি পানি ব্যবস্থাপনা দল, ৬ টি এ্যাসোসিয়েশন ও একটি ফেডারেশনের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লজিষ্টিক সাপোর্ট দিচ্ছেন ।অতি দ্রুত খাল গুলো খনন ও অবৈধ দখল মুক্ত করে অধিক ফসলের নিশ্চয়তা দিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কার্যকর ভুমিকা পালন করতে অনুরোধ জানান তিনি।
অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাবে খালগুলো বেদখল হচ্ছে। এছাড়াও প্রভাবশালী মহল অবৈধ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন বালু ব্যবসা । ফলে খালের গতিপথে বাধাসৃষ্টি সহ নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি।
সেচ প্রকল্পের সুবিধা ভোগীরা জানান, প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ ১২৫ দশমিক ৫ কি.মি. দৈর্ঘ্যের নিষ্কাশন খাল, ২১৮ কি.মি. দৈর্ঘ্যের সেচ খাল , ৩৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রধান খাল ,৬৪ কি.মি. দৈর্ঘ্যের সেকেন্ডারি খাল ও ১২০ কি.মি. দৈর্ঘের টারশিয়ারী খাল গত ৩৩ বছরেও খনন করা হয়নি ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান বলেন,খাল খননের বিষয় গুলো উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সেঁচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি অফিসার মো: সালাউদ্দিন জানান, জলাবদ্ধতার ফলে আউশ ধানের উৎপাদন মাত্র ২ হাজার হেক্টর জমিতে নেমে এসেছে। এছাড়াও বোরো উৎপাদনে জমির পরিমাণ নেমে এসেছে ৯ হাজার হেক্টরে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply