যারা বড় বড় দুর্নীতি করে দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কাজ করুন : জেলা প্রশাসক
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও সনাকের আলোচনা সভা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
: নিজস্ব প্রতিবেদক :
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২১ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক) ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), চাঁদপুর-এর আয়োজনে গতকাল ৯ ডিসেম্বর ২০২১ র্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় সার্কিট হাউসে জাতীয় ও দুদকের পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন অবমুক্তকরণের মধ্য দিয়ে দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। উদ্বোধন শেষে সার্কিট হাউস থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত র্যালি ও র্যালি পরবর্তী মানববন্ধন এবং মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক)-এর সভাপতি ড. কাজী হাশেম-এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। দুর্নীতি সমাজের সকল স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাই সকলে মিলেই এটিকে প্রতিহত করতে হবে এমন উপজীব্য থেকে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউএনওডিসি এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য করেছে, “ণড়ঁৎ ৎরমযঃ, ুড়ঁৎ ৎড়ষব: ঝধু হড় ঃড় ঈড়ৎৎঁঢ়ঃরড়হ” বা ‘আপনার অধিকার, আপনার দায়িত্ব: দুর্নীতিকে না বলুন’। এর সঙ্গে মিল রেখে টিআইবি এবছর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক সাথে; সবার অধিকার, সবার দায়িত্ব’।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
তিনি বলেন, সকল প্রকার দুর্নীতির মূল হলো মিথ্যা। আর এই মিথ্যাকে জীবন থেকে অপসারণ করতে পারলে কোন দুর্নীতি থাকবে না। আর সেটা শুরু করতে হবে নিজের পরিবার থেকে। আমরা যদি নিজেরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই এবং আমি নিজে যদি নিজেকে দুর্নীতি থেকে মুক্ত না রাখতে পারি তাহলে কখনো দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়। আর এই কাজটি করতে হলে আমাদের পরিবার থেকে মূল্যবোধ তৈরি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিজের দায়িত্ব আগে সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আমি নিজে দুর্নীতিমুক্ত না হয়ে অন্যকে দুর্নীতি না করার জন্য বলতে পারি না। আমরা যদি নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলে দুর্নীতি থাকবে না।
তিনি দুর্নীতি দমন চাঁদপুরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, শুধু কেরানী বা পিয়ন ধরা আপনাদের দায়িত্ব না। যারা বড় বড় দুর্নীতি করে দেশকে ধ্বংসের পথে দেশ নিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কাজ করেন। আইন প্রয়োগ করে সবসময় সবকিছু সম্ভব না। মানুষদের সচেতন করতে হবে। সবাই যদি আমরা চাই তাহলে সৎভাবে বাঁচা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা নির্বিকার, আমরা কোন প্রতিরোধ করছি না। যারা দুর্নীতি করছে তাদেরকে রুখে দিতে না পারলে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়। আমি চাঁদপুরে আসার পর থেকে নিজে দুর্নীতিমুক্ত থেকে এবং দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় না দিয়ে সকল কাজ সম্পন্ন করে চলছি। যার প্রমান ইতিমধ্যে চাঁদপুরবাসী পেয়েছে বলে বিশ^াস করি। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নিয়োগ প্রক্রিয়া খুবই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করেছি। যা ইতিমধ্যে চাঁদপুরবাসী অবগত রয়েছে। আসলে সকলের সমর্থন ব্যতিত একা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, আপনাদেরকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং আমাদেরকে একতাবদ্ধ হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতিবাজদের ঘৃণা করতে হবে। আসল কথা হলো দুর্নীতি একটি মানসিক সমস্যা। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকলকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) বলেন, জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল এই বাংলা হবে সোনার বাংলা। যে বাংলাদেশে কোন দুর্নীতি থাকবে না। জাতির পিতার সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ প্রতেকটা ব্যক্তিকে ধরে আইনের কাটগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। আমাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জায়গাগুলো থাকতে হবে। আজকের এই তরুণ প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে হবে। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতার পাশাপাশি প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহাবান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এইচএম আখতারুজ্জামান বলেন, দুর্নীত দমন কমিশন দুর্নীতি দমনের পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশ কিছু সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা চলমান আছে। তিনি বলেন, সুশীল সমাজ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও তরুণ প্রজন্মদের নিয়ে জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে। মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নেতৃত্বে সবাই একত্রিত হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, সোনার বাংলা বিনির্মানে দীপ্তভাবে আমাদেরকে শপথ নিতে হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম বলেন, দুর্নীতির করাল গ্রাস আমাদেরকে প্রতিটি কাজে বাধাগ্রস্থ করছে। তাই আমাদেরকে দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে দুর্নীতি আমাদেরকে গ্রাস করতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অবস্থান তা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদেরকে প্রতিটি পদক্ষেপে দুর্নীতিকে না বলতে হবে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সোচ্চার হতে হবে। তাহলেই আমরা সত্যিকারের সোনার বাংলা বিনির্মান করতে পারবো। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য সনাকের পক্ষ থেকে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ড. কাজী হাশেম বলেন, সবাইকে সম্মিলিতভাবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই সোনার বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের নৈতিকতার মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক একজন সাদা মনের মানুষ। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অবস্থান তা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, অনেকেই দুর্নীতিবাজদের ভয়ে কথা বলতে চায় না। তাই আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
দিবসের উপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন, টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ মাসুদ রানা। টিআইবি’র রাজন চন্দ্র দে’র সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এটিএম মোস্তফা চৌধুরী। এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সনাকের সাবেক সভাপতি ও বাবুরহাট হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোশারেফ হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীবৃন্দ, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যবৃন্দ, সনাক, স্বজন ও ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ ও সনাক-চাঁদপুরের অ্যাকটিভ সিটিজের গ্রুপের সদস্যবৃন্দ।