সবসময় সম্প্রীতি এবং ধর্মীয়বোধকে জাগ্রত রাখতে হবে : জেলা প্রশাসক

ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনামূলক কর্মশালা
: আশিক বিন রহিম :
ধর্মমন্ত্রনালয়ের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় চাঁদপুরে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের প্রকল্প-পরিচালক (উপ-সচিব) আবদুল্লা আল শাহীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার), সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ।
জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা যদি ব্রিটিশ আমলের শাসন ব্যবস্থা লক্ষ্য করি দেখি, তারা খুবই চতুর ছিলো। তারা আমাদের দেশে যখন কর্ম স্থাপন করে তখন তারা আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ধর্মীয় অনুভূতি সবকিছু সম্পর্কে অবগত হয়েছিলো। তারা সবকিছু অবগত হয়ে চিন্তা করেছিলো যে এই দেশে যদি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে হয় তাহলে আমাদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে হবে। তখন তারা চিন্তা করলো একমাত্র ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে আমাদের মধ্যে ভাঙন ধরানো সম্ভব এবং তারা এই পথ অবলম্বন করে এদেশে শাসন ব্যবস্থা চালিয়েছিলো। তাই এর থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি, যখন একটা সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করা যায়, সম্প্রীতিটা নষ্ট করা যায়, সেখানে কোন ধর্মে বা কোন ব্যক্তির লাভ হয় না সেখানে সবসময় লাভ হয় তৃতীয় পক্ষের। আর কাজটা হবে আমরা কখনোই তৃতীয় পক্ষকে লাভবান হতে দিবো না। আমাদের মধ্যে সবসময় সম্প্রীতি, ধর্মীয়বোধটাকে জাগ্রত রাখবো।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্রতিটা ধর্মেই শান্তি ও সম্প্রীতির কথা বলা আছে। কোন ধর্মেই একজন আরেকজনকে আঘাত করার কথা বা বিদ্বেষ সৃষ্টির করার কথা নাই। আমরা ইসলাম ধর্মের কথা বলি, ইসলাম মানেই শান্তি, ইসলাম মানেই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। আমরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত। তিনি কখনো কোন ধর্মে প্রতি বিদ্বেষমূলক কথা বলেন নাই। তাঁর কথায় কোন ব্যক্তি আঘাত পাক তা বলেন নাই। সবসময় তিনি শান্তি ও সহনশীলতার কথা বলেছেন। মক্কা বিজয়ের সময় তাঁর উপর অনেক অত্যাচার হয়েছিলো। তিনি পারতেন মক্কাতে অন্য ধর্মাবলম্বী যারা ছিলো তাদেরকে বিনাশ করে দিতে পারতেন। সেই শক্তি, সামর্থ্য তাঁর ছিলো কিন্তু তিনি তা করেন নি। তিনি সহনশীলতার কথা বলেছেন। তেমনই অন্যান্য ধর্মতেও কাউকে আঘাত করার কথা বলা নাই। ধর্মীয় অনুভূতি যাদের মধ্যে প্রখর তারা অন্য ধর্মের ব্যক্তিকে বা অনুভূতিকে আঘাত দিয়ে কথা বলতে বা কাজ করতে পারে না।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী আছে তারা সবসময় ধর্মটাকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে। তারা সবসময়ই ধর্মকে পুঁজি করে নিজের স্বার্থকে হাসিল করে। কিন্তু আমরা সচেতন হয়েছি এবং আপনাদেরও সচেতন হওয়ার সময় এসেছে। যে জ্ঞান আপনারা লাভ করেছেন সে জ্ঞান যেন সমাজের বিবেদ সৃষ্টি কাজে না লাগে। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলার কাজে লাগে। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে আছি। বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক নেতা ছিলেন। তাঁর একটা বক্তব্য আমাকে খুবই আন্দোলিত করে। তিনি বলেছিলেন “এদেশ হিন্দুর না, এদেশ মুসলিমের না, এদেশ তার যে এদেশটিকে ভালোবাসে। এদেশের মানুষের দুঃখ দেখলে যার মন কাঁদে, এদেশের মানুষের আনন্দ দেখলে যার মন আনন্দিত হয়, এদেশ তার “। আসলেই একথাটি সত্য। বঙ্গবন্ধুর এ বাংলাদেশে যখনই কোন ধর্মীয় উৎসব হয় তখন আমরা সবাই মিলে তা পালন করি। অন্য দেশে যাই ঘটুক না কেন আমরা তা আমাদের দেশে চাই না। আমরা যেভাবে শান্তিতে, সম্প্রীতিতে ছিলাম আমরা তাই-ই থাকবো। আর ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে কখনোই ভালো থাকা যায় না। আমরা সবসময়ই শান্তি, শৃঙ্খলা ও ন্যায় বিচারের মধ্যেই থাকবো।
তিনি আরো বলেন, সামনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদে সবচেয়ে বড় উৎসব হবে শারদীয়া দুর্গাপূজা। এটা শুধু তাদেরই উৎসব নয়, আমরা যারা বাঙালির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি তাদের একটি উৎসব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তারা তাদের রীতি অনুযায়ী ধর্ম পালন করবেন কিন্তু তাদের ধর্ম তাদের রীতি অনুযায়ী যেন পালন করতে পারে সে পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।
এ সময় তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। যখন মসজিদ আজান হবে, নামাজের ওয়াক্ত হবে তখন যেন পূজা মন্ডপের মাইকগুলো বন্ধ থাকে। এটা আপনারা খেয়াল রাখবেন। কারণ আমরা সহাবস্থানে বিশ্বাস করি। সবাই যেন আমরা সুন্দরভাবে থাকতে পারি সেটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এদেশে যতগুলো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো তার মূল কারণ ছিলো গুজব।গুজবে বিশ্বাস করা যাবে না। এধরণের কোন কিছু কানে আসলে আগে যাচাই-বাছাই করবেন এবং প্রশাসকে জানাবেন। প্রশাসনের তরফ থেকে সঠিক তথ্য দেয়া হবে। না জেনে শুনে নিজের কোনকিছু করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে যে গুজব ছড়ালো তার লাভ হয়ে গেলো।
তিনি ইমামদের উদ্দেশ্য বলেন মসজিদের মাইক ব্যবহার করা আজানের জন্যে এবং ইসলামিক কাজে। কোন ধরণের ঘোষনার কাজে মসজিদের মাইক ব্যবহার করা যাবে না। মসজিদের মাইক থেকে কোন ঘোষনা আসলে কার দায়িত্ব সেই মসজিদে ইমাম এবং মোয়াজ্জেমকে নিতে হবে। বিশেষ করে কোন প্রকার গুজবের কাজে যেন মসজিদের মাইক ব্যবহার করা না হয়। সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ফিল্ড অফিসার মাওলানা বিল্লাল হোসেনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দিন খন্দকার, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস ছালাম, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল ঘোষ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পিপি রনজিত রায় চৌধুরী প্রমূখ।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply