সব সঙ্কীর্ণতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়তে পহেলা বৈশাখ অনুপ্রাণিত করে : প্রধানমন্ত্রী

চাঁদপুর প্রতিদিন ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য পরিবহনেও ভাড়া ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে আমাদের দেশেও কিছু কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কিন্তু চুপচাপ বসে নেই। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি নিয়ে আসার।’
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, চলতি পবিত্র রমজান মাসে আমরা টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে প্রায় ১ কোটি পরিবারকে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসাশ্রয়ী দামে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজধানী ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫টি ফ্রিজার ভ্যানে করে সাশ্রয়ী দামে মাংস, ডিম এবং দুধ বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরফলে, অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ইতোমধ্যে কমে স্বাভাকিক পর্যায়ে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিগত ২ বছর জনসমাগম করে উন্মুক্ত স্থানে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা করা যায়নি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ অনেকটাই কমেছে। তাই এবার সীমিত আকারে হলেও বহিরাঙ্গণে অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে। তবে করোনাভাইরাস একেবারে নির্মূল হয়নি। নতুনরূপে করোনাভাইরাস আবার যেকোনো সময় দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা অবশ্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছি। ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ টিকা পাওয়ার যোগ্য মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের পর এখন বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এই মহামারি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মহামারিজনিত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য আমার সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এতে প্রায় ৬ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার।
কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে যেন দেশে দুর্ভিক্ষস্থা বিরাজ করছে। আমি দৃঢ়ভাবে আপনাদের জানাতে চাই যে, দেশে চাল-সহ কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। সাশ্রয়ী দামে পণ্য কেনার জন্য টিসিবি’র দোকানে মানুষ ভিড় করবে- এটাই স্বাভাবিক। এটাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার কী কারণ থাকতে পারে? যোগ করেন তিনি।
সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হাজার বছরের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং কৃষ্টির বাহক বাঙালি জনগোষ্ঠী। বিভিন্ন ধর্মে-বর্ণে বিভক্ত হলেও ঐতিহ্য-কৃষ্টির জায়গায় সব বাঙালি এক এবং অভিন্ন। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে গেলেও পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন এখনও স্ব-মহিমায় টিকে আছে। সারা বছরের ক্লেদ-গ্লানি, হতাশা ভুলে এদিন সব বাঙালি নতুন আনন্দ-উদ্দীপনায় মেতে উঠেন।
তিনি আরও বলেন, সব সঙ্কীর্ণতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পয়লা বৈশাখ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। মনের ভেতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার শক্তি জোগায়, স্বপ্ন দেখায়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে এই বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্ষবরণ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। আবহমানকাল ধরে বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, আনাচে-কানাচে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। গ্রামীণ মেলা, হালখাতা, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ছিল বর্ষবরণের মূল অনুসঙ্গ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply