সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে : শিক্ষামন্ত্রী

ঘাতকরা নির্বাচনকে সামনে রেখেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়
আশিক বিন রহীম :
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, ৭১ এবং ৭৫ এর ঘাতকেরা দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়। ওই দুস্কৃতকারী চক্র সব সময় একটা সময় বেছে নেয়। এই সময়টি তারা কেন বেছে নিয়েছে। কারণ, এখন ২০২১ সাল। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ আমাদের জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচিত সরকার যখন প্রথম দু-আড়াই বছর পার করে দেয় তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়। সরকারের সম্মানকে ক্ষুন্ন করতে চায়।
১৯ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলা অডিটরিয়ামে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, অনেক দামে কেনা আমাদের এই স্বাধীনতা। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ চেয়েছি এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বহু ত্যাগের বিনিয়মে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে একটি সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সংবিধানে সকল ধর্মের মানুষকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতানাকে ভুলন্ঠিত করা হলো। এর মাধ্যমে আবার সেই পাকিস্তানি আদলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান। যারা স্বাধীনতা বিরোধী ছিল, যুদ্ধাপরাধী ছিল তারা আবার সমাজে, রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আবার তারা প্রতিষ্ঠিত হলো। ৭১, ৭৫, ২০০৪ সালের এবং ২০১৪ সালের ঘাতকরা তারা কি এক এবং অভিন্ন নয়? এই নাশকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, স্বাধীনতাবিরোধীরা এক ও অভিন্ন। সকল অপরাধীই তার একটা নমুনা রেখে যায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই একই রকম চিহ্ন আমরা দেখি।
তিনি আরো বলেন, আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। এ মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতাকে আঘাত করা হয়েছে। আমরা যারা বাঙালি, যারা আওয়ামী লীগ করি, যারা নিজেকে মানুষ বলে দাবি করি, আমাদের সবাইকে একসঙ্গে সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পুলিশ তো একা কিছু করতে পারবে না, নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকে। সব ধর্মের মানুষই সম্প্রীতির কথা বলবেন, মানুষের কথা বলবেন। আমাদের পরিচয়, আমরা মানুষ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিক্ষা, স্বাস্থসহ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে তখন তারা একাত্তর, পচাত্তরের ঘাতকরা সুখে নেই। তারা আমাদের এই মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করতে চায়। তারা আমাদের এই জয়যাত্র ও অগ্রযাত্রাকে নস্যাৎ করে দিতে চায়। সেজন্য এই চক্র এখনো অত্যন্ত তৎপর।
তিনি বলেন, দুর্গোৎসব শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নয়, এ উৎসব সার্বজনীন। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমরা সবাই সেই উৎসবের ভাগীদার। এটি বাঙালির আবহমান কাল ধরে চলে আসছে। তিনি বলেন, দুস্কৃতকারীদের প্রতিহত করতে আমাদের অনেক কিছুই করার আছে।
তিনি বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির কোন ভিত্তি নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন মৃত। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তারা এখন জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। কাজেই আমাদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি বলেন, ওই দলটি দাবি করছে দেশে গণতন্ত্র নেই। দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে তাহলে তারা গণমাধ্যমে কথা বলার এতো সময় পায় কি করে? সরকারি দলের নেতৃবৃন্দকে টেলিভশনে যতটা দেখা যায় তাদেরকেও তেমন বা তার চেয়ে বেশি দেখা যায়। যদি গণতন্ত্রই না থাকে তাহলে তারা এতো কথা বলার সুযোগ পায় কিভাবে। তারা মিটিং, সভা-সমাবেশসহ সবই করছে।
মন্ত্রী বলেন, বাইতুল মোকাররম মসজিদ আক্রান্ত হয়েছিল, পবিত্র কোরআনকে পোড়ানো হয়েছিল, পতাকায় আগুন দেয়া হয়েছিল- এগুলো ভুলে যাবেন না। এরা সবাই এক ও অবিচ্ছিন্ন। এদের শত্রু মানবতা, এদের শত্রু আমাদের স্বাধীনতা। তাই এদেরকে আমাদের রুখে দাড়াতেই হবে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান গনি পাটওয়ারী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর সদর উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাস নাজিম দেওয়ান, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান এক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ রায় চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক অজয় কুমার ভৌমিক, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, তরপুরচন্ডী কাজি বাড়ি জামে মসজিদের খতিম মাওলানা মেহেদী হাসান রুহানী, চান্দ্রাবাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আল আমিন, খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতা মনিদ্র বর্মন
সম্প্রীতি সমাবেশে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply