সড়কে শৃঙ্খলা না আসলে আমরা কেউ নিরাপদ নই : অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক
সড়কের মাত্রাতিরিক্ত সিএনজি-অটোরিকশা চলাচল করছে : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি’ এই প্রতিপদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২২ অক্টোবর শুক্রবার বেলা ১১টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মোলন কক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ইমতিয়াজ (সার্বিক) হোসেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারি। সভার শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআরটিএ চাঁদপুর এর উপ-সহকারি মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল্লা আল মামুন।
সাংবাদিক এমআর ইসলাম বাবুর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি এমএ লতিফ, জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোয়েবুর রহমান, ট্রাক মালিক সমিতির নেতা আবুল কালাম মন্টু প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের দেশে অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেক ইতিবাচক অর্জন-পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশে অনেক উন্নতি-সমৃদ্ধি হয়েছে। সকল ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও আমাদের মনমানসিকতায় কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। আমাদের মধ্যে দেশ প্রেম, দায়িত্ব পালনে, সচেতনতায় অনেক ঘাটতি আছে। তবে একদিনেই সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব না। কিন্তু শুরুটা করতে হবে। মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র সচেতনতার আর আইন না মানার কারনে আমাদের দেশে সড়কগুলোতে প্রচুর প্রাণহানি ঘটছে। অনেক পুরোনো আইন দিয়ে ট্রাফিক কার্যক্রম চলছে। এর পাশাপাশি জনবলের সঙ্কট রয়েছে। রাস্তাগুলোর প্রশস্ততা কম। কোথাও পার্কিং স্ট্র্যান্ড নেই। তারপরেও আমাদের যে সীমিত সম্পদ, তার সঠিক ব্যবহার করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা যদি আইন কানুন মেনে চলি, সচেতন হই- তবে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব। আমাদের মধ্যে যে অসচেতনতার প্রতিযোগিতা চলছে, সেটির পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা না আসলে আমরা কেউ নিরাপদ নই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, চাঁদপুরের সড়কগুলোর প্রসস্ততা খুবই কম। শহরের কোথায় সিএনজি অটোরিকশার নির্ধারিত স্ট্যান্ড নেই। ফলে চালকরা যত্রতত্র সিএনজি-অটোরিকশা থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করান। সড়কের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে মাত্রাতীত সিএনজি-অটোরিকশা চলাচল করছে। আমরা আইন প্রয়োগ করতে চাই না। চালকদের সাজা দেয়াই আমাদের কাজ নয়। আমরা চাই সবাই আইন মেনে চলুক।
তিনি আরো বলেন, আইন প্রয়োগকরাটাই সর্বশেষ সমাধান নয়, সচেতন না হলে সমাধান আসবে না।
সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। আইন মেনে চলতে হবে। সড়ক নিরাপদ করতে হলে প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হব। কারণ দুর্ঘটনা কোন দিন থেকে আসবে, সেটি আমরা কেউ জানি না। আগামী ৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত হবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে নিরাপদ সড়ক আইন মেনে চলতে হবে।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, সড়ককে নিরাপদ রাখতে আইন আছে কিন্তু, যথাযথ প্রয়োগ নেই। ফলে আইন না মানার প্রবনতা বাড়ছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উঠতি বয়সের কিশোরদের মোটরবাইক চালানোর বিধি-নিষেধ করতে হবে। চাঁদপুর শহরে কোন সিএনজি স্ট্র্যান্ড নেই। ধারণ ক্ষমতার চার গুণ যান চলাচল করে। ফুতফাত নেই। যা একটু আছে, তাও অবৈধ ব্যাবসায়ীরা দখল করে আছে।
বক্তারা বলেন, বিআরটিএ নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করছে। কিন্তু এখানে যাদের নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই চালকদের উপস্থিতি নেই। চার দেয়ালের এই প্রচারনা চালকদের কাছে যায় না। তাই আমাদের দাবী হলো দিবস যাতে অনুষ্ঠানেই সিমাবদ্ধ না থাকে। কর্মসূচি, কর্মাকাণ্ড যাতে বাস্তবায়ন হয়। তবেই আজকের এই আয়োজন সফল হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিআরটিএ চাঁদপুর এর উপ-সহকারি পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, চাঁদপুর সরকারি কলেজের উপাদক্ষ্য প্রফেসর মো. আবুল খায়ের সরকার।