হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানী, নার্সদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
হাইমচর প্রতিনিধি :
চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে সিনিয়র নার্সের মেয়ে এবং সহকারী আরেক নার্সকে যৌন হয়ারানী করা এবং নার্সদের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যেই ভিকটিমরা চাঁদপুর সিভিল সার্জনের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৭ আগস্ট রোববার সিভিল সার্জন ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ডা. বেলায়েতের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ পেয়েছি এবং তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুতই অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সিনিয়র নার্স গীতা রাণীর চাকরির সুবাদে তার মেয়ে কলেজ শিক্ষার্থী (১৭) হাসপাতাল কমপ্লেক্সে বসবাস করে। সম্প্রতি হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন তাকে দেখে তার সাথে পরিচয় হয় এবং তার ফোন নাম্বার চায়। নাম্বার দিতে নারাজ হলে এক পর্যায়ে তিনি জোরপূর্বক মেয়েটির মোবাইল নাম্বার নেন। মোবাইল নাম্বার নেয়ার পর থেকে তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে ফোন দিয়ে অশ্লীল কুরুচিপূর্ন কথা বার্তা বলেন। তিনি অসংখ্যবার ভিডিও কল দিয়ে নগ্ন অবস্থায় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন এবং মেয়েটিকে নগ্ন হতে বলেন। মেয়েটি তার কথামত অশ্লীল কাজ করতে না চাইলে তিনি তার বাসায় যেতে বলেন। ওই কর্মকর্তার স্ত্রী বাসায় না থাকলেই তিনি তাকে বাসায় যেতে জোর করেন। তার কোন কথায় রাজি না হওয়ায় বেলায়েত হোসেন পূজাকে হুমকি দিয়ে বলেন, সে যদি এসকল কথা কারো কাছে বলে এবং তার ডাকে সাড়া না দেয়, তার বাসায় না যায়- তাহলে তার মা সিনিয়র নার্সকে অন্যত্র বদলী করে দেওয়ার হুমকি দেন।
ভুক্তভোগী ওই কলেজ ছাত্রী বলেন, আমি ডা. বেলায়েত স্যারকে পিতার মতো শ্রদ্ধা করি। অথচ তিনি আমার সাথে যে ধরনের অশ্লীলতা করতে চেয়েছিলেন তা বলার মতো না।
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেনের যৌন হয়রানীতে মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি ডা. বেলায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য অনুরোধ জানান। এছাড়াও সিনিয়র নার্স উম্মে হাবিবা সিভিল সার্জন বরাবর অভিযোগ করেন।
তিনি অভিযোগে জানান, ২০১৬ সালে নিয়াগকৃত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স তিনি। তিনি অভিযোগে বলেন, ফাইজার ভ্যাকসিন দেওয়ার কারণে সরকার ৮ জন নার্সকে ২৪ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা প্রদান করেন। ৮ জন নার্সকে বেলায়েত হোসেন ৪৮ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা অফিস খরচ বাবদ কেটে রাখেন। এছাড়া তিনি ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কুরুচিপূর্ন কথা বলে বিব্রত করেন। অফিস অথবা ওয়ার্ডের কাজে বা তার অফিসে গেলে তার দৃষ্টিভঙ্গি আপত্তিকর কথা বার্তা শুনতে হয়। যার ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল নার্সরা স্যারের অফিস রুমে যেতে ভয় পায়। তার যৌনহয়রানীর কারণে নার্সরা হাসপাতালে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারছে না। আমরা চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে লিখিত ও ভিডিও বক্তব্যসহ অভিযোগ দিয়ে এসেছি।
অভিযোগকারী নার্স উম্মে হাবিবা বলেন, ডা. মো. বেলায়েত হোসেন আমার ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে কুরুচিপূর্ন মন্তব্য করেন। যার ফলে আমার পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমি ফেসবুকে কোন পোস্ট করলেই তিনি বাজে মন্তব্য করায় পোস্টগুলো ডিলেট করতে বাধ্য হই। তাছাড়া তিনি সরসরি আমাকে দেখলেও অশ্লীল ভাষায় মন্তব্য করেন। তিনি আমাদের নার্সদের ভ্যাকসিন দেওয়ার টাকা অফিস খরচ দেখিয়ে নিজে তা আত্মসাৎ করেছেন। এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আমি চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে ডা. বেলায়েত হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ হয়েছে সেটা আমি জানি না। কিছুক্ষণ আগে সিভিল সার্জন অফিস থেকে এসেছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমাকে এ বিষয়ে কিছুই বলেনি। হাসপাতালে এ ধরনের কোনো কর্মকান্ডে আমি জড়িত নয়।