হাজীগঞ্জ পৌরসভার নারী কাউন্সিলর মিনুর মামলার সাথে ডাক্তারের বক্তব্যের মিল নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক :
হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন ও ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিনু আক্তার। গত ১৫ নভেম্বর তিনি এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় তার স্বামী নুরে আলমসহ ৯ জনকে স্বাক্ষী রেখেছেন। এই স্বাক্ষীদের মধ্যে তিনজন চাঁদপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক। তারা হলেন- আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এ.এইচ.এম সুজাউদৌলা, আবাসিক মেডিকেল অফিসার-২ ডা. মো. আসিবুল আহসান চৌধুরী ও ডা. সুশান্ত।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার-২ ডা. মো. আসিবুল আহসান চৌধুরী বলেন, গত ৪ আগস্ট মিনু আক্তার নামের একজন সেবাগ্রহিতা হাসপাতালের বর্হিবিভাগে এসে মারামারিতে আহত হয়েছেন উল্লেখ করে চিকিৎসা নিয়ে তাৎক্ষনিক চলে গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিনু আক্তার কর্তৃক দায়েরকৃত কোন মামলা বিষয়ে আমরা জানি না।
এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার মারামারিতে আহত হয়েছেন বলে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি মামলায় উল্লেখ করেছেন আসামি আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন তাকে ধর্ষণ চেষ্টার সময় ধস্তাধস্তিতে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন।
এছাড়া তিনি মামলায় ঘটনার তারিখ ও সময় উল্লেখ করেছেন হাজীগঞ্জ পৌরসভায় ৩ আগস্ট দুপুর ২টা ৩০ মিনিট। কিন্তু তিনি চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ আগস্ট বিকাল ৫টায়। এর আগে তিনি হাজীগঞ্জে সরকারি ও বেসরকারি কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নেননি কেন প্রশ্ন রাখেন কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেন।
তিনি বলেন, গত ৩ নভেম্বর মিনু আক্তার চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনকৃত প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদনে অভিযোগ করেন, মেয়র ও কাউন্সিলর দুইজনের তাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিতো এবং তিনি ওই প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় কাউন্সিলর তাকে সব কাজ পাওয়া থেকে বিরত রাখতো।
অথচ তিনি (কাউন্সিলর মিনু আক্তার) মামলায় উল্লেখ করেছেন, শুধুমাত্র মেয়র তাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছে, তার সহযোগী হিসাবে কাউন্সিলর সহযোগিতা করেছেন। মেয়র তাকে কোন কাজে সহযোগিতা করতেন না।
তারও আগে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের দ্বায়ে পৌরসভার মেয়র কর্তৃক কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে তিনি ক্ষমা চেয়ে নেন। সেই জবাবে তিনি কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব এবং তাকে সকল প্রকার কাজ থেকে বিরত রাখার অভিযোগ করেন।
অর্থাৎ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার, পৌরসভায় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব, চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কাছে লিখিত অভিযোগ ও আদালতে মামলায় দুই রকম কথা বলেছেন। যা প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেন কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেন।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের (সংবাদকর্মীদের) মাধ্যমে পৌরবাসীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট ও লাইভের মাধ্যমে পৌর মেয়র ও আমার বিরুদ্ধে অপ-প্রচার করায় সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তারের বিরুদ্ধে আমি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে আমাদের বিরুদ্ধে কাউন্টার মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি আমি আদালতে উপস্থাপন করবো।
এদিকে এ বিষয়ে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তারের ব্যবহৃত (০১৩২২৬…..০৫) মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে, প্রথমে তিনি হ্যালো হ্যালো করে কলটি কেটে দেন। দ্বিতীয় বার কল দিলে একজন পুরুষকে দিয়ে ফোন রিসিভ করে বলে কাউন্সিলর মিনু আক্তার কাছে নেই।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপপ্রচার করায় হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থাগ্রহণ করেন ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মনির। তিনি গত ২ নভেম্বর চাঁদপুরে আমলী আদালত, হাজীগঞ্জে একটি মানহানি মামলা দায়ের ও ১ নভেম্বর হাজীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন।
আমলী আদালতে দায়েরকৃত মামলা ও সাধারণ ডায়েরিতে স্বাক্ষী করা হয়েছে পৌর মেয়রসহ পৌর পরিষদের সব কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের (বিবাদী মিনু আক্তার ছাড়া)। আদালতে দায়ের করা মামলার (সিআর ৬৬৬/২২) তদন্ত করে আগামি ১ ডিসেম্বরের মধ্য প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যার স্মারক নং ১১২১, তারিখ ২/১১/২২ খ্রি.।
অপরদিকে গত ১৫ নভেম্বর হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন ও ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মনির হোসেনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিনু আক্তার।