এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে চার সপ্তাহ সময় পাবে শিক্ষার্থীরা, তারিখ আগামী সপ্তাহে

চাঁদপুর প্রতিদিন ডেস্ক :
আগামী সপ্তাহের সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে পরিকল্পনা ও তারিখসহ এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে ঘোষণা আসবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গতকাল বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অনলাইনে জুম মিটিংয়ে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী সপ্তাহের সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে পরিকল্পনা তারিখসহ ঘোষণা (এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে) করতে পারবো।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক এতে যুক্ত ছিলেন।
এইচএসসি পরীক্ষার বিষয় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আমাদের সব প্রস্তুতি, সবকিছু আমাদের ষোলআনা আছে। আমাদের প্রশ্ন আছে, প্রশ্ন জায়গামতো আছে, সবই আছে।
‘এখন প্রশ্ন হলো, এই যে বিরাটসংখ্যক পরীক্ষার্থী, ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী, তার সঙ্গে অভিভাবকেরা যান সেটা নিয়ে সংখ্যা অনেক বাড়ছে। লক্ষাধিক পর্যবেক্ষক শিক্ষক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সব মিলিয়ে ২৫-৩০ লাখ লোকের একটা সম্পৃক্ততা এবং যাদের অধিকাংশই হয়তো গণপরিবহন ব্যবহার করবেন। সেই জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির ব্যাপারটা আমাদের মাথায় আছে। যার কারণে এটি নিতে পারিনি। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে অনেক কথা আসছে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন শীতের সময় প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রকোপ বাড়তে পারে। একটা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা বলেছেন। এরমধ্যে আমরা কী করবো?
‘কোনো কোনো পরীক্ষার্থী বলেছে যে পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন চায়, আমাদের কাছে অনেকেই ই-মেইল করেছেন, অনুরোধৃ আমরা পরীক্ষা দিতে চাই না, আমাদের আগের পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে মূল্যায়ন করার জন্য। এটা একটা অপশন। ’
তিনি বলেন, আমরা সব প্রস্তুতি নিলাম, সবকিছু করলাম তারপরও পরীক্ষা নেওয়া গেলে না, তাহলে কী হবে? তাহলে কি শিক্ষার্থীরা পরবর্তী পর্যায়ে যাবে না? নিশ্চয়ই তারা পরবর্তী পর্যায়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তো তাদের আরেকবার পরীক্ষার সম্মুখীন হতেই হচ্ছে। তাহলে পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন করার একটা সম্ভাবনা তো থেকেই যাচ্ছে।
‘আমরা সেটিকে নাকচ করে দিচ্ছি, কিন্তু অনেক পরীক্ষার্থী আছে তাদের অভিভাবকদেরও অন্য অপশন ভাবতে হবে যেন ২-৩ বছর গিয়ে কোনো শিক্ষার্থী, কোনো চাকরির জায়গায় গিয়ে কেউ যেন তাকে না বলে ও আচ্ছা, তুমি টুয়েন্টি টুয়েন্টির ব্যাচ! তুমি তো পরীক্ষা দিয়ে পাস করোনি। কাজেই এই এইচএসসিটাকে গুরুত্ব দিলাম না, এমন যেন না হয়। তাহলে কী কী কতটুকু সম্ভব হতে পারে, আমরা এর সবকিছু একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক করেছি। ’
‘আমি আশা করছি, আগামী সপ্তাহের সোম-মঙ্গলবারের মধ্যে আমরা এই বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের পরিপূর্ণ পরিকল্পনা একেবারে তারিখসহ আপনাদের সামনে ঘোষণা করতে পারবো। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা নিলে কতটুক পরীক্ষা নেবো, সেই পরীক্ষাটা কী পদ্ধতিতে হবে- আমি পরীক্ষার্থীদের বলতে চাই আমরাও এক সময় পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমাদেরও সন্তান-সস্তুতি আছে। আমরা কিন্তু কোনোভাবে চাই না, আমাদের পরীক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন, প্রায় ছয় মাস পড়াশোনা থেকে অনেকেই দূরে সরে গেছেন, অনেকেই তেমন নিয়মিতভাবে পড়াশোনা করতে পারছেন না। এটা খুব স্বাভাবিক, পরীক্ষা কবে হবে কবে হবে করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা যায় না। আমি বারবার বলেছি অন্তত ১৫ দিন সময় দেবো। ’
‘আমার মনে হয় পরীক্ষা শুরু করার আগে অন্তত চার সপ্তাহ সময় দেবো। আমরা চেষ্টা করবো দ্রুততম সময়ের মধ্যে মিনিমাম কতগুলো সাবজেক্ট ও মিনিমাম কত নম্বর দিয়ে পরীক্ষা কাজটি সম্পন্ন করতে পারবো। হয়তো কিছু কিছু বিষয়ের বেলায় জেএসসি, এসএসসির নম্বর দিয়ে মূল্যায়নের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি। আমরা অনেক অপশন ঠিক করেছি। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা নিতে যাচ্ছি সেই সময়ে পরীক্ষার্থী বা তার বাড়িতে কোভিডে আক্রান্ত আছে, সেই পরীক্ষার্থীর কী হবে- তার জন্যও একটা বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখতাম। সব অপশন নিয়ে আমরা আসবো। আমাদের পরীক্ষার্থী যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তারা যেন সুবিধাজনক সময়ে দুশ্চিন্তা ছাড়া পরীক্ষা দিতে পারে।
পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়নের সম্ভাবনা
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শীতে করোনার সেকেন্ড ওয়েব আসতে পারে, সেটিও আমরা মাথায় রেখেছি। তবে কেউ কেউ নাকি পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন চাইছেন। সেক্ষেত্রে আমরা সেটি নাকচ করছি না, কারণ সব চেষ্টার পরও পরীক্ষা নেওয়া গেলো না, তাহলে কি আমাদের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যাবে না? সেক্ষেত্রে পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়নের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। আমাদের সেটিও ভাবতে হবে।’
সব প্রশ্নের উত্তর সোম বা মঙ্গলবার
তিনি আরও বলেন, ‘সব প্রস্তাবনা নিয়েই সোম বা মঙ্গলবার আবার সবার সামনে আসবো। কিন্তু আমাদের পরীক্ষা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সবাই যেন দুশ্চিন্তা ছাড়া পরীক্ষা দিতে পারে সেদিকে আমরা লক্ষ রাখছি। আর যারা পরীক্ষা দিতে পারবেন না তাদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, সেটি সোম মঙ্গলবার জানাবো।’
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান সংযুক্ত ছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply