কচুয়ায় প্রতিমা ভাংচুরের অভিযোগে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার

মানিক ভৌমিক :
কচুয়া উত্তর ইউনিয়নের নাহারা গ্রামে সার্বজনীন কালি মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার গভীর রাতে এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস, চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সুদীপ্ত রায়, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সুলতানা খানম, কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপায়ন দাস শুভ, কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন ও জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল ঘোষ সহ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন কালে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমরা এখানে এসে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলেছি। এতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটা নিজেদের অর্ন্তদ্বন্ধ। যারা ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় তারা একাজ করেছে। আমরা সকলের সহযোগিতা নিয়ে দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে শাস্তির সম্মূখীন করব।
জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সমস্যা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নিজেরা করেছে বা অন্যেরা করেছে- তারা ইসলাম ধর্ম বা সনাতন ধর্মের অনুসারী হতে পারেনা। তাদের কোন ধর্ম নেই। হিন্দু ধর্মের কোন অনুসারী তাদের দেবীর মাথা ভাংতে পারে না আবার মুসলিম ধর্মের অনুসারী মসজিদের মিম্বারে মুর্তির মাথা রাখতে পারে না। বিশৃংখলা সৃষ্টির লক্ষে সুপরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটানো হয়েছে। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে অচিরেই তাদের সন্ধান করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ঘটনা নিয়ে আর যাতে সমস্যা সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য আমরা সজাগ রয়েছি।


জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল ঘোষ জানান, যারা প্রতিমা ভাংচুর করেছে আমি সেই দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করছি। প্রশাসনের নির্দেশে আসন্ন দুর্গা পূজা উদযাপনের নাহারা সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সনতোষ চন্দ্র সেনকে আহবায়ক ও মানিক মজুমদার সোহাগকে সদস্য সচিব করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূজা উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে পূজা মন্ডপে নিরাপত্তায় পুলিশের টিম সার্বক্ষণিক কাজ করে যাবে।
নাহারা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি পবিত্র কুমার সূত্রধর বলেন- মঙ্গলবার সকালে আমি কালিমন্দিরে এসে প্রতিদিনের ন্যায় মন্দিরে প্রনাম করতে এসে দেখি কালি মা’র প্রতিমায় মায়ের মুখমন্ডল নেই। পরে সাথে সাথেই আমি কচুয়া ওসি মো. মহিউদ্দিন এবং উপজেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবগত করি। কিছুক্ষণ পরেই সংবাদ আসে প¦ার্শবর্তী তেতৈয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় জামে মসজিদে কালি মায়ের মুখমন্ডল পাওয়া গেছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকতেই পারে, তবে প্রতিপক্ষ প্রতিমা ভাংচুর করবে এটা আমি কোন ভাবেই বিশ^াস করিনা। আমাদের কোন্দলের সুযোগে তৃতীয় পক্ষ সুপরিকল্পিতভাবে এ ঘটনাটি ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে।
তেতৈয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমি প্রতিদিনের ন্যায় ভোরে ফজরের নামাজের আজান দিতে এসে মসজিদের মিম্বারের সাথে দেবীর মূর্তির দুটি মাথা দেখতে পাই। সাথে সাথে আমি স্থানীয় মুসল্লিদের বিষয়টি অবগত করি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply