চাঁদপুরে ৫ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদানে প্রস্তুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ইব্রাহিম রনি :
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শুরু হচ্ছে পাঠদান। তাই সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন চলছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। সরকার ঘোষিত ১৯ দফা মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং পাঠদানের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নে ব্যস্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। দায়িত্বশীলরা অনলাইন এবং অফলাইনে প্রস্তুতির সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদানের জন্য ইতোমধ্যেই জেলার বেশিরভাগ প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।


চাঁদপুর সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজসহ কয়েকটি কলেজ ঘুরে দেখা গেলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ ও ভবনে ধোয়া-মোছার কাজে ব্যস্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। শিক্ষকরা দফায় দফায় মিটিং করছেন সরকারি নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে কিভাবে পাঠদান শুরু করা যায়। অধিকাংশ কলেজ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগে থেকেই প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি তারা নিয়ে রেখেছেন। কলেজে আগতদের মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজিং নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া কলেজের একটি কক্ষকে আইসোলেশন হিসেবে ব্যবহারের উপযোগি করে তোলা হচ্ছে।

ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনা হয়েছে সুরক্ষা সামগ্রী।

করোনা সংক্রমণরোধে ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা

৬৬নং ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা বাবুল বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী গত এক সপ্তাহ ধরে পুরো স্কুল পরিস্কার-পরিছন্নতা করা হয়েছে। স্কুলে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবমিলে এখন আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। এর আগে বছরের শুরুতে একবার রি ওপেনিং করার তখনো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।

আগে থেকেই প্রস্তুত চাঁদপুর সরকারি কলেজের শ্রণিকক্ষ।

চাঁদপুর সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাস এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি মাসেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমাদের কলেজের রাজু ভবন পুরোটাই উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না।
তিনি বলেন, কলেজে আমরা একটি চিকিৎসা কেন্দ্র করছি। ইতোমধ্যেই একজন ডাক্তারকে দায়িত্ব দিয়েছি। আমাদের অফিস রুমের সামনের একটি রুম ঠিক করা হয়েছে। সেটিকেই আমরা পরিকল্পিত মেডিকেল সেন্টার হিসেবে গড়ে তুলবো। সেটিই এখন আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাসুদুর রহমান বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ ধোয়া-মোছার কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি ফ্লোরে হাত ধোয়ার পানির ব্যবস্থা করেছি। ভেতরে প্রবেশের আগেই গেইটে সকলের তাপমাত্রা দেখা হয়। আমরা কলেজের তিনটি গেইটই খোলা রেখেছি। মাস্ক ছাড়া কেউই কলেজের ভেতরে ঢুকতে পারবে না। কেউ যদি ভুল করে মাস্ক নিয়ে না আসেন তাহলে আমরা তাকে বিনামূল্যে মাস্ক দেব। তিনি বলেন, আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল। কারণ, প্রতি সপ্তাহে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার জন্য কলেজে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী আসতো।
তিনি বলেন, আমাদের মাদার কন্যার রুম আছে। এটিকেই আমরা এখন আইসোলেশন রুম হিসেবে ব্যবহার করবো।

আহমাদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার মো. গিয়াস উদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, জেলায় মোট মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা আছে ৫৩৭টি। এর মধ্যে কলেজ ৩৯টি, স্কুল এন্ড কলেজ ১৭টি, মাধ্যমিক স্কুল ২৮০টি, মাদ্রাসা ২০১ টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রয়েছে ১ লাখ ২৪ হাজার এবং ছাত্রী রয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজারসহ মোট ৩ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে।
তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মাধ্যমিকের সকল কর্মকর্তারা বিদ্যালয় ভিজিট করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পাঠদান শুরু করতে আমাদের প্রস্তুতি আছে। নতুন করে যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ চলছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের সাথে দফায় দফায় মিটিং করছি।

শিক্ষার্থীদের দূরত্ব বজায় রাখতে স্কুলের মেঝেতে গোল বৃত্ত।

জেলা প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষা অফিসার ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, জেলায় ১ হাজার ১৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সবকটিতেই আমাদের প্রস্তুতি যথেষ্ঠ ভালো। তবে নদী ভাঙনকবলিত এলাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। সেখান থেকে কয়েকটি স্কুল সরিয়ে আনা হয়েছে। অনলাইন এবং অফলাইন মনিটরিং, সরেজমিনে পরিদর্শন জোরদার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে। যেখানে ত্রুটি পাচ্ছি সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রাদি গত দুই মাস আগেই কেনা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সাবান, হ্যান্ডওয়াসসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এখন চলছে টেবিল-চেয়ারগুলো ধোয়া মোছার কাজ চলছে। ৮০ ভাগ কাজই হয়েছে। আগামী দু’ দিনের মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যাবে। তারপরও কোথাও কোন সমস্যা কারো চোখে পড়লে আমাদেরকে জানালে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নেব।

শেয়ার করুন

Leave a Reply