চাঁদপুরে ৭৫২ ভূমিহীন পরিবার পাচ্ছেন ঘর

গৃহহীন ও ভুমিহীনদের ভূমিসহ ঘর ঈদ উপহার হিসেবে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী : জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ

অভিজিত রায় :

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২৬ এপ্রিল  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ভূমিহীন ও গৃহীন পরিবারকে ভূমি ও গৃহ প্রদান (৩য় পর্যায়ে) উদ্বোধন উপলক্ষে  মতবিনিময় ও প্রেস ব্রিফিং করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন।

রোববার ২৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিং এ সভাপতিত্ব করেন, জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আগামী ২৬ এপ্রিল  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ৩য় পর্যায়ে প্রায় ৩৩ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদানের কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন। জেলা প্রশাসক বলেন, এবছর ঈদ উপহার চাল, শাড়ি, লুঙ্গি  নয়, গৃহীন ও ভুমিহীনদের ভূমিসহ ঘর ঈদ উপহার হিসেবে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, বাংলাদেশের একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না।  তিনি বলেন, সারা দেশে ১ম পর্যায়ে প্রায় ৬৬, ১৮৯ জনকে এবং ২য় পর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার ৩ শত ৪০. জনকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে চাঁদপুর জেলায় ‘ক’ শ্রেণির গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার এর সংখ্যা ১৬০৬ টি। চাঁদপুর জেলায় ১ম পর্যায়ে একক গৃহের মাধ্যমে ১৩৫ টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ২য় পর্যায়ে এ জেলায় একক গৃহের মাধ্যমে ১০৯টি পরিবারকে অর্থাৎ ২টি পর্যায়ে সর্বমোট ২৪৪ টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আর এবার ৩য় পর্যায়ে একক গৃহের মাধ্যমে ১২৩টি ও হাইমচরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬২৯টি অর্থাৎ মোট ৭৫২টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে।

জেলা প্রশাসক  আরও বলেন, আগামী ২৬ এপ্রিলের মধ্যে  ৬৮০টি পরিবারকে এবং অবশিষ্ট ৭২টি পরিবারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাকী কাজ সম্পন্ন করে গৃহ হস্তান্তর করা হবে। এ সকল পরিবারকে এক টাকা সেলামীতে দুই শতক জমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। উক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে কবুলিয়ত, রেজিস্ট্রেশন, নামজারী ও জমাখারিজ খতিয়ান সৃজন, সনদপত্র প্রদানসহ সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং চলমান আছে। সরকার কর্তৃক ডি.সি.আর এর ১ হাজার ১৭০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এতে নামজারীর জন্যও ভূমিহীনদের  কোন টাকা ব্যয় করতে হবে না। জেলা প্রশাসক জানান,  প্রতিটি একক গৃহের আয়তন ৩৯৫ বর্গফুট। দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহে একটি টয়লেট, একটি রান্নার কক্ষ ও একটি ইউটিলিটি স্পেস রয়েছে।

তিনি  আরও বলেন, চাঁদপুর জেলায় খাস জমি উদ্ধার করে এই পুনর্বাসন করা হচ্ছে। নিষ্কন্টক খাস জমি না পাওয়া গেলে অবশিষ্ট ‘ক’ শ্রেণির পরিবারকে জমি ক্রয়ের মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্য সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পুনর্বাসনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের জায়গা নির্বাচন, মাটি ভরাটসহ প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক আরো জানালেন, চাঁদপুর জন প্রশাসন ক্যাডারে আমরা যারা আছি তারা তাদের বেতনের টাকায় চাঁদপুর জেলায় ২টি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া দিয়েছি। বিভিন্ন ব্যক্তি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, প্রতিষ্ঠান প্রধান, সংস্থা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর জেলায় ১১৮টি ঘর নির্মাণ করবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

প্রেস ব্রিফিং এ প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ।

প্রেস ব্রিফিংএ আরও বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাবেক গোলাম কিবরিয়া জীবন,  ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, দৈনিক খবরের সম্পাদক প্রকাশক সোহেল রুশদী, দৈনিক শপথের সম্পাদক প্রকাশক কাদের পলাশ, ফটোজার্নালিস্ট এসোএমএ লতিফ। প্রেসব্রিফিং এ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন,  জেলা প্রশাসক।  এক প্রশ্নের উত্তরে,তিনি  বলেন, চর এলাকায় বস্তুতঃ কোন বসতি গড়ার আগে সেখানে তাদের পানি, আলো, বাজার,  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,  পুকুর,  ঘাটলা, বনায়নসহ যাবতীয় বিষয়গুলো আমলে নেয়া প্রয়োজন আছে। আমাদের এর আগে গড়ে উঠা আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো গড়ে তোলার আগে এসব চিন্তাগুলো,  পরিকল্পনাগুলো তেমন করা হয়নি। কিন্তু এবার আমরা এ ধরনের প্রস্তাব গুলো আমরা পাঠাবো খুব শীঘ্রই । তাছাড়া চরগুলোতে আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো যদি টিকতে না পারে তাহলে সমস্যা তো থেকেই যায়। তাই আমরা তথা সরকার পক্ষ এসব আশ্রয়ন প্রকল্প গড়ে তোলার আগে সাইড সিলেকশনটার উপর জোর দেবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বদাই চান টেকসই উন্নয়ন। তিনি আরো বলেন, এবার প্রতিটি ঘরের জন্য আগের তুলনায় বাজেটও বেশি ধরা হয়েছে। আর সবচেয়ে যে জিনিসটি লক্ষনীয় আমাদের চাঁদপুরে তা হলো গৃহহীনরা তাদের প্রাপ্ত ঘরগুলো তারা তৈরির সময়ে অনেকেই নিজেরা গিয়ে তদারকি করে। এটা একটা ভালো দিক।

প্রেস ব্রিফিং এ উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) দাউদ হোসেন চৌধুরী,  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রাশেদা আক্তার. চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জালাল চৌধুরী, শরীফ চৌধুরী।

উল্লেখ্য, চাঁদপুর জেলার ৬টি উপজেলায় এই তৃতীয় পর্যায়ে ১২৩টি ঘর ভূমিহীনদের দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ২২টি, কচুয়া উপজেলায় ২০টি, ফরিদগঞ্জে ৫টি, মতলব দক্ষিণে ১৯টি, হাজীগঞ্জে ৩৪টি, শাহরাস্তিতে ২৩টি। হাইমচর উপজেলায় ৬২৯টি।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply