জাতির পিতার সমৃদ্ধ সোনার বাংলা আমাদের গড়তে হবে : জেলা প্রশাসক

জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ১৫ আগষ্ট উপলক্ষে আলোচনা সভা

: নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের ব্যাপক কর্মসূচির মধ্যে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের ১৮ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যার সেই ভয়াল ১৫ আগষ্ট ও তার পরবর্তী প্রেক্ষাপট এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে আজকের বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া – এ বিষয়ে ভার্চুয়ালি এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৫ আগষ্ট সকালে শুরু হওয়া এই আলোচনা সভা সভাপতিত্ব করেন অন্জনা খান মজলিশ।
সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন,এই দেশ, এই মানচিত্র এই পতাকা জাতির পিতার সৃষ্টি। মাত্র ১১ মাসের মধ্যে তিনি একটা সংবিধান দিয়েছেন, যা সারা বিশ্বে বিরল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তাঁর স্বাধীন দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করেন। আমাদের দেশ ও জাতিসত্ত্বাকে দেশকে সারা বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করার জন্য তিনি জাতীয় মাছ, ফুল, ফল, জাতীয় পতাকা এবং জাতীয় সংগীতসহ নানা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিষয়গুলো খুব দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করেন। জেলা প্রশাসক বলেন, স্বাধীনতার পর একটা বিধ্বস্ত দেশকে টেনে দাঁড়া করাতে ও, তাঁর সোনার বাংলা গড়ার জন্য তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে এই বিশ্ব রাজনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালক এই মহান ব্যক্তিত্বকে কুচক্রীরা হত্যা করবে, এটি ভাবতেও খারাপ লাগে। ঘাতকরা শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করেনি, বঙ্গমাতাসহ তাঁর পরিবারের ১৮ জনকে হত্যা করেছে। সভাপতি জেলা প্রশাসক বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর স্বাধীন দেশ বাংলাদেশে পা রাখার আগেই স্বাধীনতার অগ্রযাত্রায় পরম মিত্র দেশ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছেন , দ্রুত বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী সরিয়ে নিয়ে যেতে এবং তাই হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র তথা যারা বাংলাদেশ চায়নি, পাকদের দালালি করেছে, তাদের জাতির পিতা ক্ষমা করেননি। জাতির পিতা ১৮৭ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন। জাতিসংঘ ওআইসিহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য পদ লাভ করেন। ইসলামি ফাউন্ডেশন গঠন করেন, ত্রাণ তহবিল করেন। কিন্তু ঘাতকরা জাতির পিতাকে বাঁচতে দিলো না। দেশি- বিদেশি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করে তাঁকে মেরে ফেলা হলো। অন্জনা খান মজলিশ বলেন,জাতির পিতার কন্যার হাত ধরে এগিয়ে চলছে দেশ। আমরা আজ পদ্মাসেতু দেখছি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। এমন অসংখ্য বৃহৎ উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের যথেষ্ট সুবিধা তিনি দিয়েছেন এবং তা অব্যাহত রেখেছেন। মহামারি করোনার এই বিপর্যয় মুহুর্তে এবং এর আগে তিনি দেশের অর্থনীতি চাকা সচল রাখতে ও এটিকে উপরে তুলতে যেমন কাজ করে সফল হয়েছেন এবং এই মহামারিতে মানুষের জীবন রক্ষাতেও তিনি অনেক প্রশংসিত কাজ করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করেই তিনি দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার সমৃদ্ধ সোনার বাংলা আমাদের গড়তে হবে। প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে এ আর এম জাহিদ হাসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্যে আরো অংশ নেন, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারন সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী, জেলা মুক্তি যোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসিত বরণ দাশ, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাসুদুর রহমান, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, ডিডি এন এস আই শাহ আরমান আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শানজিদা শাহনাজ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী প্রমুখ।
পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, এদেশের কোন মানুষ বঙ্গবন্ধুকে মারবে তা বঙ্গবন্ধু কখনো বিশ্বাস করতে পারতেন না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সে দৃঢ় বিশ্বাসে আঘাত হেনে এ দেশের ঘাতকরাই তাঁকে হত্যা করলো। তবে এর সাথে দেশি – বিদেশী চক্রান্তও ছিলো। পুলিশ সুপার বলেন, স্বাধীনতার বিরোধীতা যারা করেছিলেন, ১৫ আগষ্টের মতো রক্তাত্ত দিনটি যারা জন্ম দিয়েছেন, সেই মানুষগুলো এখনো আমাদের সাথেই আছে। তার প্রমান মিলে ইনডিমিনিটি অধ্যাদেশ জারি, ২১ আগষ্টসহ কতোগুলো বিভীষিকাময় দিনকে সামনে আনলে। তিনি বলেন, ১৫ আগষ্টের ঘাতকরা এখনো অনেকে পালিয়ে। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে প্রাপ্ত দন্ড কারযকর করতে হবে। সরকার এ প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, শোষিত নিপীড়িত নির্যাতিত ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা যে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কবর দিয়েছিলাম ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে, দেশ পেয়ে, সেটিকে পুনর্বাসন করলেন জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, যে খুনিরা লুকিয়ে আছে, তাদের বিদেশ থেকে এনে প্রাপ্ত শাস্তি দ্রুত করতে হবে। সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী বলেন, বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষগুলোই তাঁর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। আমরা জয় বাংলা শ্লোগান থেকে বিচ্যুত হচ্ছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জনসভা করেছে। সেই জনসভায় চাঁদপুরের অনেকেই ছিলেন, যারা ফ্রিডম পার্টিও করেছেন। আর এই সব লোকেরা এখন আমাদের দলের জন্য মায়া কান্না করে। মীরজাফররা আমাদের দেশকে অনেক পিছনে নিয়ে গেছে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ কাজ করছে। সভায় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা সংযোগ ছিলেন। সভায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মানে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার আহবান জানানো হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply