বাগাদীতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদীতে এক পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মূল হোতাসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো : বাগাদী ইউনিয়নের সকদি গ্রামের মো. খোকন মিজি, তার স্ত্রী সুমী বেগম, দেবর সুজন মিজি।
এর আগে সোমবার ওই গ্রামের মিজি বাড়ির তাদের নিকট প্রতিবেশী শাহাদাৎ মিজির ঘরের ছাদ তোলায় বাধা ও পাকা ঘরভাঙনের অভিযোগে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের সামনেই হামলা চালিয়ে তারা শাহাদাতের আত্মীয়স্বজনসহ ৫ জনকে রক্তাক্ত জখন করে। এই কাণ্ড দেখে কিংকর্তব্য বিমুড় আসামী না ধরেই আহতদের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ ও আহতদের মামলা দায়েরের পরামর্শ দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসে। পরে গুরুতর আহতদের পক্ষে শাহাদাতের ভাতিজা রহিম মিজি ৬ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করলে রাতেই পুলিশ সুপাররের নির্দেশে মামলা দায়েরের ১ ঘন্টার মধ্যেই রাত আনুমানিক ১টায় পুলিশ তাদের বাড়ি থেকেই ৩ আসামীকে গ্রেফতার করে।
চাঁদপুর মডেল থানার ওসি আবদুর রশিদ জানান, এরা আরো একটি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী এবং সে মামলায় হাজতেও ছিলো তারা। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফারুক আহম্মদই ঐ মামলায় চার্জশীট দিয়েছিলেন।
পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, আমিও জেনেছি এরা আগে থেকেই চিহ্নিত অপরাধী। আর আজকে যে অন্যায় অপরাধ করেছে সেটি পুলিশের সামনেই। এজন্য তাদের ঘটনার সময়ই ধরে নিয়ে আসার দরকার ছিলো। পুলিশ সুপার জানান, পর্যাপ্ত ফোর্স না থাকায় হয়তো থানা পুলিশ করতে পারেনি। পরে বিষয়টি আমি ভালোভাবে জানার পর ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি, রাতের মধ্যেই তাদের আটক করতে।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, রাতে আনার সময়ও তারা পুলিশের উপর চড়াও হতে চেষ্টা করে। পুলিশকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, এদের আজ কোর্টে চালান দেয়া হবে।
একটি সূত্র জানায়, বাগাদি ইউনিয়নের হাটে বাজারে বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী তৎপরতা বেড়ে চলেছে। মাদক সেবন ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এমন মাস্তানি দালালি চাদাবাজিও চলে অহরহ।
এদিকে ভিকটিম একটি জাতীয় দৈনিকের কর্মচারী শাহাদাত হোসেন ও তার ভাতিজা জানান, আমরা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। এরা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে তোলা পাকা ঘর ভেভে দিয়েছে। চাঁদা দাবি করে অযথা বিরোধ বাধিয়ে দিয়ে পাকা ঘরের ছাদটা করতে দেয় না। অথচ তাদের চোখের সামনেই আমরা ঘর তুলছি কয়েক মাস ধরে। যেই ছাদের কাজ করতে যাবো, অমনি তারা এসে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আগে পরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা কিছুই নেই। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে- এরা নিজেরাই ঘর তোলার সময় মাফজরিফ দিয়ে সীমানা দেখিয়ে দিয়েছে।

সুমি আক্তার ও তার স্বামী খোকন সম্পর্কে চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বিল্লাল জানান, তারা খুবই খারাপ প্রকৃতির। মেম্বারকে সেখানে পাঠিয়েছি বলে গতকাল তারা আমাকেও মোবাইলে হুমকি দিয়েছে। যা আমি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।
স্থানীয় মেম্বার শফিকুর রহমান জানান, আমি বিগত পাচবারের নির্বাচিত মেম্বার। আমি জানি এরা সন্ত্রাসী প্রকৃতির। এরা মাদকের সাথেও জড়িত। এর আগে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের এজলাশকক্ষে বিচার ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করার কারণে এরা জেল খেটেছে। এদের বিচার আমিও চাই।
জানা গেছে, স্থানীয় শাহাদাত হোসেন মিজি তার পৈত্রিক ভিটায় একটি পাকাঘর নির্মাণ করছিলেন। ঘরের ছাদ ঢালাই করতে গেলে তার পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশি সুমি আক্তার ৩০ এবং তার স্বামী মো. খোকন মিজি বাধা দেয়। একপর্যায়ে ৯৯৯ নম্বরে তারা ফোন করে তারা পুলিশও সেখানে নেয়। চাঁদপুর মডেল থানার এসআই সেলিম সেখানে যান। পরবর্তীতে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে সেখান থেকে চলে আসেন এবং ঘর নির্মাণে বাধা না দেয়ার অনুরোধ জানান। এরপর যথারীতি ঘরের নির্মাণ কাজ চলতে থাকে। কিন্তু সুমি আক্তার ও তার স্বামী খোকন প্রতিপক্ষকে গালিগালাজ ও হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে রোববার সকালে বিষয়টি তারা স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং মেম্বারকে জানানোর পর মেম্বার সেখানে গিয়ে ঘর নির্মাণ অব্যাহত রাখার কথা বলেন। ঘর নির্মাণে বাধাদানকারীদের অহেতুক ঝামেলা না করার জন্য বলেন। বেলা ৩টার দিকে সুমি আক্তার নিজের ঘর থেকে একটি সাবল এনে পাকঘরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ঘরের ক্ষতিসাধন করে। এই ভীতিকর পরিস্থিতি দেখে ঘরের মালিক শাহাদাত হোসেন মিজি থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে পুলিশ একটি অভিযোগ দায়ের করার জন্য বলে। পুলিশের কথায় রোববারই তিনি চাদপুর মডেল থানায় বসতঘরে হামলা, ভাংচুর ও প্রাণনাশের হুমকি বিষয়ে দুইজনকে আসামী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের আলোকেই সোমবার বিকেলে এসআই ফারুকের নেতৃত্বে দুইজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত গন্যমান্যদের নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলার জন্য বসেন। দুই পুলিশের উপস্থিতিতেই সুমি আক্তার ও তার স্বামীসহ অন্যরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শাহাদাত মিজির পরিবারের লোকদের উপর হামলা চালায়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply