বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে হানাদার বাহিনী সেদিন বেছে বেছে হত্যাযজ্ঞ চালায় : পৌরমেয়র

ইব্রাহীম রনি :
যথাযোগ্য মর্যাদায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর সোমবার প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্যাহর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পৌরমেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল। প্রধান আলোচক হিসেবে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন অজয় কুমার ভৌমিক।
সভায় বক্তারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার শান্তি কামনা করে চাঁদপুরের বদ্ধভূমি সংরক্ষণ, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনা, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের তালিকা প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভার শুরুতেই কোরআন তেলাওয়াত ও গীতাপাঠের পর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পৌরমেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, পাক হানাদারবাহিনী যখন বুঝতে পেরেছিল তাদের পরাজয় নিশ্চিত ঠিক তখনই রাজাকারদের সহযোগিতায় জাতির মেধাবী সূর্য সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্যই হানাদার বাহিনী সেদিন বেছে বেছে হত্যাযজ্ঞ চালায়।
তিনি বলেন, এই হত্যাকান্ডটি করা হয়েছিল তালিকা করে। এ হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে একেবারে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বিশেষ করে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড হয়েছে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেদিন যাদের হত্যা করা হয়েছিল তারা ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার। যারা গোটা জাতিকে পথ দেখাতেন এবং গোটা জাতি যাদের অনুসরণ করতো।
তিনি বলেন, একটি স্বাধীনমুখী রাষ্ট্র যে বুদ্ধিবৃত্তিক ঐশর্য্যগুলোর উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছিল সেই মানুষগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য পরিস্কার ছিল- ‘খেলায়তো হেরে গেলাম, কিন্তু খেলতে যেন আর না পারে- সেই ব্যবস্থা করে রাখা’।
তিনি বলেন, অনেক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন নারী সাংবাদিক ছিলেন সেলিনা পারভিন।
মেয়র বলেন, উন্নত বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হয়েছে লাখো শহীদের রক্তদানের মধ্য দিয়ে। বুদ্ধিজীবীদের লাশ হয়তো পড়ে আছে বিভিন্ন জায়গায়। তাদের সমাধী না থাকলেও তারা আমাদের হৃদয়ে আছেন এবং থাকবেন। তারা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
তিনি বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে নিয়ম করে শুরু থেকেই পাঠ্য পড়ার অংশ হিসেবে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ভালো হয়। যেহেতু আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় আছেন- আমরা আপার কাছে বিষয়টি বলতে পারি।
অজয় ভৌমিককে উদ্দেশ্য করে মেয়র বলেন, চাঁদপুরের যে স্মৃতিগুলো সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে তা যৌক্তিক। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন তাদের তালিকা করা, যে জায়গাগুলোতে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে সেগুলোকে চিহ্নিত করা, চিহ্নিত না হওয়া বদ্ধভূমিগুলো চিহ্নিত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে যারা সম্পৃক্ত যারা দায়িত্ব নিয়ে এ কাজগুলো করতে পারবেন তারা উদ্যোগী হওয়া অনুরোধ করছি। চাঁদপুর পৌরসভা এ কাজে সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা করবে। প্রেসক্লাবও সহযোগিতা করবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও কাউন্সলর ফরিদা ইলিয়াছ, অ্যাড. হেলাল হোসাইন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জীবন, শহীদ পাটওয়ারী, শরীফ চৌধুরী, ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সোহেল রুশদী, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, চাঁদপুর সংবাদের সম্পাদক ও প্রকাশক আব্দুর রহমান, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল রুবেল, দৈনিক ইলশেপাড়ের প্রধান সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক ইব্রাহীম রনি, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তালহা জুবায়ের, নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কে এম মাসুদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পৌর কাউন্সিলর সোহেল রানা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ চন্দ্র সূত্রধর, যুগ্ম সম্পাদক মনির চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শওকত আলী, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন জেলা শাখার সহ সভাপতি অভিজিত রায়, কার্যকরি সদস্য ইয়াছিন ইকরাম, সালাউদ্দিন, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর, কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রহমান গাজীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক ও পৌর পরিষদের কাউন্সিলরবৃন্দ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply