মাছধরার নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন নদীতে ড্রেজার ও ব্যক্তিমালিকানাধীন স্পীডবোট বন্ধ : জেলা প্রশাসক

মা সংরক্ষণে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির প্রস্তুতি ইলিশমূলক সভা
: আশিক বিন রহিম :
মা ইলিশ সংরক্ষণে আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে সকল প্রজনন ও অভয়াশ্রমে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এসব অঞ্চলে ইলিশের পাশাপাশি এসব অন্চলে সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এছাড়া, এ সময়ের মধ্যে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিপদপ্তরের আয়োজনে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২৯ সেপ্টেম্বর বুৃধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় চাঁদপুর জলা প্রশানক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে শুরুতেই বিগত সভার কার্যবিবরণ, সিদ্ধান্ত এবং অগ্রগতি তুলে ধরেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী।
পরে আলোচ্য বিষয়ের উপর বিভিন্ন প্রস্তাবনা, পরামর্শ এবং সমস্যার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, নৌ-পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমতিয়াজ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, হাইমচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সাংবাদিক ফারুক আহমেদ, জেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ান, সৎস্যজীবী নেতা তছলিম বেপারী, শাহআলম মল্লিক প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ তার বক্তব্যে বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় এবারও আমরা কঠোর থাকবো। যে কোন মূল্যেই হোক এই অভিযান সফল করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে নদী পাড়ের জেলে, জনপ্রতিনিধি, সচেতন মানুষকে তৎপর থাকতে হবে। আমরা চাইবো না গরিব জেলেদের আটক করতে। কিন্তু তারা কথা না শুনলে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হবো। অভয়াশ্রম চলাকালে আমাদের নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি সপ্তাহে দু’বার
কম্বাইন্ড টিম অভিযান করবে। রাতের বেলায় বেশি মাছ শিকার হয়। তাই রাতে জন্যে স্পেশাল টিম প্রস্তুত রাখতে হবে। খবর পাওয়ার সাথে সাথে যেন তারা অভিযান করা যায়। সড়ক পথেও একাধিক চেকপোস্ট থাকবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, অভিযান চলাকালে একটি নৌকাও নদীতে নামতে পারবে না। অধিক গতি বা একের অধিক ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলো রিকজিশন করে রাখা হবে। সেগুলো নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, জেলা পুলিশ ব্যবহার করবে। আর এবছর আটক নৌকার সাথে সাথে নিলামে বিক্রি করে দেয়া হবে। হাইমচরে ২২ দিন যাতে কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ স্থায়ীভাবে থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
অভয়াশ্রমের ২২ দিন ড্রেজার বন্ধ থাকবে। নদীত ব্যক্তিমালিকানাধীন স্পীডবোট বন্ধ থাকবে। জেলা প্রশাসক বলেন, আপনারা যে কেউ আমাকে ইনফরমেশন দেবেন। এ ক্ষেত্রে আপনারা যারা মৎজীবী নেতা আছেন, তারা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবেন। তিনি বলেন, এমন খবর দেবেন না, যার সত্যতা পাওয়া যায় না। যেটি দেবেন ভালোভাবে যাচাই করে দেবেন, যাতে একশনে যেতে পারি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের যার যার দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে। প্রচারনা চালাতে হবে। সংবাদপত্রে প্রচার করতে হবে। কোথায় কোথায় সমস্যা সেটি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করতে হবে।
তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভোট পাওয়ার জন্য বা ভোট পেতে অসুবিধা হবে এই ভেবে জনপ্রতিনিধিরা যাতে অসাধু জেলেদের সহযোগিতা না করেন। এমন কেউ যদি কেউ করেন, তাহলে তারাও অপরাধি হিসেবে চিহ্নিত হবেন । জেলে নেতারাও যদি এসময় অনৈতিক কাজ করার আশা বাদ দেবেন। তাহলে আপনাদের নামও অপরাধির তালিকায় উঠবে। চাষকৃত মাছের জন্যে একটি বরফকল খোলা থাকবে। সবাই এক থাকলে আমরা সফল হবোই ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার প্রস্তুতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক বলেন, মৎস্য বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে আমি হতাশ। জেলা টাস্কফোর্সের সভার আগে তাদের একটি সভা করা দরকার ছিলো। অনেকবার বলার পরেও চাঁদপুরের নিবন্ধনকৃত জেলেদের হালনাগাদ তালিকা আপনারা দেননি। কেবল মাত্র বাতিল হওয়া জেলেদের তালিকা দিয়েছেন। আপডেট তালিকা দেননি। সময়মত তালিকা করতে পারেননি। অথচ আমি আপনাদের সময় দিয়েছি। এগুলো খুবই দুঃখজনক। তবে তিনি হাইমচর উপজেলা থেকে তালিকা পরিপূর্ণ দেয়ায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান।
নৌ পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম বলেন, এই অভিযানে আমাদের একটা বড় ভূমিকা থাকে। আমাদের নৌ পুলিশে লোকবল কম সত্ত্বেও আমরা চেষ্টা করি যেন মা ইলিশ কিংবা জাটকা ইলিশ নিধন না হয়। এবারও আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুত।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কন্ধ করতে হবে। অবৈধভাবে যেসব ড্রেজার বালু কাটে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। অভিযান চলাকালে মৌসুমি জেলের পাশাপাশি মৌসুমি আড়তদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা অসহায় জেলেদের নদীতে নামিয়ে সুবিধা নেয়। পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, মা ইলিশ ধ্বংসের বড় কারণ অবৈধপথে বালু উত্তোলনের ড্রেজার ব্যবহার। অভয়াশ্রম চলাকালে এই অবৈধ ড্রেজার বন্ধ রাখতে হবে। ব্যক্তিমালিকানাধীন স্পীডবোট বন্ধ রাখতে হবে। কারন এগুলো দিয়ে মা ইলিশ পাচার করা হয়। রাজরাজেশ্বর, বোরো চর, বড়স্টেশন টিলাবাড়িতে প্রতি ঘরে ঘরে ইলিশ মজুদ করা হয়। এছাড়া শহরের টিলাবাড়ি, রনাগোয়াল, রামদাসদী, বহরিয়া এলাকার মা ইলিশ বিক্রির মৌসুমি হাট বন্ধ করতে হবে। মৌসুমি আড়তদার, দাদনদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী মৎসজীবী নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা এ মা ইলিশ অভিযানে বা জাটকা নিধনে কারা অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের যে চিনেন না জানেন না, এটা ঠিক না। আপনারা নির্ভয়ে এদের চিহ্নিত করুন। আর নিজেদের মধ্যে কেউ এমন থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করুন। তিনি বলেন, প্রশাসনের সহায়তায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মা ইলিশ সংরক্ষন করতে হবে।
সভায় সকল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ বিভাগ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, জনপ্রতিনিধি ও জেলে নেতাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply