লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে সেই দলিলগুলো করা হয় সরকারের টাকা হাতিয়ে নিতে

চাঁদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে ৫৫৩ কোটি টাকা চেয়ে সেলিম খানের রিটের রায় প্রকাশ :

উচ্চ আদালতের রায়ের পর্যবেক্ষণ জানালেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসকের দেয়া ১৯৪ কোটি টাকার প্রাক্কলনকে চ্যালেঞ্জ করে ৫৫৩ কোটি টাকা দাবি করে উচ্চ আদালতে সেলিম খান কর্তৃক দায়েরকৃত রিটের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। এ রায়ে আদালত সেলিম খানের অবৈধ দাবি খারিজ করে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি এটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণের যে মামলাটি সেলিম চেয়ারম্যান দায়ের করেছিলেন সেই মামলাটির মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগের প্রদত্ত রায় আজ প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে সৃজন বিবেচনায় জেলা প্রশাসন ১৩৫টি দলিল বাদ দিয়েছিলেন। সেটিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রায় ৫৫৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে সেলিম চেয়ারম্যান মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় সরকারপক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য-উপাত্ত দাখিল করি। সেখানে আমরা আদালতকে দেখাই, সেলিম চেয়ারম্যান কর্তৃক আদালতে অনেক দলিল দাখিল করা হয়েছে যেগুলো সৃজিত। এসব সৃজিত ডকুমেন্টের ব্যাপারে সেলিম চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সদুত্তোর দিতে পারেনি।
মাননীয় হাইকোর্ট রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, সেলিম চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে সৃজিত ডকুমেন্টের ব্যাপারে সরকারপক্ষের জবাবের কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি।
বিজ্ঞ আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্তে সেলিম চেয়ারম্যান কর্তৃক যে ১৩৯টি দলিল সম্পাদন করা হয়েছিলো সেই দলিলগুলো সম্পাদন করা হয়েছিল অসৎ উদ্দেশ্যে। সরকার থেকে অধিক পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিপ্রায়ে। এই যে কাজগুলো সেলিম চেয়ারম্যান করেছেন- এ কাজগুলো সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক, অবৈধ ছিল মর্মে হাইকোর্ট বিভাগ রায়ে উল্লেখ করেন।
মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ পর্যবেক্ষণে সেলিম চেয়ারম্যানের এসব কাজকে বলেছেন ‘খুবই ঘৃনিত। সেলিম চেয়ারম্যান এবং তার সাথে যারা মামলা করেছেন তাদের এ কর্মকাণ্ড ঘৃণিত এবং জনস্বার্থ বিরোধী। তার এসব কার্যক্রম অসদাচরণ এবং দুর্নীতির আওতায় পড়ে।
হাইকোর্ট বিভাগ আরও পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, সেলিম চেয়ারম্যান একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের পক্ষে কথা বলা উচিত ছিল। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয় ব্যবহার করে তিনি জনগণের স্বার্থেও বিরুদ্ধে গিয়ে সম্পূর্ণরূপে জনগণের স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। যা কোনভাবেই কাক্সিক্ষত ছিল না। সেলিম চেয়ারম্যানের এসব অনৈতিক এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডের জন্য কেউ যাতে এ ধরনের ভিত্তিহীন, অসার মামলা ভবিষ্যতে না করেন সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ। সেই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় সেলিম চেয়ারম্যানকে ৫০ লাখ টাকা এবং তার অপর দু’ সহযোগীকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এই জরিমানার টাকা রায় প্রাপ্তির দুই মাসের মধ্যে তাকে সরকারি কোষাগারে প্রদান করতে হবে। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে চাঁদপুরের ডেপুটি কমিশনার আইনের বিধান মোতাবেক সেলিম চেয়ারম্যান এবং তার সহযোগীদের কাছ থেকে আদায় করবেন মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শেয়ার করুন