লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে নদী ভাঙনের শিকার চাঁন মিয়ার স্বপ্নপূরণ

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দোকান এবং মালামালও ক্রয় করে দিয়েছি : জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ
অভিজিত রায় :
চাঁন মিয়া, ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিটি টানা তিন মাস শীত-গ্রীষ্ম ভুলে নিয়ম করে চলে আসতেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আঙ্গীনায়। জেলা প্রশাসক আর্থিক সাহায্য দিতে চাইলেও তার দাবী একটাই, দোকান করে দিতে হবে। তার এই নাছোড়বান্দা অবস্থার কাছে হার মেনে একদিন চাঁন মিয়ার পুরো গল্পটা শোনেন জেলা প্রশাসক। বয়সের ভারে ও দূর্ঘটনায় অসুস্থ চাঁন মিয়া তার প্রতিবন্ধী মেয়ের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারছেন না শুনে তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন চাঁন মিয়াকে একটা চায়ের দোকান গড়ে দেবার।


অবশেষে চাঁন মিয়ার পুনর্বাসন করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। চাঁদপুর সদরের শেখেরহাট সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় প্রশাসনের অর্থয়ানে একটি চা এর দোকান করে দেওয়া হয়েছে। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শেখের হাট পুনর্বাসনের দোকানটি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতাকেটে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমতিয়াজ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দাউদ হোসেন চৌধুরী, (শিক্ষা ও আইসিটি) মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার, (এডিএম) মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন সারোয়ার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা শাহনাজসহ অন্যান্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন।


চাঁন মিয়া বলেন, তার পৈত্রিক বাড়ি সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামে। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সহায় সম্পত্তি সবকিছু হারিয়ে ছিন্নমূল হয়ে পড়েন। পেশায় রিকশা চালক ছিলেন। পরে সদরের মৈশাদী এলাকায় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ভ্যান চালকের কাজ নেন। এই রোজগার দিয়ে সংসার চলে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস একবার তার ভ্যানের সাথে সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে তার হাত পা ভেঙে যায়। এরপর থেকে কাজ করতে না পেরে খুবই অসহায় হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, কোন ধরণের ভিক্ষাবৃত্তি না করে জেলা প্রশাসনের নিকট আমার অবস্থা তুলে ধরি। এরপর জেলা প্রশাসক মহোদায় আমার প্রতি সদয় হয়ে দোকান করে দিয়েছেন। আমি প্রশাসনের নিকট কৃতজ্ঞ।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, অসহায় চাঁন মিয়া গত ৩ মাস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে বসে থাকত। তার একটাই দাবী ছিল আমি ভিক্ষা কিংবা করোর উপর নির্ভরশীল হতে চাই না। আমাকে একটি ছোট দোকান করে দেন। যাতে সেখানে দোকান করে বেঁচে থাকতে পারি। কারণ আমাকে দেখারমত কেউ নেই। এরপর আমরা তাকে বলেছি, তোমার ঘর না থাকলে ঘরে দেই। সে বলেছে আমার ঘর আছে দোকানই প্রয়োজন। তিন মাস অপেক্ষা করেছে সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। এরপর একজন ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে তার অবস্থান দেখে জানালো খুবই করুন অবস্থা। এরপর আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার দোকান এবং মালামালও ক্রয় করে দিয়েছি। আজকে থেকে সে দোকান শুরু করতে পারবে এবং সে চলতে পারবে।
ডিসি আরও বলেন, আসলে সরকার যে উদ্যোগগুলো নিয়েছে অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ যেন ভাল থাকে, কষ্টে না থাকে এবং না খেয়ে থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সে নির্দেশনাগুলো আমরা বাস্তবায়ন করছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply