শেখ রাসেল যদি বেঁচে থাকতেন, একজন অনন্য দেশপ্রেমিক হতেন : জেলা প্রশাসক

শেখ রাসেল দিবস উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ
আশিক বিন রহিম :
‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস অদম্য আত্মবিশ্বাস’- এ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে শেখ রাসেল দিবস উদযাপন উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
১৮ অক্টোবর জাতির পিতার কনিষ্ঠপুত্র শহিদ শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্মদিনকে উপলক্ষ করে এবারই প্রথম যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনে সোমবার সকাল ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। তিনি বলেন, জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেল ছিলেন সবার প্রিয়। ছোটবেলার একজন রাসেলের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হয়। তাঁকে নিয়ে আছে অনেক লিখা। যেখানে বর্ণনা আছে তাঁর অনেক মহত্বের কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই ভাইটিকে অনেক বেশি ভালো বাসতেন। প্রধানমন্ত্রীর অনেক কথায়, লিখনীতে রাসেলকে নিয়ে বলেছেন। যা তাঁকে তো আবেগাপ্লুত করেই, আমরা এবং আমাদের শিশুদেরও হৃদয় নাড়িয়ে দেয়, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। তিনি বলেন, আজ যদি শেখ রাসেল বেঁচে থাকতেন, একজন অনন্য দেশপ্রেমিক হতেন। জাতির পিতার আদর্শকে লালন করেই দেশকে ভালোবাসতেন। জেলা প্রশাসক বলেন, তাঁর মত আর কোন ফুল যেন ঝড়ে না পড়ে।
তিনি উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশ্য বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনব্যাপী কল্যানের মাধ্যমে স্বাধীন দেশকে পেয়েছি। স্বাধীনতা বিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর রক্ত যেন না থাকে তা তারা চেয়েছিলো। এমনি নিষ্পাপ শিশু রাসেলকে বাঁচতে দেয় নি। অথচ রাসেল সেদিন তাদেরকে বলেছিলো আমাকে তোমরা মেরো না। তিনি বলেন, ছোট ছোট শিশুরা যারা আছো তোমরা আগে সবকিছু শুনবে এবং জানবে। জেলা প্রশাসক বলেন, পবিত্র কোরআন শরীফ আমাদের কুশিক্ষা দেয়নি। ইসলাম আমাদের সম্প্রীতি ও শান্তির পথ দেখায়। আমাদের নবীজি কখনোই অন্য ধর্মালম্বীদের কোন ক্ষতি করেননি। বরং তিনি বলেছেন, যে অমুসলিমদের ক্ষতি করবে, ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, তাহলে শেষ বিচারের দিন আমি তার পক্ষে দাঁড়াবো না। তিনি বলেন, আল্লাহপাকও পবিত্র কোরআনে এ ধরনের অনাচার বেবিচারের বিপক্ষে বর্ণনা করেছেন। তাই কারো অনিষ্ট করার আগে শান্তির ধর্ম মুসলিমের ঘরে জন্ম নেয়া আজকের শিশুসহ সবাই কোরআন পড়তে হবে অর্থ জেনে। তিনি আমাদের প্রচলিত আইনও বেবিচারি বা অপরাধীকে ক্ষমা করবে না।
তিনি শিশুদের উদ্দেশ্য বলেন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে তোমরা বেড়ে উঠবে এবং এদেশকে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে দিবে এটাই আমাদের আশা।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, একটি অশুভ চক্র দেশে বিভিন্ন সময় অস্থিতিশীল ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা সবসময়ই দেশের উন্নয়নকে আঘাত করতে চায় । আজকে তারা দেশকে বিভক্ত করতে চায়, সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে। কিন্তু আমরা যদি সচেতন হই, দেশের মঙ্গল চাই, সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই, তাহলে এই অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেই পারবে না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রাশেদা আক্তারের এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার)। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, গাছ যদি ভালো হয় ফল তার এমনিতেই ভালো হয়। শেখ রাসেল ছিলো তেমনি ১০ বছর বয়সী মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন একজন শিশু। তাঁর বাসার সামনে একটি কুকুরকেও তাঁর খাবারের একটি দিয়ে দিতো। তিনি খুব বন্ধু প্রিয় ছিলেন। দেশের বাড়িতে গিয়ে বন্ধুদের সাথে কাঠের বন্ধুক দিয়ে খেলতো।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী সেই অপশক্তি ‘৭৫ সালে শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলেন। সেই স্বাধীনতা বিরোধী সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারকে হত্যা করে চুপ থাকে নাই। সেই অপশক্তি এখন আবার মাথা নাড়াচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হাসানের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, বিশিষ্ট ছড়াকার ডা. পিযুষ কান্তি বড়ুয়া প্রমূখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ রাসেলকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন জান্নাতুল মাইশা। পরে শিশু একাডেমি আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিশুদের মাঝে পুরুস্কার বিতরণ করা হয়। এর আগে জাতীয় পর্যায়ে রাসেল দিবসে আয়োজিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রচারিত ভাষন শুনেন একই স্থানে।
এর আগে শেখ রাসেলের জন্মদিনে চাদপুর স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, জেলা পরিষদ, চাঁদপুর প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন দফরত, ব্যক্তি ও সংগঠন।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply