হাজীগঞ্জে তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী

শাখাওয়াত হোসেন শামীম :

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় গত কয়েক দিন যাবত বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। অতিরিক্ত গরমের কারণে মানুষ খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সকাল থেকেই গরমের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। একটানা বিকেল পর্যন্ত বয়ে চলা গরম আবহাওয়া জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এদিকে অতিরিক্ত গরমের কারণে রসালো ফল তরমুজ,বাঙ্গি,হাতে তৈরি ঠান্ডা শরবত,মাঠা বিক্রি অনেক গুণ বেড়ে গেছে। গরমের কারণে খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান,শীতের সময় প্রচণ্ড শীত আর গরমের সময় প্রচণ্ড গরম মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এ বছর গরম গত বারের চেয়ে অনেকটাই বেশি।

হাজীগঞ্জ পৌর ১০ নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমুড়া মনিনাগের অটোরিকশা চালক সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমার পরিবারে পাঁচ জন সদস্য। অটোরিকশা চালিয়েই তাদের ভরণপোষণ করতে হয়। গত কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরমে অটোরিকশা চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ঈদের আগে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু এখন অতিরিক্ত গরমের কারণে যাত্রীর পরিমাণ কমে গেছে। তাছাড়া যাত্রীরা গরমের কারণে অটোরিকশাতে উঠতে চায় না। এ কারণে আমার ইনকাম কমে গেছে। বর্তমানে সারা দিন খেটে ৩০০-৪০০ টাকার মতো আয় হচ্ছে। এতে পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছে।

হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ এলাকার শরবত ব্যবসায়ী সোহাগ হোসেন বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের জন্য মানুষ আমার শরবতের দোকানে ভিড় করছে। আমি ও আমার সঙ্গে আরো দুই জন মিলে শরবত বিক্রি করছি। আগে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকার শরবত বিক্রি করতাম। তিন-চার দিন হয় ১০০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত শরবত বিক্রি করছি। শরবত বিক্রি করে বর্তমানে লাভই হচ্ছে।’

হাজীগঞ্জ উপজেলার ২ নং বাকিলা ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের শেখ বলেন, ‘আমি পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করছি। এখন খেতে পানি দেওয়া দরকার। তাই গরম সহ্য করেই প্রতিদিন পাটখেতে পানি দিতে হচ্ছে।’

হাজীগঞ্জ বাজারের নির্মাণশ্রমিক আব্দুল মোতাল্লেব রাজু বলেন, ‘তীব্র দাবদাহের কারণে রাজমিস্ত্রিরা কাজে আসছেন না। এ কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। গরমের কারনে কাজ করতে না পেরে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। এভাবে কিছুদিন চলতে থাকলে আমাদের অনাহারে থাকতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা এর সাবেক পরিচালক ডাঃ প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন,গত কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরমের কারণে মানুষ প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই এই গরমে সবারই অতিরিক্ত পানি পান করা,তরল খাবার খাওয়া এবং রোদের মধ্যে চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মাওলা নাঈম বলেন, এই গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। গরমের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তিনি বলেন,এই গরমে ফাস্টফুড-জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা দরকার। প্রয়োজনে ঘন ঘন পানি পান করা এবং প্রয়োজন ছাড়া রোদে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

শেয়ার করুন