হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা হলে কঠোর হতে বাধ্য হব : শিক্ষামন্ত্রী

হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি
: নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালটি প্রথমে খুব কম বেডের ছিলো বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করেছেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে তিনি আমাদেরকে নতুন একটি মেডিকেল কলেজ উপহার দিয়েছেন। আমি নিজেও এ সদর হাসপাতালের উপর একটা আস্থা হারিয়ে ফেলছিলাম। কারণ গত ১৩ বছরেই আমি এর অব্যবস্থাপনার কথাসহ নানা অভিযোগ শুনে আসছিলাম। নিজেও তা উপলব্ধি করেছি। আপনাদের নিজেদের মধ্যেই সমন্বয়হীনতা ছিলো। তবে এখানের এতোকিছুর পরও যে সাফল্য নেই, তা বলবো না। কোভিড- ১৯ চলমান অবস্থায় গত ১৮ মাসে এখানের অনেক ডাক্তার নার্সরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন এবং করছেন। সেজন্য আপনারা অনেকেই ধন্যবাদ বা অভিনন্দন পেতে পারেন। আবার এই সময়ে আপনারা পুরানো কিছু ডাক্তার যারা সিনিয়র, তারা নতুন ১৯ জনদের দিয়ে কাজ সারিয়েছেন, আমি ১০ দিনের রোষ্টার দেখেছি, একজন পুরানো ডাক্তারও নতুন ১৯ ডাক্তারের সাথে ছিলেন না ডিউটিতে। কেন এমনটা করলেন? এটি দুঃখজনক। তবে এখন আশার আলো জেগেছে, একজন যোগ্য তত্ত্বাবধায়ক আপনারা পেয়েছেন। আমি এবং আমরা নতুনের কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করতে পারি। আপনারা তাকে সহযোগিতা করবেন।
১৬ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা হাসপতালের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা বিষয়ে বলেন, আগে এমন তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন, তিনি নিজেই ১১ টায় হাসপাতালে আসতেন। আবার যেতেনও তাড়াতাড়ি। তাহলে যিনি অভিভাবক তার আসা যাওয়া এমন হলে অন্য চিকিৎসকরা অনিয়ম তো করবেনই। মনে রাখবেন, আপনারা স্বাস্থ্যসেবক এবং সরকারি নিয়মনীতির আওতায়। রোগীরা আপানাদের সেবা চায়। ‘আপনারা সবাই ঠিকভাবে কাজ করবেন তা না হলে আপনাকে বদলি হতেই হবে। কিন্তু আপনাকে এখান থেকে এ অভিযোগে সরে যাবেন, সরাতে হবে এমনটা যাতে না ঘটে। রোগিরা এখানের মানুষজন সবাই আপনাদের শ্রদ্ধা করে সম্মান দেয়। তাই তাদের জন্য করবেন এটাই স্বাভাবিক। সরকার বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় যে অবদান রেখে চলেছেন, তা বাইরের দেশগুলোতেও প্রশংসার দাবী রেখেছে। কোভিড- ১৯ মোকাবেলায় আমাদের সরকার বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। তার সুফলও আমরা পাচ্ছি। তিনি বলেন, কোথাও অব্যবস্থাপনা হলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবই। আপনারা অনেকেই আছেন দায়িত্ব পালন ঠিকভাবে পালন করেন কিন্তু অনেকেই আছেন যারা তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন না। জনবল সংকট রয়েছে তা আমি মন্ত্রী মহদয়ের সাথে কথা বলেছি। কিছু ডাক্তারের কারণে গাইনী কনসালটেন্টের থাকতে চায় না তা কিন্তু নয় তাদের চাঁদপুরর থাকতে দেওয়া হয় না। অনেকে হাসপাতালে বসে প্রাইভেট প্রেকটিস করেন। হাসপাতালে সময় কম দিয়ে বাইরে রোগী দেখতে চলে যান। এসব করবেন না। এসকল কাজ বন্ধ করতে হবে।’শিক্ষামন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে কি কি জিনিস দরকার বা জরুরি তা আমি নিজে চেয়ে তাগিদ দিয়েছি, কিন্তু ব্যবস্থাপনার ত্রুটি থাকায় আমি সেভাবে সাড়া পাইনি। এসব আমি নিজেই খুঁটে খুঁটে বের করতে চেষ্টা করেছি, বা জেলা প্রশাসক আমায় জানিয়েছেন। আমার ভাই ডাঃ জে, আর ওয়াদুদ টিপু করোনার শুরু থেকে সার্বক্ষনিক আপনাদের এ হাসপাতালের উপর নজর রেখেছেন। অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন থেকে শুরু করে যা কিছু স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজন, তা তিনি মনিটরিং করছেন। আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। আপনাদের এখানে সমস্যা তৈরি হয় কেন, কারন সমন্বয়হীনতা। এতো সমন্বয়হীনতায় এতোবড় একটা হাসপাতাল চলবে কি করে? শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন অনেক যোগ্য একজন তত্ত্বাবধায়ক এসেছেন। আশা করি, এসব অব্যবস্থাপনা দূর হবে। তিনি বলেন, হাসপাতালের যা কিছু সংকট তা শুনলাম দেখলাম। বিশেষ করে জনবল সংকট। ডাক্তার, নার্স, মেশিনারিজ। এগুলো আশা করি থাকবে না। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।এখন যা কিছু আছে তাই নিয়ে যে সেবাটা পাওয়ার তা দেন। মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে মাসে একবার এই কমিটির সভা নিয়মিত হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরিপূর্ণভাবে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হলে একটি বড় পরিসরে সুন্দর হাসপাতাল পরিষেবা জনগণ পাবে। পর্যায়ক্রমে হাসপাতালের সেবার পরিধি আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে করে আশপাশের জেলার রোগীরা এখানে এসে সেবা নিতে পারেন।’
সভার আরো বক্তব্য রাখেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ,পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ পিপিএম বার, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাক্তার জামাল সালেহ উদ্দিন, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ কে এম মাহবুবুর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ, আরএমও ডাক্তার সুজাউদৌল্লা রুবেল, ডা. সালেহ আহমেদ ও এড.সাউফুউদ্দিন বাবু প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমানসহ আরো ক’ জন। সভায়, সভাপতি শিক্ষামন্ত্রীর অনুমতিক্রমে বিশিষ্ট চিকিৎসক জে, আর ওয়াদুদ টিপুসহ পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদসহ আরো ক’ জনকে নতুন সদস্য করে এ কমিটি ২১ সদস্যের করা হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply