বৃষ্টিতে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা, ৬শ’ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত
কামরুজ্জামান হারুন :
অতি বৃষ্টির কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর রোববার পর্যন্ত জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হয়েছে ৬০০ হেক্টর জমির ফসল। প্রকল্পের বিলগুলোতে রোপা আমন পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া চলাচল করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। সেচ খালগুলো বন্ধ থাকায় পানি টানতে পারছে না।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার ও রোববার মতলব উত্তর উপজেলায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির পানিতে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নিচু এলাকার ফসলি জমি, মৎস্য প্রজেক্ট, বনায়ন প্রকল্প, ঘরবাড়ি’সহ বিভিন্ন স্থানে পানির নিচে চলে যায়।
কৃষকরা জানান, অতিবৃষ্টির কারণে সেচ প্রকল্পের ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশন খাল দীর্ঘদিন থেকে খনন না করার কারণে পুরো বিলে জলবদ্ধতা সৃষ্টি’ হয়েছে। এছাড়াও সেচ প্রকল্পের তালতলী, ঝিনাইয়া, ঠাকুর চর, ঘনিয়ারপাড়, ওটার চর, পাঁচআনী, মাথাভাঙা, হানিরপাড়, লতরদি, নাউরী, আমিয়াপুর, সাদুল্লাপুর, দুর্গাপুর, জীবগাঁও, কালিপুর, মিঠুর কান্দি, ব্রাহ্মণ চক, সুজাতপুর, কৃষ্ণপুর, নয়াকান্দি কমপক্ষে ৪০টি বিল ডুবে গেছে।
ছেংগারচর পৌর সভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আল আমিন সরকার বলেন, আমার ৬০ শতক জমির পাকা ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে পাকা ধান তলিয়ে গেছে। এছাড়া আশপাশের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে ।
গজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ হানিফ দর্জি জানান, দুই দিনে যে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে তাতে চারিদিকে পানি থৈ-থৈ করছে। বৃষ্টির পানি বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার হাজারও পরিবার।
মেঘনা ধনাগোদা পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরকার আলাউদ্দিন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে। অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ এবং কিছু লোক সরকারি খাল ও ক্যানেল দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে বৃষ্টি আসলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতায় আমন ধানের জমি আক্রান্ত হয়েছে ৫০৪ হেক্টর এবং সবজি চাষের জমি আক্রান্ত হয়েছে ৯৫ হেক্টরের মতো।
তিনি বলেন, এতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কেমন হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমন ধান বৃষ্টি নির্ভর হওয়ায় তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে সবজির ক্ষতি হতে পারে।
মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, বৃষ্টিতে কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আমাদের কিছু খাল ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নিষ্কাশন ঠিক মতো হচ্ছে না। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে পাম্পগুলোও ঠিকমতো সেচ কাজ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, আমরা একটি প্রকল্প দিয়েছি। যা প্রক্রিয়াধীন আছে। সেটি হয়ে গেলে খালগুলো পুনঃখননের মধ্য দিয়ে তা প্রশ্বস্ত করা যাবে। আর দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারবো। তাহলেই সেচ প্রকল্পে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজী শরীফুল হাসান জানান, বৃষ্টির কারণে তলিয়ে যাওয়া এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা কে নির্দেশ দিয়েছি।