হাজীগঞ্জে কৃষি জমির মাটি বিক্রির হিড়িক!

শাখাওয়াত হোসেন শামীম
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বিলের আবাদি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসব চলছে। এতে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি। প্রভাবশালীরা আইনের তোয়াক্কা না করেই অবাধে চালাচ্ছে এ মাটির ব্যবসা। এসব মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই কৃষকরা লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।
এতে যেমন ফসল ফলানোর জায়গা কমে যাচ্ছে,তেমনি ঝুঁকিতে পড়ছে ব্রিজ,রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি। ফসলি জমিতে এক্সকাভেটর (ভেকু) বসিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। এসব মাটি ডাম্প ট্রাক ও সড়কে নিষিদ্ধ কাকড়া ট্রাক দিয়ে ক্রেতার কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কৃষিজমির পাশাপাশি গ্রামীণ এবং পাকা রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমিতে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন বিভিন্ন বাড়ি-ভিটে,পুকুর ভরাটে এবং ইটভাটায়। নির্বিচারে চলছে মাটি কাটা। এভাবে মাটি কেটে নেওয়ার কারণে যেমন ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে এলাকার ঘরবাড়ি। তেমনি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া মাটিবোঝাই ভারী ডাম্প ট্রাক চলার কারণে ধুলোবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন,দীর্ঘদিন ধরেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তিন ফসলি কৃষিজমিতে খননযন্ত্র (ভেকু) বসিয়ে মাটি কেটে স্থানীয় বসতবাড়ি ভরাটের কাজ করে আসছেন। অন্যের ফসলি জমির ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য বানানো হয়েছে রাস্তা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বাধা দিলে নানা হুমকি-ধমকি ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
প্যারাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ ও করিম মিয়া বলেন, আমার পাশের জমির মালিক মাটি বিক্রি করেছেন। এই মাটি নেওয়ার জন্য আমাদের ফসলি জমি নষ্ট করেই নেওয়া হচ্ছে ভেকু ও ডাম্প ট্রাক। বাধা দিলে মাটি ব্যবসায়ীরা বলেন,ফসল তো নষ্ট হয়েছে। এখন জমির মাটি বিক্রি করে দেন।
৫ নং সদর ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের কৃষক মো.আনোয়ার হোসেন বলেন,মাটিবোঝাই ভারী ট্রাক চলাচলে রাস্তাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে ট্রাক চলাচলে বাধা দেওয়ায় আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং জোর করেই রাস্তা নষ্ট করে ট্রাক চালানো হচ্ছে।
মাটি ব্যবসায়ী শহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি কবরস্থানে মাটি দিচ্ছি। এক ফসলি জমি কিনে মাটি কাটছি। তিন ফসলি জমি কেউ বিক্রি করতে চাইলে আমি কিনি না। আমি জোর করে কারো জমিতে মাটি কাটি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে অনুমোদন লাগে। এছাড়া ঐ ছোট সড়ক দিয়ে ডাম্প ট্রাক চলাচল করার নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। কৃষিজমি থেকে যারাই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেয়ার করুন