আশিকাটিতে উন্নয়নের স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন দেলোয়ার মাস্টার

সদরের প্রতিটি ইউনিয়নে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে : ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু
আশিক বিন রহিম :
চাঁদপুর সদর উপজেলার ২নং আশিকাটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন পাটোয়ারীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ালেন চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন মাস্টার। ৩ নভেম্বর বুধবার বিকেলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে ইউনিয়ন পরিষদে সকল প্রার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্প্রীতির সভায় তিনি নিজের প্রর্থীতা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন। এর আগে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিল্লাল হোসেন পাটোয়ারি তার বক্তব্যে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এবারের নির্বাচনে তাকে সমর্থন দেয়ার জন্যে চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন মাস্টার এবং ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত হাত পাখা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুদ গাজীকে অনুরোধ জানান। এরপর অনুষ্ঠান চলাকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. দেলোয়ার হোসেন মাস্টার তার দলের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করে উন্নয়নের স্বার্থে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন সমর্থিত হাত পাখা প্রতিকের চেয়ারম্যান প্রার্থী দলের নীতিনির্ধারক কমিটির সাথে আলোচনা করে তার মতামত জানাবেন বলে জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপু। তিনি বলেন, আমরা সবাই চাঁদপুরের মানুষ। আমরা সম্প্রীতি চাই, বিশৃঙ্খলা বা রক্তপাত চাই না। নির্বাচনের মাধ্যমে যেই জনপ্রতিনিধি হোক, তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন। যেহেতু আমাদের সদর আসনের সাংসদ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, সেহতেু জনগণের ভোটে যেই চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচিত হোক, তিনি এলাকার উন্নয়ন করবেন। ডা. দীপু মনি এমপি হিসেবে দলমত নয়, নিজ এলাকার উন্নয়ন বুঝেন। তিনি ইতোমধ্যে চাঁদপুরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন, আগামীতেও করবেন।
ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু বলেন, চাঁদপুরের সদরের প্রতিটি ইউনিয়নে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর নির্বাচনে যে কোন একজন নির্বাচিত হবেন। তাই মারামারি হানাহানি করে লাভ নেই। দিনশেষে আমরা সবাই চাঁদপুরে বসবাস করবো। আজকে দেলোয়ার হোসেন মাস্টার নিজের এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা প্রতীককে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এটি সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমরা আওয়ামী পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান বলেন, আমরা সবাই সৌহার্দ্য বজায় রেখে নির্বাচন করবো। আমরা কেউ সুষ্ঠু ভোটের বিপক্ষে না। মানুষ যাতে ভোটের মুখি হয়, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
বিল্লাল হোসেন মাস্টার তার বক্তব্যে বলেন, নৌকা প্রতীক উন্নয়নের মার্কা। চাঁদপুরের সকল কেক্ষেত্র নৌকার বিজয় অব্যহত রয়েছে। আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন অত্র ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।
আমি কখনোই বিএনপির সাথে দুর্ব্যাহার করিনি। তাদের মামলা হামলা করে হয়রানি করিনি। বিএনপি মেম্বারদের বেশি কাজ দিয়েছি। দলমত নির্বিশেষে ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নে কাজ করেছি। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন মাস্টার নৌকা প্রতীককে সমর্থন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার এই উদারতা ইউনিয়নবাসী মনে রাখবে। আমি তাকে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই।
চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন, আমি এর আগেও এই ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। এবছর বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও এলাকাবাসীর অনুরোধে আমি প্রার্থী হয়েছি। এলাকার ভোটারদের বিশাল একটি অংশ আমার জন্য কাজ করেছে। আজকের এই সম্প্রীতি সমাবেশ এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে সমর্থন জানানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। যদিও এই ঘোষণা আমার জন্য খুবই কষ্ট এবং বেদনাদায়ক। তবুও এলাকাবাসীর স্বার্থে, এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমি এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।
তিনি আরো বলেন, তবে আমার অনুরোধ থাকবে মেম্বারদের নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দল-মত বিবেচনা না করে এলাকার উন্নয়নের ধারা যাতে অব্যাহত থাকে।
ইসলামী আন্দোলন সমর্থীত হাতপাখা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদুর রহমান গাজী বলেন,
আমার দুই শিক্ষকের সাথে আমি প্রার্থী হয়েছি। আমার মূল লক্ষ্য ইসলামের দাওয়াত দেয়া। ভোটের মাধ্যমে মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত দেয়া। মানুষকে বোঝানো, যাতে আপনি যাকে ভোট দিবেন, তিনি ভালো কাজ করলে তার সোয়াব যেমন আপনি পাবেন, খারাপ কাজ করলেও আপনি গোনাহের ভাগীদার হবেন। এ বছর পীর সাহেব চরমোনাই চাঁদপুরের সকল ইউনিয়নে প্রার্থী দিয়েছেন। নির্বাচনে সবাই সুষ্ঠুভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন। কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃস্টি না করে। মানুষের ভোটের হক নষ্ট না করে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর সরকারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী এরশাদ মিয়াজী, সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী, সাংগঠনিক সম্পাদক আইউব আলী বেপারী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজ খান বাদল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সামাদ টুনু, সহ প্রচার সম্পাদক মনির হোসেন গাজী, জেলা কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আহমেদ জিতু, আশিকাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান সাজু খান, আশিকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম পাটওয়ারী বাবুল, আশিকাটি ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক সেলিম মাল, ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন বাবলু, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ কাতার কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন খান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য বাদশা খান, সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম খান, নাজিম উদ্দিন মোঃ জিলান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন গাজী, সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন মাষ্টার, বিল্লাল হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাল, মাহবুব গাজী, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান খান, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম মজুমদারসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থকগন এবং বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী সমর্থকগন উপস্থিত ছিলেন।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply