এ এক অন্যরকম সাক্ষাৎকার
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাকরি প্রার্থী অথবা কোন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার সাক্ষাৎকারসহ বিভিন্ন সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা শোনা যায়। কিন্তু ভিক্ষুক পুনর্বাসনে খোদ একজন জেলা প্রশাসক সাক্ষাৎকার নেয়ার কথাটি শোনা যায় না। কিন্তু সেই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান করলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক।
ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসূচির আওতায় সরকার সমাজসেবার মাধ্যমে প্রায় প্রতি বছরই অর্থ বরাদ্দ রাখে। কিন্তু সে বরাদ্দ নানা প্রতিবন্ধকতায় আটকে যায়। নয়তো দীর্ঘ সূত্রিতায় পড়ে। নয়তো সমাজসেবা অফিস নিজেরাই দিয়ে দিতেন জেলা প্রশাসকদের নির্দেশক্রমে। যা আড়ালেই থেকে যেতো। কিন্তু খোদ জেলা প্রশাসক সাক্ষাতকার নিয়ে ভিক্ষুক পুনর্বাচন ব্যাপারটি ভিন্নতর। হ্যা, এই ভিন্নতর ও স্বচ্ছ কাজটি সম্পাদন করলেন চাঁদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। এ পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি ভিক্ষুকদের ডেকে আনলেন অফিসে। শুধু তাই নয়, একেবারে নিজের কামরায়। হতবিহ্বল এ শ্রেণির মানুষগুলো বুঝতেই পারেনি তারা জেলা প্রশাসকের কক্ষ পর্যন্ত দাঁড়াতে পারবে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় সাক্ষাতকার শরু হয়।
জেলা সমাজসেবা উপ-পরিচালক রজত শুভ্র সরকার জানালেন, জেলা প্রশাসক এক এক করে ভিক্ষুককে ডাকলেন এবং তাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনলেন। তারা কে কি করবেন তা জেনে নিলেন। তাদের কেউবা বললেন কাপড়ের দোকান দেবেন, কেউবা দোকান, কেউ ভ্যান, গাভি পালন করবেন বলে জানালেন। পরে তিনি তাদের চাহিদার কথা জেনে বিদায় দেন এবং খুব শীঘ্রই তাদের পুনর্বাসন করার জন্য এ সংক্রান্ত কমিটিকে নির্দেশ দেন। তিনি জানান, এটি একটি পাইলট প্রকল্পের মতো নেয়া হয়েছে সদর উপজেলা এবং পৌরসভা অঞ্চলে। আমাদের সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে পুনর্বাসনে ১৭ লাখ টাকা আমাদের হাতে আছে। যাছাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আমরা পরবর্তীতে অন্য উপজেলাগুলোতে দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
ভিক্ষুকদের সাক্ষাতশেষে জেলা প্রশাসক তাদের খালি হাতে ফেরাননি। তিনি তাদের হাতে ১০ কেজি চাল, তেল, চিনি, লবণ, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের একটি প্যাকেট তাদের প্রত্যেকের হাতে তুলে দেন।
এদিকে উত্তর শ্রীরামদী এলাকার ভিক্ষুক মো. লোকমান হোসেন জানান, ২০০৭ সালে তিনি একটি দুর্ঘটনায় পা হারান। তারপর থেকে ভিক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে ভিক্ষুকের খাতায় নাম লেখা হয়ে যায় তার। দ্বারে দ্বারে ঘুরে তিনি ভিক্ষা করেন।
লোকমান জানান, আজ ম্যাডাম আমার সাক্ষাৎ নিয়েছে। তার কাছে দাবি ছিল- আমাকে একটি ওজন মাপার যন্ত্র এবং কিছু কসমেটিক্সসহ মালামাল কিনে দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য। আমি এগুলো পেলে চাঁদপুর বড়স্টেশন এলাকায় বসে ব্যবসা করবো। তিনি জানান, আমার কথা তিনি শুনেছেন এবং এ ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আশ্বাস দেন।
লোকমান বলেন, ডিসি ম্যাডাম আমগো সবাইরেই বলছেন- যা যা আমরা চাইছি তা তিনি করে দিবেন। আমরা খুব খুশি হইছি ডিসি ম্যাডামের প্রতি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, গণহারে কোন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে সেটি আসলে বেশি দিন তাদের রক্ষা করা যায় না। তারা আবারও পুরনো পেশায় ফিরে যায়। তাই যাচাই-বাছাই করে আমি সত্যিকারার্থেই যারা পেশাদার ভিক্ষুক ছিল কিন্তু এখন সরকারের সহযোগিতা পেলে তারা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেবে- এমন প্রতিশ্রুতি নিয়েই তাদেরকে পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যাদেরকে পুনর্বাসন করার জন্য নির্বাচন করেছি তাদের একদিনের একটি প্রশিক্ষণ আমরা নেব। আর এই প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তাদের বুঝানো হবে কিভাবে তারা এই সহযোগিতা পেয়ে নিজের পায়ে দাড়াবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, বর্তমান সরকার ভিক্ষুক পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন খাতেই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যথেষ্ট করে যাচ্ছে। চাঁদপুরে যে ভিক্ষকরা আছে তাদের এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই যদি পুনর্বাসন করা যায় তাহলে এখানে ভিক্ষাবৃত্তি কমানো যাবে। আমি সেই চেষ্টাই করছি।