ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব এবং একটি নির্বাচন

রতন কুমার মজুমদার ::
কোন রকম সহিংসতা ছাড়াই এবার চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয়েছে। এবারের চাঁদপুর সদর উপজেলার ইউপি নির্বাচনের একটি বহুমাত্রিকতা রয়েছে বলে আমার পর্যবেক্ষণে মনে হয়। স্থানীয় অনেকগুলো নির্বাচনই আমি দেখেছি। কিন্তু এবারের নির্বাচনটি নানাকারণে ভিন্নতা ছিল।
শুরুতে আসি প্রার্থি নির্বাচন। এবার কেন্দ্র থেকে এককভাবে প্রার্থি নির্বাচন করে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে। প্রার্থী নির্বাচনে কেন্দ্র এবার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। যাদেরকে প্রার্থী করা হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই রাজনৈতিকভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। দুই জন ছাড়া বাকী সবাই পুরোনো প্রার্থী। যার জন্য প্রার্থীরা ছিল সুপরিচিত। দক্ষতার সাথে প্রার্থী নির্বাচন করার কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে কম।
এবারের নির্বাচনে যে জিনিষটি সবার দৃষ্টিতে এসেছে সেটা হলো অতীতের মত এবারও প্রার্থীদের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জনাব জে আর ওয়াদুদ টিপু নমিনেশ প্রাপ্তির প্রথম দিন থেকেই চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জে আর ওয়াদুদ টিপু অত্যন্ত কৌশলী এবং বিচক্ষনতার সাথে টোটাল নির্বাচনটি পরিচালনা করে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগ , যুব লীগ , স্বেচ্ছা সেবকলীগ , ছাত্রলীগকে একত্রিত করে যেভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন এক কথায় অসাধারণ।
প্রথমত : তিনি যে কাজটি করেছেন সেটা হলো দলীয় সকল প্রার্থীকে নিয়ে বসে নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ করেছেন। দলের যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে আওয়ামী লীগ করতে হলে দলের বিপরীতে যাওয়া যাবে না। দল এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি আস্থা রেখে সকলে মিলে নৌকা বিজয়ী করতে কাজ করতে হবে। তিনি যেখানে নমনীয় হওয়া প্রয়োজন সেখানে নমনীয় হয়েছেন যেখানে কঠোর হওয়া প্রয়োজন সেখানে কঠোরতা দেখিয়েছেন। এতে ফলও পেয়েছেন। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নিজেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সবে এসে বঙ্গবন্ধু কণ্যা যাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করেছেন। আর যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নমিনেশন পত্র জমা দিয়েছেন তারা জনাব জে আর ওয়াদু এর ব্যক্তিত্বের কাছে হার মেনে নমিনেশন পত্র প্রত্যাহার করেছেন। শুধু তাই নয় বিদ্রোহী প্রার্থীরা জনাব জে আর ওয়াদুদকে কথা দিয়েছেন তারা দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে জয় ছিনিয়ে আনবেন। এবং করেছেনও তাই। যার ফলশ্রুতিতে দুটি ইউনিয়নে ( তরপুচন্ডি এবং রামপুর) নৌকার বিপরীতে কোন প্রার্থী ছিল না। তারা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বিজয়ী হয়। তারা ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান।
দ্বিতীয়ত: জনাব জে আর ওয়াদুদ টিপু সকল সংগঠনকে এক যায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। যুবলীগ , স্বেচ্ছা সেবকলীগ ও ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রচার প্রচারনায় সকলকে একত্রে দেখা গেছে। প্রতিটি ইউনিয়নে তিনি সভা সমাবেশ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন নৌকার প্রশ্নে সবাই এক এবং অভিন্ন।
তৃতীয়ত : মেম্বারদের ক্ষেত্রে কিছুটা বিদ্রোহ ছিল । কিন্তু নেতৃত্ব যে মেসেজটি তাদেরকে দিয়েছে সেটা হলো কোন সহিংসতা করা যাবে না। যার ফলে মেম্বারদের মধ্যেও তেমন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল না। অতীতে আমরা দেখেছি সাধারণ ইউনিয়নত পরিষদের নির্বাচনে মেম্বারদের মধ্যে সহিংসতা বেশী হয়। কিন্তু এবার জনাব জে আর ওয়াদুদ এর ক্যারিশমাটিক গুণে সেটা হয়নি বল্লেই চলে।
চতুর্থত: নির্বাচনের দিন যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। ছিল সক্রিয়। ভোটারদের নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা রেখেছে। শৃংখলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তারা ছিল অগ্রগন্য। জনাব জে আর ওয়াদুদ টিপুর নির্দেশে তারা প্রশাসনকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করেছে।
যার ফলে চাঁদপুর সদর উজেলার ৯টি ইউনিয়নে এবার অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং সুশৃংখল নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কোন রকম সহিংসতা হয়নি বল্লেই চলে। যোগ্য ব্যক্তিরাই এবার নির্বাচিত হয়েছেন। আমি অতীতেও বলেছি ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। আর সেই ঐক্যটি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জনাব জে আর ওয়াদুদ টিপু। জনাব জে আর ওয়াদুদ কে অভিবাদন। জে আর ওয়াদুদ একজ নির্বাচন বোদ্ধা। আগামী দিনগুলোতেও আমরা এমন নির্বাচন চাই।
লেখক : রতন কুমার মজুমদার, অধ্যক্ষ, পুরাণ বাজার ডিগ্রি কলেজ

শেয়ার করুন

Leave a Reply