কবিতার কথামালায় অ-প্রেমের যাত্রা কথন

—-সাঈদা আক্তার 
” কবিতা ” তিন অক্ষরের একটি শব্দ। আসলেই কী শব্দ!  আমার মনে হয় না। কবিতা সাহিত্যের এমন একটি শাখা, যে শাখায় ঋতুর বৈচিত্র্যর মতো সবকিছু এক সাথে ছোঁয়া যায়, ধরা দেয়। কবিতা ই এমন একটা মাধ্যম যা আপনাকে মুহূর্তে তুলে নিতে পারে তাঁর অনুভবের সীমান্তে। অনুভব, অনুভূতির সবচেয়ে স্পর্শৃময় জায়গা কবিতা।
সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যম হিসেবে গল্প, উপন্যাসের পাতাগুলো অনেক সময় ভারী মনে হয়। কিন্তু কবিতা অদ্ভুত ভাবে মূহুর্তে আটকে রাখতে পারে। পাঠক নিজেকে অনুভব করতে পারে নিজের অনুভূতিতে।
” অ-প্রেমের স্বীকারোক্তি ” নামটাতে আটকে গেলাম প্রথমত। প্রেম শ্বাশত। আরেকটু বললে মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের অপর নাম প্রেম। প্রেম শুধু মানুষের সাথে নয়। প্রেমের মাধ্যম হিসেবে প্রকৃতি, সৃষ্টিকর্তা, ছোট ছোট অনুভব সবকিছুই হতে পারে। প্রেমের বিপরীতে যে অ- প্রেম তার অনুভব টুকুনও আলাদা সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত।
হীরামনি তাঁর এ-ই বইয়ের প্রতিটি কবিতায় যে অনুভব টুকু তুলে এনেছেন তা ছুঁয়ে যাবে পাঠকে ” শুনেছি ভালোবাসা মিলনে মলিন হয়, বিরহে উজ্জ্বল, এমন ঔজ্জ্বল্য চাই নি কোনদিন। কথা গুলো মনের।  আসলেও তো তাই, নয় কী!  এটাই কবির প্রথম কবিতার কয়েকটি পংক্তি।
“দুঃখ ” বিষাদময় এক শব্দ। কিন্তু কিছু চাওয়া, না পাওয়াতে অদ্ভুত সুন্দর। এ-ই সুন্দর মানুষ বহন করে তাঁর সঙ্গে আজীবন, গভীর মায়ায়।
কবিতা শুধু কবির একার ভাবনা নয়। কবিতা ততক্ষণ কবির যতক্ষন  পাঠক তা নিজের ভাবনার সাথে মিলিয়ে তুলে নেয় উপলব্ধিতে।  এ-ই বইটির বিশেষত্ব এটি বাংলার সাথে ইংরেজিতে অনুদিত। তাও কবি নিজেই সেই কাজটি করেছেন। এতে আসলে বইটির সুগন্ধি আবৃত থেকে গেছে স্পর্শের বাইরে গিয়ে।
দ্বিতীয় বিষয়টি এটি সহজ ভাষায় লিখা। কথাটা অন্য রকম শোনালেও আসল বিষয় হচ্ছে এর কথা গুলো আপনি আপনার মতো করে ছুঁয়ে নিতে পারবেন। বইয়ের একেকটি কবিতা একেকটা চিত্র। পড়তে গেলেই চোখে ভেসে আসবে ছবির কথামালা।
সময়কে বিভিন্ন প্রহরে ধরা হয়েছে এখানে সূক্ষ বুননে। কখনো শহরের মেকি, আর আভিজাত্যপূর্ণ অবকাশে আবার পেঁয়াজকলি অথবা কাঁচা আমের শুদ্ধ আর মেঠো গন্ধে।
বইয়ের উৎসর্গে রয়েছে চমৎকার একটা বিষয়।  এটি আপনাকে উৎসর্গ করা হয়েছে। হ্যা,  কথাটি সত্যি। বইটি যিনি পড়বেন, তাঁকেই তিনি দিয়ে দিয়েছেন দাবী না রেখেই।
এবার হোক কিছু কথা লেখককে নিয়ে। তিনি একজন আয়নার মানুষ। কঠিন কথা নয়। ভিতরে বাইরে একই মানুষ। মুখোশ বিহীন মানুষ। তাই হয়তো তাঁর লিখাগুলোও আগল বিহীন ঘুড়ির মতো আকাশের সবটা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আলগোছে বিলীন করে দিতে পারে।
শেষ করি তাঁর ভাযায়,
তোমাকে ঠিক ততখানিই ঘৃণা করি,
যতখানি ভালোবেসেছিলাম।
ভালোবাসা মাপার পাল্লা পাও নি,
ঘৃণা মাপার পাল্লা পাবে কোথায়?
মারুফা সুলতানা খান হীরামনি। ব্যক্তিগত জীবনে মাঠ পর্যায়ে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি বান্দরবান সদর  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত। কবিতা ছাড়াও তিনি গল্প,  কথা সাহিত্যসহ নানরকম সৃষ্টিশীল তথা সৃজনশীল  লিখা তিনি লিখেন। যা স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হয়েছে।   এটি তাঁর প্রথম  প্রকাশিত গ্রন্থ।
শেয়ার করুন