ঘৃণিত সেলিম চেয়ারম্যানের সেই জায়গাতেই বাড়ি ভাড়া নিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

ফের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাড়িভাড়া চাওয়ার কথা বললেও তিন দিনেই পাল্টে গেল ভিসির সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক :
অবশেষে দেশব্যাপী আলোচিত সমালোচিত, দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ঘৃণিত, অবৈধ সম্পদ অর্জনে মামলার আসামী সেই বালু খোকো, সেলিম চেয়ারম্যানের কাছ থেকেই চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনে বাড়ি ভাড়া নিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, যে জায়গাটি নিয়ে সেলিম খান গংরা ৩ শ ৫০ কোটি টাকা বেশি দাম পাওয়ার জন্য মিথ্যা রীট করলেন, আর তার জন্য সেলিম খানসহ ৩ জনের কোটি টাকা জরিমানাও করলো হাইকোর্ট, ভূমি অধিগ্রহণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে গেছে, ওই ৬২ একর ভূমি অঞ্চলেই দ্বিতল ভবনটি ভাড়া নেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাতেই বাড়িভাড়া সম্পর্কীয় চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে বলে জানালেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার। এই সংবাদ মঙ্গবার বিভিন্ন সূত্র থেকে চাঁদপুরে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে ছিঃ ছিঃ পড়ে যায়। খোদ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কৃত সেলিম খান থেকে এমন একটা সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাড়ি ভাড়া নেয়ার কারনে জেলা ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, বিব্রতবোধ করছেন। সাধারন মানুষ যারা ব্যাপারটি শুনেছেন, তারাও বলাবলি করছেন – এও কী সম্ভব? উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় চাঁদপুর মডেল ইউনিয়নের এই চেয়ারম্যানের ৩ সপ্তাহের মধ্যে নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু সে হাজির হয়নি। যার সময়ও শেষ হয়ে যায় দিন কয়েক আগে। নিন্ম আদালতের পিপির ( ঢাকা কোর্ট ) সাথে কথা হলে তিনি জানান, এমটা হলে, সেলিম খানের বিরুদ্ধে এখন গ্রেফতারি পরোয়ানা আর গ্রেফতার বিষয়টা সামনে।
আর এ পরিস্থিতিতেই সেলিম খানের কাছ থেকেই এবং বিতর্কিত স্থানেই ভাড়ায় ক্যাম্পাস চালানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মেজর মোঃ আবদুল হাইয়ের সাথে মঙ্গলবার দুপুরে তার মুঠোফোনে আলাপ করলে তিনি জানান, গত মাসে আমরা বাড়ি ভাড়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করি। ২৫ আগষ্ট পর্যন্ত বাড়িওয়ালাদের সাথে ছিলো আমাদের সাথে যোগাযোগের শেষ ডেট। ঐ তারিখ পর্যন্ত আমরা ২ জন বাড়িওয়ালার আবেদন । তার মধ্যে একটি ছিলো সেলিম খানের। সে আমাদের প্রয়োজনমত ৫ হাজার ৫ শ বর্গফুট তার দ্বিতল বাড়ি মাত্র ১০ টাকা বর্গফুটে মূল্য চেয়েছে এবং ২ টার মধ্যে সেটিই ছিলো সর্বনিম্ন। অন্যটি ২০ টাকা ছিলো। তাই কমদামে এটাই আমরা নিয়ে নিয়েছি। এতো বিতর্কিত একটা জায়গা এবং তার মালিক – এতো কিছু জেনেও আপনারা লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে মেঘনার সন্ন্নিকটে ক্যাম্পাস ভাড়া নিচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রেজিষ্ট্রার বলেন, আমরা জানতে পেরেছি আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাড়ি ভাড়ায় যেতে হবে, না হলে এই সেশনে ছাত্র ভর্তি করানে যাবে না, তাই ঐ সেলিম খানের তৈরি বাড়িটা আমরা সস্তায় নিয়ে নিলাম। আর আমাদের তেমন টাকাও নেই। তিনি জানান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। ১৯৪ কোটি টাকা ছাড়ও হয়নি। রেজিষ্ট্রার উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, চাঁদপুরের মানুষ কী চান না, চাঁদপুর ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি হোক? তার দৃঢ় উচ্চারন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্জুরি কমিশনের সদস্যরা মিলেই সব করা হয়েছে। মূল শহর রেখে, আলোচিত সেলিম খানের সেই বাড়ি এবং বিতর্কিত ঐ জায়গায় কেন ভাড়ায় ক্যাম্পাস বা বাড়ি নিতে হবে – এই উত্তর তিনি এড়িয়ে যান।
এদিকে গত তিনদিন আগেও এই বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিসি ড. নাছিম আখতারের সাথে কথা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, পত্রিকায় ফের বিজ্ঞাপন দিয়ে বাড়িভাড়া চাওয়া হবে। কারন তিনি সেই বিতর্কিত জায়গা ও আলোচিত ভূমি যার অধিগ্রহণই হয়নি, তার কাছে যেতে চান না। আর সে বর্গফুট ১০ টাকা হারে দিয়েছে। কিন্তু সরকারের রেটই তো ১৫ টাকার উপরে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে আবারও ফোন দিলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
এদিকে, সেলিম খানের বিতর্কিত এই জায়গা যেটি মেঘনা গ্রাস করা সময়ের ব্যাপার মাত্র এবং যার দুর্নীতি ও বিতর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে পুরো দেশে আলোচনা সেখানে হঠাৎ করে বিশ্ব বিদ্যালয়ের এ ধরনের সিদ্ধান্তের পেছনে কী সব কারন কাজ করছে, কোথা থেকে কলকাঠি নাড়া হচ্ছে – এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় এবং মধ্যম সারির বেশ কয়েক জন নেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, যেখানে দেশের উচ্চ আদালত তাকে ঘৃনিত ও ফ্রট বলে আখ্যায়িত করেছে, জরিমানা করেছে, দুদকে মামলা, স্থানটা নিয়েই সমালোচনার শেষ নাই, জায়গা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও শেষ হয়ে গেলো, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সিদ্ধান্তের পেছনে আছে অসৎ উদ্দেশ্য। তারা বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চাঁদপুরের অবশ্যই হবে, তবে এই জায়গায় না। এটা মেঘনা যে কোন মুহুর্তেই গ্রাস করে তলিয়ে নেবে। সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে যাবে। তারা বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বা অস্থায়ী ভবন ভাড়া নেয়ার জন্য অনেক বাড়ি আছে। আসলে তাদের আগেরই এসব প্লান করা। যেগুলো সম্পাদন হওয়া মানে সরকারকে বিতর্কে ফেলা।

শেয়ার করুন