চাঁদপুরে দু’ সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বালুখেকো সেই চেয়ারম্যানের
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় ৩ মাস জেল খেটে অস্থায়ী জামিনে মুক্তি পাওয়া, উচ্চ আদালতের কাছে ঘৃনীত, বালুখেকো নামে দেশব্যাপী পরিচিত এবং আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিস্কৃত ল²ীপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান আবার তার পুরানো নোংরামি শুরু করে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের হয়রানি করার জন্য নতুন ফাঁদ পেতেছেন। ১ বছর আগে চাঁদপুরের ২ সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তার হয়ে তার ম্যানেজার নামীয় জনৈক আবদুল কাদিরকে দিয়ে করানো একটি মানহানি মামলা যেটি চাঁদপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় খারিজ করে দেয়, সেটি ১ বছর পর রিভিও চেয়ে তথা ঐ রায়টি যথযথ হয়নি এবং বিচারকের মনগড়া বলে চাঁদপুর জজ আদলতে আবেদন করে। তার এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ২ মে শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
রিভিশন মামলায় বাদীপক্ষ বলছে, ২২ মার্চ (২০২২) চাঁদপুর প্রতিদিনে প্রকাশিত ‘চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত নৌযান জব্দ ও জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এ সংবাদের ভেতরে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের নাম উল্লেখ করে সেলিম খানের নামে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য নির্ভর মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই সংবাদে ‘২০১৫ সাল থেকে পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে আসছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের একটি চক্র’। নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘আদালত তাদেরকে কয়েকটি নির্দিষ্ট মৌজায় ড্রেজিংয়ের অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু সেই মৌজাগুলো কোথায় তার কোন ম্যাপও তাদের কাছে নেই’।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে লেখা হয়, ‘তাছাড়া আদালত তাদেরকে বালু বিক্রির কোন আদেশ দেননি।’ ‘চাঁদপুর জেলার নদী অঞ্চল থেকে গত কয়েক বছর ধরে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে’। কিন্তু সেলিম খান আদালতের নির্দেশ মোতাবেক নিয়মতান্ত্রিকভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন বলে রিভিশন মোকদ্দমায় দাবি করা হয়। সংবাদে উল্লেখিত এসব বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করে সেলিম খানের ৫০ কোটি টাকার মানহানি করার অভিযোগ আনা হয় ওই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।
যদিও সেলিম খানের হয়ে বাদী আবদুল কাদিরের করা মামলাটি খারিজ হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই বালু উত্তোলন বন্ধে গেলো বছরের ২৯ মে রাষ্ট্রপক্ষের চুড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ । ঐ রায়ে বলা হয় সেলিম খান আর পদ্মা মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন করতে পারবেন না। যে রায় আজও বহাল রয়েছে। শুধু তাই নয়, আদালত এযাবৎ তার দ্বারা গত ৬/৭ বছরে কি পরিমান বালু উত্তোলন হয়েছে তার হিসাব, কারা কারা এর সাথে জড়িত তাদের নাম এবং বালুর হিসাব নেয়ার জন্য প্রশাসন কমিটি করার জন্য নির্দেশ দেয়।
এছাড়া উচ্চ আদালত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভ‚মি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত রিট মামলার আরেক ভিন্ন রায়ে সেলিম খান, আবদুল কাদের খান সহ তিনজনকে এক কোটি টাকা জরিমানা করে এবং যেটি তারা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়।
এ বিষয়ে মামলার বিবাদী চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক দু’ বারের সভাপতি ও চাঁদপুর প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং জাতীয় পত্রিকা সমকালের চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত নৌযান জব্দ ও জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে নদী রক্ষা কমিশন। আমরা নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর বক্তব্য এবং নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সংবাদটি করেছি । তাছাড়া অন্যান্য যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলোও ইতোমধ্যেই মহামান্য হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, সংশ্লিষট সকল দপ্তর, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন রাজনীতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন সহ সবাই জানে। এছাড়া দেশের সকল জাতীয় ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং স্থানীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত এবং তা আদালাত কর্তৃক প্রমাণিত। মূলত ইলিশসহ সরকারি সম্পদ রক্ষায় অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভ‚মি অধিগ্রহন নিয়ে অর্থ লোপাটের চেষ্টার বিরুদ্ধে যারা সংবাদ করছে তাদেরকে দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা এটি। তবে তারা মামলা-হামলা করে সত্য প্রকাশ থেকে আমাদের বিরত রাখতে পারবে না। যতো রকম ভয়ভীতিই দেখানো হোক, এতে বিচলিত নই আমরা। তিনি বলেন, ১ বছর পরে এসে এমন রিভিও চাওয়া, যা দিবালোকের মতো সত্য তাকে বিচারকের মনগড়া রায় বলা এটা আদালতকেই খাটো মনে করা অবনাননা বলে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, আইন সবার জন্য সমান এবং আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনী মোকাবেলা করবো পাশাপাশি আমরা আমাদের লিখনী চালিয়ে যাবো। দেশের ও চাঁদপুরের স্বার্থ রক্ষায় আমি যে কাজ করছি, আশা করি এর সাথে আমার সহকর্মিরা আছেন, আছেন দেশ প্রেমিক চাঁদপুরবাসী।
জানা গেছে, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে গত কয়েক বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে শত শত ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী ও ইব্রাহীম রনির বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ এনে সেলিম খানের পক্ষে ২০২২ সালের ২২ মার্চ আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। তার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করেন সেলিম খানের মালিকানাধীন সেলিম এন্টারপ্রাইজের পক্ষে ম্যানেজার আব্দুল কাদির। এমনকি যার মানহানির অভিযোগ করা হয়েছে মামলায় সেই সেলিম খানই আছেন স্বাক্ষী হিসেবে।
এদিকে মামলার দায়ের পর নালিশর সত্যতা না পাওয়ায় আদালত ২০৩ ধারায় মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। ২২ মার্চ এ খারিজ আদেশ দেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামাল হোসাইন।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী দীর্ঘ ৩২ বছর সততা ও নিষ্ঠার সাথে সাংবাদিকতা করে আসছেন। দৈনিক সংবাদ থেকে শুরু করে দৈনিক আজকের কাগজ, মুক্তকণ্ঠ, চাঁদপুর দর্পণে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে সাংবাদিক ইব্রাহীম রনি গত দেড়দশকের বেশি সময় ধরে সততা, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সাথে সাংবাদিকতা করে আসছেন। তিনিও দেশের প্রথম সারির জাতীয় সংবাদ মাধ্যম ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করে আসছেন।