চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচন : এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর বহর বড়

ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী :
আসছে দ্বিতীয় জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চাঁদপুরেও বেশ আলোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। যদিও সরকার দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মি সমর্থকদের মধ্যেই এই আলোচনা এখন পর্যন্ত। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত বাম ঘরনার কোন দলের মধ্য এ নিয়ে মোটেও মাতামাতি নেই। সরকার দল আওয়ামীলীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে লড়ার জন্য দলীয় প্রার্থী হওয়ার বহর অনেকটাই বড়। দিনাদিনদিনই ২/১ জনের নাম নতুন করে যোগ হচ্ছে। এদের মধ্যে দলের নতুন, পুরনো এবং সাবেকরা রয়েছেন। এদের মধ্যে অঙ্গ সংগঠন এখন পর্যন্ত যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাও আছেন। আবার শুনা যাচ্ছে সাবেক এক এমপির কথাও। যিনি দীর্ঘবছর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া দল ছাড়া একজন শনিবার এক ব্যবসায়ী শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে সম্ভাব্য প্রার্থীতা ঘোষনা দেন। আরো একজন প্রার্থীতা ঘোষনা দিয়েছেন। তিনি হলেন জেলা মুক্তি যোদ্ধা সংসদের কমান্ডার যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদ।
কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন এ নিয়ে অবশ্য চুলছেরা আলোচনা জেলা শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও। ইতিমধ্যে আগামী জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীতা চাইবেন বলে মুখ খুলেছেন বা যাদের নিয়ে কথা, তাদের মধ্যে রয়েছেন – জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমান প্রশাসক ও জেলা আওয়মী লীগের সাবেক সহসভাপতি ওচমান গনি পাটওয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার ২ বারের সফল মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি ও চাঁদপুর -৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক ভূইয়া, সিনিয়র সহসভাপতি ইউসুফ গাজী ও সহসভাপতি মন্জুর আলম মন্জু, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান আখন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন ( এসডু) পাটওয়ারী ও মজিবুর রহমান ভূইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগ সহসম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাহীন পাটওয়ারী এবং একই সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জাফর ইকবাল মুন্না।
আর গতকালের শনিবারে স্বতন্ত্র হয়ে প্রার্থীতা ঘোষনা দিলেন জাকির হোসেন প্রধানীয়া। তিনি ঢাকায় এবং হাজীগন্জে ব্যবসার সাথে জড়িত।
মজার ব্যাপার হচ্ছে- চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনের আলোচনা আসলেই গতবারের নির্বাচনের কথা প্রাধান্য পায়। কারন, সেবছর তথা ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে চাঁদপুরে কোন একক দলীয় প্রার্থীই ছিলো না। দলীয় প্রার্থী যাঁকে দেয়া হয় তিনি জেলা পরিষদের প্রথম প্রশাসক মুক্তিযুদ্ধের ২ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা লেঃ কর্ণেল ( অবঃ) আবু ওচমান চৌধুরী। কিন্তু তিনি ভোটার জটিলতায় পড়ে মনোনয়নপত্রই সাবমিট করতে পারেননি। যদিও ঐ নির্বাচনে ১০ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এবং এরমধ্যে ৪ জন মাঠে ছিলেন। এই চারজনের জন্য সেসময়ে সকল আসনের এমপি, মন্ত্রী, প্রার্থীদের অনড় ভাব এবং স্থানীয় রাজনৈতিক চরম কোন্দলের কারনে পরবর্তীতে কাউকেই দ্বিতীয়বার আর দলীয় প্রার্থী ঘোষনা দেয়া হয়নি কেন্দ্র থেকে । তখন একই তথা আওয়ামী লীগের সবাই ছিলেন স্বতন্ত্র কিন্তু দলীয় পরিচয় ছিলো আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে ৩২৫ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ওচমান গনি পাটওয়ারী। যাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি থেকে নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই বাদ দেয়া হয়েছিলো। যদিও তিনি ৪০ বছরের উপর আওয়ামী পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত এবং এখনো জেলা কমিটিতে না থাকলেও তিনি আওয়ামী লীগের সকল আচার অনুষ্ঠানেই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত। ওই সময় দেখা গেলো, একমাত্র একটি আসনের এমপি ছাড়া আর সব এমপিরাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাপোর্ট করে যান তাকে।
তবে গত বছর দলীয় প্রতীক নৌকা ছিলো না। ফলে স্বতন্ত্র হিসাবে তার বৈতরণি পার হতে বেগ পেতে হয়নি।
কিন্তু এবার প্রার্থীর এতো বড় বহরে কি হবে, কাকে নৌকা দেয়া হবে, এ নিয়ে বেশ আলোচনা পার্টি শিবিরে। হেভি ওয়েট প্রার্থী তথা সাবেক সভাপতি ও এমপি, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, দুই সহসভাপতি, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বর্তমান প্রশাসক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী তালিকায় এখানে মূল প্রার্থী কে হবেন, তা এখন জটিল সমীকরণে! দফায় দফায় এরাসব ঢাকায় যাচ্ছেন।
তবে এদের মুখের একটা কথাই প্রায় সবার। আর তা হচ্ছে, জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে দেবেন দলীয় মনোনয়ন, আমরা তাকেই সমর্থন করবো। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার ইচ্ছা তো থাকবেই নির্বাচন করার। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতি করি এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে লালন করে । দলীয় প্রতীক বঙ্গবন্ধু কন্যা যাকে দেন, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের নেত্রী অনেক বিচক্ষণ, অনেক। অবশ্যই যোগ্য ব্যক্তিকে তিনি বেছে নেবেন। গনতান্ত্রিক অধিকার সবার আছে মনোনয়ন চাইবার। তাই চাইবে। জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, আমি আওয়ামী পরিবারে যুক্ত রাজনীতি শেখা থেকেই। চার দশকেরও উপরে। গত ৬ বছর ধরে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রশাসক হিসাবে জেলায় অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। গতবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছি কোন কোন্দল সৃষ্টি করে নয়। আমাদের দলীয় প্রার্থী ছিলো না। এবার যে ক’ জনই মনোনয়ন চাইছেন তাদের মধ্যে দল একজনকেই মনোনয় দেবে। আমি আশা করি, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমায় নিরাশ করবেন না। যাক শেষ পর্যন্ত দেখি কী হয়, নেত্রী উপরই ভরসা রাখছি। আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৫ দশক ধরে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ করে আসছি। বাবা সর্বজন শ্রদ্ধেয় মরহুম আবদুল করিম পাটওয়ারী। তিনি সাংসদ ও পৌর চেয়ারম্যান হয়ে কতোটা নিরলস সেবা দিয়েছেন, সেটি সবাই জানে। দলের জন্য অনেক ত্যাগ আমার আছে। আমার পরিবারের আছে। নমিনেশন চাইবো, নেত্রী দিলে করবো, না হয় করবো না। এটাই বাস্তবতা।
এদিকে দলের একটি অংশ এখনো চায় এখানে যেহেতু এতো প্রার্থী দলের, সেহেতু গত বছরের মতো স্বতন্ত্র নির্বাচন দিলে খেলা জমে উঠবে। শেষ পর্যন্ত আসলে কী হয়, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত। যদিও বলছেন অনেকে যে, সভানেত্রীর হাতে আসল তালিকা। সময় হলেই তিনি তা ছেড়ে দেবেন।

শেয়ার করুন