চাঁদপুর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা সেপ্টেম্বরে

* একমাসেও ছাড় হয়নি ভিসির চাওয়া টাকা
* দেড় বছরেও শেষ হয়নি ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া
* ভিসি খুঁজছেন ভাড়া বাড়ি 
চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে আসছে সেপ্টেম্বরে। গুচ্ছ প্রশ্ন পদ্ধতিতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় এ পরীক্ষা হবে। ২০২১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই বছর (২০২২) বিশ্ববিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। তিনটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে চাঁবিপ্রবি’র। বিভাগগুলো হলো- কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি এবং ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন। বিভাগ প্রতি আসন সংখ্যা ৩০টি, তিন বিভাগে মোট ৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে আসন সংখ্যা বাড়ানো হবে।
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাসিম আখতার জানালেন, সেপ্টেম্বরে শুরুতে ভর্তি পরীক্ষা হবে। ক্লাস শুরু হতে হতে এবছরের শেষ নাগাদ হতে পারে। তবে ভর্তি পরীক্ষা সেপ্টেম্বরে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, একেক বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরীক্ষা ভিন্ন তারিখে। তিনি জানান, খুব সম্ভব চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ৩, ৭ ও ১০ সেপ্টেম্বরে পড়েছে।
এদিকে চাঁদপুরসহ সারাদেশে আলোচিত এই বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। জেলা প্রশাসনের হিসাবেরও কয়েকগুণ বেশি জমির মূল্য ধরে সদর উপজেলার ল²ীপুর মডেল ইউনিয়নে মেঘনা থেকে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বেড়ি বাঁধের পাশে ৬২ একর জমিতে এর ভূমি নির্ধারন করা হয়। জমির মূল্য ৫৫৬ কোটি টাকা দাবি করে বিক্রেতা ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খান হাইকোর্টে রিট মামলা করে। কিন্তু চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও তার সংশ্লিষ্ট অফিস এর প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করে ১শ ৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ জমির মূল্য সেলিম খান গংরা প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা বেশি নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলে প্রশসানও সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয়ে নড়েচড়ে বসে। এ নিয়ে গত ২/৩ মাস ধরে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে শুনানি চলে। শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরাও অর্থের অসংগতি, ভুয়া ত্রæতিমুক্ত দলিল দেখতে পায় এবং বিচারকের দৃষ্টিতে আনে। সবশেষ যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে এবং আসছে ২০ এপ্রিল এ মামলার রায় ঘোষণা হবে।
এদিকে একই বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণে ভূমির মূল্য অধিক এবং এ নিয়ে সেলিম খান অনিয়ম – দুর্নীতি করে অর্থ লোপাট করার চেষ্টা করেছেন এবং এর পেছনে আরো কিছু দুর্নীতি তার রয়েছে এমন সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। গত সপ্তাহে একটি টিম চাঁদপুরে সরজমিন ঘুরে আসে এবং তাদের কাছে দুর্নীতির তথ্য মিলে।
এদিকে গত ৬ মার্চ ভিসি ড. নাসিম আখতার, শিক্ষা সচিবকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের প্রাক্কলিত ১৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকাই ছাড় দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন। শনিবার ভিসির সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, আমি এর প্রায় ২ সপ্তাহ পরেও শিক্ষাসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের একই রকম তাগিদ দিয়েছি। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি কোন টাকা ছাড় দেয়ার বিষয়ে কোন উত্তর মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে পাইনি। তবে তিনি ধারনা করছেন, যেহেতু আগামী ২০ এপ্রিলের এ বিষয়ে একটা রায় আছে, হয়তো তার পরে গিয়ে কিছু একটা তারা করবেন। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীও ওয়াকিবহাল আছেন এবং যেহেতু এটি ওনার নিজের এলাকাও, সেক্ষেত্রে আমি টাকা ছাড়সহ অন্যান্য বিষয়গুলো পজেটিভ মনে করি। আর উনি এটি মিডিয়াকেও বলেছেন, টাকা ছাড়ের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে, ভূমি অধিগ্রহণ যেখানে প্রস্তাব এবং একরকম নির্ধারিত স্থান হিসাবে প্রাথমিক কর্মযজ্ঞ হয়েছে, সেখানের জটিলতা নিরসন হলেও আপাততঃ সেখানে ক্লাস করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি বলে জানালেন, ভিসি। সেখানে সেলিম খান আগে থেকেই তার খরচে, একটা পাকা স্থাপনা তৈরি করে রেখেছে। কিন্তু তার সেখানে এই অবস্থায় এবং নানা সমীকরণে সম্ভব হয়তো সম্ভব হয়ে উঠবে না। এই পরিস্থিতিতে ভিসি শহরের অন্যত্রও ভাড়া বাড়ি খোঁজছেন। অথবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এজন্য তিনি গত মাসাধিকাল ধরে, বাড়ির খোঁজেও ছিলেন। এখনো আছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মন্জরি কমিশনের একাধিক সদস্যও বর্তমান জায়গা এবং ভাড়া বাড়ির বিষয় নানা বিষয়গুলো দেখভালে চাঁদপুর ঘুরে গেছেন বলে ভিসি ড. নাসিম আখতার জানান।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন লাভ করে। পরে ২০২১ এর ২৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. নাসিম আখতারককে ভিসি নিয়োগ দেন। বিশ্ব বিদ্যালয়ের অনুমোদনের দেড় বছর এবং ভিসি নিয়োগের ১৫ মাস অনতিক্রান্ত হতে চল্লেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কর্মকাÐে ধীর গতিই লক্ষ্যনীয়। তবে উপাচার্য বললেন, আমরা অধিগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছাতে পারলেও ভর্তিসহ অন্যান্য কাজগুলো এগিয়ে নিয়েছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply