ফরিদগঞ্জে ছাত্রলীগের দু’ গ্রুপের সংঘর্ষ, উপজেলাজুড়ে উত্তেজনা

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি :
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সমর্থক ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছে। চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কে যান চলাচল কিছু সময় বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি সিএনজি স্কুটারসহ গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। এক পর্যায়ে ফরিদগঞ্জ বাজারে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া ও ককটেল বিস্ফোরণে ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ৮ মে রোববার দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, রোববার ছাত্রলীগের দু গ্রæপের আনন্দ মিছিল নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টির আশংকা থাকায় প্রশাসন উভয় পক্ষের মিছিল বন্ধ করে দেয়। পুলিশি বাঁধা উপেক্ষা করে নব-গঠিত উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বিকাল ৩টায় পৌর এলাকার চরকুমিরা রাস্তার মাথা থেকে মিছিল শুরু করে। পরে কালীর চৌরাস্তায় আসলে পুলিশি বাঁধার মুখে পড়ে এবং মিছিলটি ফরিদগঞ্জ বাজারে প্রবেশ নিষেধ করে ফিরিয়ে দেয়। এ সময় কে বা কারা মিছিল থেকে পুলিশ ও নেতা-কর্মীদের লক্ষ করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে জেলা ছাত্রলীগ স্বাক্ষরিত পৌর ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ কেরোয়ার মোড় থেকে মিছিল শুরু করে ব্রীজের উপর আসলে পুলিশি বাঁধার মুখে পড়ে তারা চলে যায়। এ সময় বিপরিত দিক থেকে ককটেল বিস্ফোরণ করলে মিছিলে থাকা নেতা-কমীরা ধাওয়া করে। এরপরই এমপি ঘোষিত উপজেলা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের মাঝে ধাওয়া পাল্টা দাওয়া শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে কেরোয়া ব্রীজের উত্তর পাড় থেকে ছাত্রলীগের একটি গ্রæপ মিছিল নিয়ে বাজারের দিকে আসার প্রতি মধ্যে পুলিশি বাঁধার মুখে পড়ে তারা চলে যায় এবং বাজার থেকে আসা একটি গ্রæপ তারা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করে এবং প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া প্রদর্শন করে। এতে বাজারে আসা সাধারন মানুষ আতংকিত হয়।
একই দিন সন্ধায় মাজার সংলগ্ন পুনরায় ধাওয়া পাল্টা দাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় জেলা পরিষদের সাবেক দুই সদস্যসহ উভয় গ্রæপের অন্তত ৫ জন আহত হয়। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
আহতরা হলেন, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও উপজেলা আ’লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান মিটু, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও পৌর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রিপন, সংসদ সদস্যের ১৪ নং ইউনিয়নের প্রতিনিধি রুবেল হোসেন, যুবলীগ নেতা আব্দুর রহমান মুসা ও সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
এছাড়াও একইদিন দুপুরে উপজেলার রুপসা উত্তর ইউনিয়নের নারিকেলতলা, কড়ৈতলী, আলোনিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে উভয় গ্রæপের নেতা-কর্মীদের মাঝে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানাগেছে।
উপজেলা ছাত্রলীগের বিবাদমান দুটি পক্ষ গতকাল শনিবার পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এমন খবর পেয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা দু’পক্ষের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে। এতে মো. বাকী বিল্লাহর নেতৃত্বাধীন এক পক্ষ শনিবারের কর্মসূচি পিছিয়ে রবিবার সমাবেশ ও মিছিলের ঘোষণা দেন।
অপরদিকে স্থানীয় সাংসদ সদস্যের ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি আলী নেওয়াজের নেতৃত্বাধীন কমিটি ঈদ পুনর্মিলনীর ঘোষণা দেন। খবর শুনে পুনরায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দুটি কর্মসূচি বন্ধের চেষ্টা করেন। এতে সকাল থেকে পৌর বাজারের বিভিন্ন প্রবেশমুখে পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।
রোববার ফরিদগঞ্জ সাপ্তহিক বাজারের দিন, ফলে বাজারে বিপুলসংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতা উপস্থিত ছিলেন। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে পথচারীরা আতংকে ও জীবন বাঁচাতে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করেন এতে কয়েকজন আহত হন। মুহূর্তে গলি ফাঁকা হয়ে যায়।
এদিকে আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে ফরিদগঞ্জের ওসি মোহাম্মদ শহিদ হোসেন বলেন, একটি প্রোগ্রামকে কেন্দ্র করে দু’ গ্রæপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। পুরো ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ কাজ করছে। আমরা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয় এমন কোন কিছু দেখলেই কঠোর থেকে কঠোর অবস্থান নেবো।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফরিদগঞ্জ-হাজীগঞ্জ) সার্কেল সোহেল মাহমুদ বলেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রæপের আনন্দ মিছিলকে কেন্দ্র করে ফরিদগঞ্জ বাসির জানমালের ক্ষতির আশংকায় আমরা ফরিদগঞ্জ বাজার ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি। বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া বড় কোন ধরনের অপৃতিকর ঘটনা ঘটেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দু-গ্রæপের মধ্যে হামলায় কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি, কেহ অভিযোগ ফেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply