চাঁদপুরের সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ

এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা অনেক : জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ
জনগনের জানমাল ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনে পুলিশ আরো কঠোর হবো : পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সোমবার ৯ মে সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিস। সভায় জেলার বিদ্যমান আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি মাদক ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আদালতের মামলা সমূহ দ্রুত নিষ্পত্তিকরণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার বন্ধে আইন প্রয়োগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বশীল আচরণ, চাঁদপুর শহরের সড়কে যানজট নিরসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
সভাসূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরের সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন সদস্যদের অনেকেই। বিশেষ করে, রোববার ও দিন কয়েক ধরে ফরিদগন্জের ছাত্রলীগের কমিটিকে কেন্দ্র করে দু’ পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, হাইমচরের সাবেক ছাত্রলীগ ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের নিবেদিত এক নেতাকে চাঁদপুর শহরে হত্যার প্রচেষ্টায় মারধর এবং ফেইসবুকের অপব্যবহার করে স্থানীয় সিনিয়র নেতা এমনকি প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে তাই লিখে পোস্ট করাসহ নানা বিষয়গুলো উঠে আসে। উঠে আসে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যারা জনপ্রতিনিধি আছেন, তাদের অনেকেরই স্বশরীরে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে।
এ ব্যাপারে সভাপতি জেলা প্রশাসক বলেন, জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় যে বা যে সকল জনপ্রতিনিধিগন সদস্য তারা অবশ্যই তাদের উপস্থিত থাকা দায়িত্বের পর্যায়ে। না থাকতে পারলে তার কারণ দেখিয়ে না আসতে পারেন। কিন্তু এমনও দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ যোগাযোগই রাখেন না।তিনি বলেন, এ ধরনের প্রবনতা জনপ্রতিনিধিসহ যে সদস্যদেরই থাকবে, আমরা বিধি মোতাবেক এর ব্যবস্থা নেবো। তিনি বলেন, জেলার উপজেলা এবং মেয়র মহোদয়গন অনেক দায়িত্ব পালনের অধিকারি।এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা বা এ যেন আমরা ভালো রাখতে পারি, সেজন্য তাদের গুরুত্ব ভূমিকা অনেকখানি। আশা করি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অনুধাবন করবেন।
পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, ফরিদগঞ্জের ঘটনা আমরা জানতে পেরে যেটুকু ব্যবস্থা নেয়ার সেটুকু নিয়েছি। আমাদের পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থা যথেষ্ট ভূমিকা নিয়েছে। আমরা উভয় পক্ষকেই নিবৃত করার চেষ্টা করেছি। তিনি সরকার দলের সকল নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে একটা ভালো ভূমিকা নিতে হবে। কোথায় বিরোধ, কেন এসব এগুলো আপনাদের দেখতে হবে। নিজেদের মধ্যে নিজেদের যে বিরোধ সেটা থাকলে আইনশৃঙ্খলা ভালো প্রত্যাশা করা কেমন করে। মিলন মাহমুদ বলেন, কাউকেই আমরা ছাড় দেবো না, যদি সে অন্যায়কারী হয়। আমাদের পুলিশ বাহিনী জনগনের জানমাল ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা প্রয়োজনে আরো কঠোর হবো।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, দস্যুতা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন এসব অপরাধের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জিরো টলারেন্সে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের এক চুল পরিমানও আমরা বিচ্যুত হবার না। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী সংগঠনের নামে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, বা দুর্নীতিতে লিপ্ত, এদের বিরুদ্ধে আমাদের জেলা আওয়ামীলীগের সিদ্ধান্ত ও মনোভাব একেবারে স্পষ্ট।আগেও বলেছি, এখনো বলছি। যারা এসব করে বেড়াচ্ছে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা কঠোর ব্যবস্থা নিন। তিনি বলেন, হাইমচরে, পরীক্ষিত এক সাবেক ছাত্রলীগনেতা ফখরুদ্দিন, আমাদের বৃহত্তর আওয়ামী পরিবারের সন্তান, তার উপর চাঁদপুর শহরে বর্বরোচিত হামলা হলো, এটা কেন? এদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে জেলা আওয়ামী লীগ তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি পর্যন্ত প্রদান করা হলো। কিন্তু এদের এহেন নেক্কারজনক ঘটনায় দুঃখ বা নিন্দা না জানিয়ে কেউ কেউ উল্টো কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল মিটিংও করতে পারতাম। পুলিশ প্রশাসন আমাদের এ থেকে বারন থাকতে বলেছি। হাইমচরের ওরাও করলো না। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে তারা সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসীর পক্ষে দাঁড়ালো।মিছিল মিটিং করলো।কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হলো না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যারাই মিটিং মিছিল করেন, তারা তার ফাদার সংগঠনের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেন না। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। সেজন্য ফেইসবুক ব্যবহার করেন। এসব আমরা বরদাস্ত করবো না। সাংগঠনিকভাবে সবই দেখা হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে।
সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী বলেন, নদীতে কারা চাঁদাবাজি করে সেটা দেখতে হবে। কোন অন্যায় কাজ আমরা সহ্য করবো না। তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করে যান। অন্যায়কারী যে হোক তার ছাড় আপনারা দেবেন না।
এদিকে এবার জাটকা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়ায় জেলা প্রশাসককে সভায় ধন্যবাদ জানানো হয়। সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সরোয়ার, নৌ পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম, মেয়র জিল্লুর রহমান, মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, এনএসআই ডিডি শেখ আরমান আহমেদ, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ ওয়াদুদসহ বেশ কয়েকজন বক্তব্য্ রাখেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply