ফরিদগঞ্জে দু’ সহোদরকে হাত পা বেঁধে নির্যাতন, গ্রেফতার ৩
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফরিদগঞ্জে দু’ সহোদর পিটিয়ে রক্তাক্ত আহত করা হয়েছে। গ্রামের একটি বাজারে দিনের বেলায় ও প্রকাশ্যে মধ্যযুগীয় কায়দায় পেটানোর ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বাধা দিতে গিয়ে এক ভাইয়ের স্ত্রীকেও পেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত মো. দেলোয়ার হোসেন (৬৫), মো. লোকমান হোসেন (৬৮) ও মো. মাহাবুব আলম সোহেল (৩২)কে পুলিশ গতকাল সোমবার ভোরে আটক ও থানায় মামলা দায়ের করেছে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ১৩ই মে দুপুর ১২ টা নাগাদ ওই ঘটনা ঘটেছে উপজেলার রূপসা (উত্তর) ইউনিয়নের রুস্তমপুর বাজারে।
পুলিশ, ভূক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় ভাটেরহ্রদ গ্রামের শেখ ফরিদ (৪১) ও সহোদর ভাই ফয়েজ আহমেদ (৪৬) বাড়ি থেকে ফরিদগঞ্জ থানার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে রুস্তমপুর বাজারের মোশারফ হোসেনের দোকানের সামনে দুই ভাইকে মো. দেলোয়ার হোসেন (৬৫), মো. লোকমান হোসেন (৬৮) ও মো. মাহাবুব আলম সোহেল (৩২), মোজাম্মেল হোসেন (৬৫) ও দেলোয়ার হোসেন (৬৫) সংঘবদ্ধভাবে আটক করেন। তাদের তিনজন শেখ ফরিদ এর হাত পা বেঁধে ও অপর দু’জন ফয়েজ আহমদকে বেদমভাবে রড দিয়ে পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত মোজাম্মেল হোসেন বাবুল শেখ ফরিদ এর গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে। খবর শুনে তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩৫) এগিয়ে গেলে তাকে পেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বাজারে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক লোক ওই ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ বাধা দেওয়নি।
জানতে চাইলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শেখ ফরিদগংদের সাথে বাবুলগংদের দীর্ঘদিন জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। ফরিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা বাবুলগংদের নিয়ে অশালীন ভাষায় গালমন্দ এবং তাদের পূর্ব পূরুষের কবরে ঝাড়ু পিটা ও প্রস্রাব করে দেওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মারধর করেছে।
এদিকে, এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চানিদিকে নিন্দার ঝড় ওঠে। এতে, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের নির্দেশে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেনের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স এলাকায় তদন্ত করেন। তারা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে তিনজনকেত আটক করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল মাহমুদ গতকাল দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়। ঘটনায় অভিযুক্ত অপর তিনজন আত্মগোপন করেছেন। তাদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দু’পক্ষের মধ্যে জমিজমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতা রয়েছে।
এ ব্যাপারে নির্যাতনের শিকার বড় ভাই ফয়েজ আহমদ মৃধা বলেন, আমাদের ওপর হামলার ঘটনায় আমি বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পক্ষের নিকটাত্মীয় মুনছুর আহমেদ (৯০) বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমাদের ভোগ দখলীয় জমিজমা নিয়ে ফরিদ গং বাবুল গংদের সঙ্গে অন্যায্য বিরোধ করে আসছে। গত ১৩ মে ফরিদ গংরা বাবুলের বাবার কবরে প্রশ্রাব ও ঝাড়ু দিয়ে পেটায়। তারা যখন তখন সময় অসদাচরণ ও গালমন্দ করতো। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমনভাবে পেটানো ঠিক হয়নি। ওই সময়ে বাড়ির আয়েশা বেগম (৫০) ও লিলি বেগম (৩০)সহ প্রায় ১০ জন নারী পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি, ফরিদগংদের অত্যাচার থেকে প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মোশাররফ হোসেন জানান, ফারুক ও তার ভাই আমার দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন বাবুল ও তার ভাই মিলে অর্তকিতভাবে ফরিদ ও ফারুকের উপর হামলা করে। এছাড়া, বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, হামলার ঘটনা শুনেছি ও দেখেছি। এছাড়া, কিছু জানি না।