বিবাহ বিচ্ছেদ : কারণ ও প্রতিকার

এডভোকেট জেসমিন সুলতানা ::
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন, একটি বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে নারী পুরুষ দুজন দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করে,কখনো পারিবারিক সম্মতিতে ও মতে কখনো নিজেদের পছন্দে । দেশ,কাল পাত্র ধর্ম,বর্ন ভেদে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা আনুষঙ্গিকতা অনেকটা ভিন্ন।
সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিতে বিয়ে ইসলাম ধর্মে -“উঠ ছুড়ি, তোর বিয়ে লেগেছে, বরকনে পছন্দ হলো,কাজী ডাকো, নাম ঠিকানা বলে, কেউ একজন জিজ্ঞেস করো, রাজী!, বল কবুল! হলো বিয়ে,পরে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে,তালাকের বেলায় সিটি কর্পোরেশনে নোটিশ, ৯০ দিন অপেক্ষা, তালাক কার্যকর।”
হিন্দু ধর্মে স্থান, এলাকাভিত্তিক প্রথাগত, আচারগত ভিন্নতা আছে, ছাদনা তলায় সাতপাকে বাঁধা,অগ্নিসাক্ষী, মন্ত্রপাঠ করে বিয়ে, বিচ্ছেদ নেই, আমাদের দেশে আলাদা থাকছে ভরনপোষণ পাওয়ার অধিকারী নারী। ভারতে কারণ দর্শীয়ে অনুমতি নিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে।
বৌদ্ধধর্মে এলাকা ও রীতিনীতিতে ভিন্নতা থাকলেও বিয়ে মন্দিরে, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাধ্যমে মন্ত্রপাঠ করে কিংবা অন্যকোথাও মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে বিয়ে হতে পারে। বিবাহবিচ্ছেদের বেলায় বিয়ের কারণ দর্শিয়ে কোর্টকে জানিয়ে তালাক হয়।
সবচেয়ে সুন্দর রীতি খ্রিস্টান ধর্মীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে। বিয়ে সাধারনত চার্চে অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব থেকেই বর-কন্যার ঠিকানা জানিয়ে নোটিশ দেয়া হয়। কারো কোন মন্তব্য,আপত্তি থাকলে জানাতে বলা হয়। পরে চার্চে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। দুজনের কল্যানে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। বিবাহবিচ্ছেদ আদালতে ডিক্রির মাধ্যমে করা যায়।
বিয়ে জীবনের জন্য কতোইনা গুরুত্বপূর্ন যার মাধ্যমে নারী পুরুষ একত্রে বৈধ ভাবে মিলিত হয়। রচনা করে স্বপ্নের সুখী নীড়। গড়ে তুলে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন।
সবাই চায় তার বিবাহিত জীবন সুখী হোক, জীবন মরনে দুজন মিলে কাটিয়ে দিক সফল জীবন গড়ে তুলুক স্বপ্নীল একটি সুখের ঘর,তাদের নিয়ে রচিত
হোক ভালবাসার প্রেমময়, আবেগবহুল কাহিনী।
বিধিবাম হলে বিয়ের পর নারী-পুরুষ যেমন সংসার শুরু করে, তেমনি শুরুর পর পরও অনেক সময় দেখা দেয় বিচ্ছেদের ঘন্টা ধ্বনি। কেন বিচ্ছেদ, কেনই বা সংসার করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে আমার দেখা কারণ গুলি তুলে ধরছি একেবারে নিরেট অভিজ্ঞতার আলোকে।
শারীরিক অক্ষমতাঃ
শারীরিক অক্ষমতা,যৌন ব্যাধি,যৌনবিকারগ্রস্হ স্বামী বিয়ে বিচ্ছেদের একটি অন্যতম কারন, এটি লজ্জা কিংবা গোপন করা নয়। বিয়ে বন্ধনের অন্যতম বিষয় হলো স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য মিলন প্রকারান্তরে সন্তান গ্রহন।আমাদের সমাজে প্রায়শঃই দেখা যায় শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত বাবা-মা তার সন্তান যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অক্ষম জানা সত্ত্বেও সন্তান কে বিয়ের আসরে বসিয়ে দেন। বাসর রাতেই অক্ষম স্বামীর হিংস্রতার শিকার হন মেয়েটি। কখনো পরিবারকে গোপন
লজ্জাজনক কথাটি জানাতে বাধ্য হয়, কখনো বা গোপনে চিকিৎসা চালিয়ে ব্যর্থ চেষ্টা করে বিচ্ছেদের পথ বেছে নেন ।
যৌতুকঃ
যৌতুক আমাদের দেশের জন্য এক সামাজিক ব্যাধি। যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ অনুসারে বরপক্ষ বা কনেপক্ষ যেকোন পক্ষের নিকট যৌতুক দাবীই অপরাধ হিসেবে গন্য। যৌতুকের জন্য স্বামী, স্বামীর পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হয় নারী, কখনো মৃত্যুর মাধ্যমেও যৌতুকের বলী হতে হয় তাকে।যৌতুক দাবী কিংবা নির্যাতনের কোন বয়স বা সময় নেই। ৩৫ বছরের সংসারও ছেড়ে আসতে দেখা যায় নারীকে বিয়ে বিচ্ছেদের মাধ্যমে।
বাল্য বিয়েঃ
বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুসারে ১৮ বছরের মেয়ে, ২১ বছরের ছেলের বিয়েকে বাল্যবিয়ে হিসেবে গন্য করা হয়েছে। গত দু’বছরে করোনা সময়ে বাল্য বিবাহ বেড়েছে ভয়াবহ ভাবে।
স্কুল বন্ধ, বাবা মা ১৮ বছর উঠতি বয়সী মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে, অনেকটা ঝঞ্ঝাট মুক্ত হওয়ার জন্য। ছোট ছেলে মেয়েরা অনেকে নিজে পছন্দ করে পালিয়ে গিয়ে কিংবা বাবা মায়ের সম্মতিতে বিয়ে করে। নাবালিকা কন্যা বিয়ের পর তার লালিত স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে যখন মিল খুঁজে পায়না, যখন তার স্বপ্ন ও প্রত্যাশা ভেঙ্গে যায়, তখনই বেছে নেয় বিয়ে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত।
বহু বিবাহঃ
একজন নারী তার স্বামী কে একা পেতে চায়,স্বামীর ভাগ কাউকেই দিতে চায়না । অনেক সময় দেখা যায় স্বামী গোপনে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ, সংসারের প্রতি দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা তাকে কাঁদায়।সংসার-সন্তান থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় স্বামীর বহু বিবাহ মেনে নেয়া অনেক স্ত্রীর পক্ষে সম্ভব হয়না। ফলে নেয় বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত।
পরকীয়াঃ
বর্তমানে ডিজিটাল যুগের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন, ফেসবুক, মেসেন্জার, ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ, ইমো ইত্যাদি সহজলভ্য হওয়ায় সবাই অতিসহজেই পেয়ে যাচ্ছে নতুন সঙ্গী। ফলে পরকীয়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে নারী-পুরুষ গড়ে তুলছে এক্সট্রা-ম্যারিটাল সম্পর্ক। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য।
অন্যপুরুষ বা নারীতে আসক্ত পরিবারে সব সময় অশান্তি, নির্যাতন, অবিশ্বাস নিত্যদিনের ঘটনা৷ একসময় উভয়পক্ষ বিয়েবিচ্ছেদের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পথ বেছে নেয়।
মাদকাসক্তিঃ
আজকাল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে মাদকের নীরব কান্না। যার সন্তান/স্বামী/স্ত্রী মাদকাসক্ত, যার ঘরে ঢুকেছে মাদকের ছোবল, সে জানে মাদকের ভয়াবহতা। বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য আসা অধিকাংশের কাছ থেকে জানা যায় মাদকাসক্ত কোন মানুষ আর মানুষ থাকেনা। সে অমানুষে পরিনত হয়। অমানুষের সাথে সংসার করা যখন সম্ভব হয়না বলেই বিয়ে বিচ্ছেদের পথ বেছে নেয়।
সন্দেহ, বিপথগামী স্বামী স্ত্রী ও বহুগামিতাঃ
স্বামী স্ত্রী দুজন দুজনকে সন্দেহ করা একটি মানসিক ব্যধি। সন্দেহ কারনে হয় দেখা যায় আজকাল সারাদিন মোবাইলে চ্যাটিং, যৌনবিকৃত কুরুচিপূর্ন ভিডিও তে আসক্ত স্বামী,স্ত্রী। সন্দেহ যখন নিঃস্বন্দেহভাবে ধরা দেয়, বাস্তবে রূপ নেয় তখন কুরুচিপূর্ণ ঘরে না থেকে বিয়ে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। বহুগামী নারী পুরুষ আর কুকুর একইগোত্র ভুক্ত। সুতরাং পঙ্কিল অবস্থা থেকে বেরিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদকে সঠিক পথ ভেবে বিচ্ছেদের পথ বেছে নেয় ভুক্ত ভোগী।
শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনঃ
আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে শারীরিক নির্যাতন অপরাধ, শাস্তির বিধান আছে কিন্তু মানসিক নির্যাতনের কোন শাস্তি নেই। শারীরিক নির্যাতন দৃশ্যমান কিন্ত মানসিক নির্যাতন অদৃশ্যমান টর্চার সেলের চেয়েও ভয়ংকর। দেশ কিংবা বিদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত নারীকে যখন সংসার কিংবা সন্তান লালন পালনের
অজুহাতে ঘরে বসিয়ে দেয়, শিক্ষিত মেয়েটিকে আত্মনির্ভরশীল হতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় স্বামী বা তার পরিবার। তখন সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে বিচ্ছেদের পথ বেছে নেয় ক্ষতিগ্রস্ত নারী। তাছাড়া স্বনির্ভর,আত্মসচেতন নারীরা এখন আর বাইরে কাজ করে এসে পারিবারিক নির্যাতন বা সহিংসতা মেনে নেয়না। ফলশ্রুতিতে বেছে নেয় বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত।
মেরুদন্ডহীন স্বামী বা অতিরিক্ত লোভী,উচ্চাকাঙ্খী স্ত্রীঃ
আমাদের সমাজে নারীই নারীর শত্রু।বউ শাশুড়ির সম্পর্কে চরম বৈপরীত্য সংসারে অশান্তির অন্যতম কারন, সাথে স্বামীর ভাই বোন। অনেক সময় পুরুষ বাবা,মা ভাই বোনের কথা শুনে কোন কিছু না ভেবেই স্ত্রীর উপর অত্যাচার করে, মিথ্যা অপবাদে জর্জরিত করে ঘর থেকে বের করে দেয়। অসহনীয় পর্যায়ে অনেক সময় আত্নহননের পথ বেছে নেয় নারী কিংবা বিচ্ছেদকেই মুক্তি হিসেবে মেনে নেয়।
এর বৈপরীত্যে যে নেই তা নয় স্ত্রীর অতিরিক্ত
লোভ, শ্বশুর-শাশুড়ি কিংবা স্বামীর পরিবারের সদস্যদের প্রতি অশ্রদ্ধা, সংসারের প্রতি উন্নাসিকতা,অতিরিক্ত লোভ, উচ্চাকাঙ্খা অনেক সময় সহ্যতীত হয়ে গেলে স্বামী বিচ্ছেদকে সঠিক পথ হিসেবে বেছে নেয়।
দুই পরিবারের মুরুব্বীদের অনধিকার চর্চাঃ
অনেক পরিবারে দেখা যায় বিয়ের পর পরিবারে মুরব্বীদের অনধিকার চর্চা, কূটকচালী শিখানো, কুবুদ্ধি প্রদান,নিজেদের মনগড়ামতে সন্তানদের সংসার কন্ট্রোল করে। এক্ষেত্রে মা,শাশুড়ি অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।একসময় সম্পর্কের তিক্ততা বিয়ে বিচ্ছেদ পথ খুলে দেয়।
বন্ধ্যাত্ব,বিকারগ্রস্থ, মানসিকভাবে পঙ্গু নারীপুরুষঃ অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্খা কিংবা লোভী নারী পুরুষ অর্থ,ক্ষমতা,সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লোভে তার চেয়ে ত্রিগুন বয়সী নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে। একসময় মোহ চলে যায়,বা অক্ষম পুরুষ নারী, সক্ষম পুরুষ কিংবা নারীদের চাহিদা মিটাতে পারেনা,বা অর্থ চাহিদাপূর্ন হলে তা স্বার্থ
সিদ্ধি হলে সে আবার নতুনের সন্ধানে বের হয়।পরিত্যক্ত জনের বিদায় হয় একমাত্র বিয়ে বিচ্ছেদের মাধ্যমে। এ ছাড়া সন্তানহীন নারীকে বেশীর ভাগ সময় বিচ্ছেদের শিকার হতে হয়।
ধৈর্য্যহীনতাঃ
ডিজিটাল আধুনিক যুগের ছেলে মেয়েরা একেবারেই ধৈর্য্যহীন, সামান্য বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তারা সংসার নির্বাহ করতে চায়না। হুট করে বিয়ে কিংবা বিচ্ছেদ সিদ্ধান্ত নেয়। সব কিছুতেই থোরাই কেয়ার। সহ্য করার ক্ষমতা নেই বলে সামান্য কারণে ছেলে মেয়েরা বিচ্ছেদের পথ বেছে নেয়। তারা বিবেক, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের তোয়াক্কা করেনা।
বিবাহ বিচ্ছেদ রোধের উপায়?
বিয়ে থেকেই বিচ্ছেদের উৎপত্তি। সকল ধর্ম বা বর্ণের লোকের কাছে বিবাহ বিচ্ছেদ নিকৃষ্ট কাজ।
বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্তান। তাদের নীরব কান্না শোনার
বা দেখার সময় কারো নেই। বাবা মায়ের বিচ্ছেদে অনেক সময় সন্তান হয়ে যায় মানসিক ভাবে ভারসাম্য হীন,বদরাগী। মানসিক বিষন্নতা,অবসাদ তাদের আচ্ছন্ন করে রাখে। বনিবনা হবেনা জেনে কেন সন্তান ধারন করা? সন্তান তার বৃদ্ধির জন্য বাবা মা দুজনকেই চায়। দুজনের নির্মল স্নেহ ভালবাসা পেতে তাদের হৃদয় উন্মুখ থাকে।ব্রোকেন ফ্যামিলীর সন্তানদের দুঃখ-বেদনা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ জানেনা। যেহেতু সুন্দর,স্বাভাবিক জীবনে বড় হতে পারেনা, পরবর্তী জীবনেও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিভিন্ন কোর্ট গুলো থেকে বাবা মা ১৫ দিনের জন্য যখন ছোট সন্তানকে তাদের নিজ হেফাজতে নিয়ে যায় তখন শিশুদের করুণ মানসিক অবস্থা, পরিস্থিতির শিকার শিশু আমরা এ পেশায় জড়িত যারা, তাদের ভিন্ন কেউ জানেনা। সন্তান বাবা মা দুজনকে জড়িয়ে নিয়েই বাঁচতে চায়।বাবা মা দুজন যখন সন্তান দাবী করে সন্তানের করুণ দৃষ্টি, মানবিকগুন সম্পন্ন সব মানুষকে বেদনা বিধুর করবেই।
তারা দুজনকেই ভালবেসে যেতে চায়,জীবন কাটাতে চায়। বাবা মা অধিকাংশক্ষেত্রে নতুন
ভাবে সংসার গড়ে নেন,জীবনের সুখ স্বপ্ন রচনা করতে চেষ্টা করেন, অন্যের মূখাপেক্ষী হয়ে থাকেন সন্তানেরা।
বিবাহ বিচ্ছেদের যেমন কারন থাকে, সংসার সুখের করতে তেমনি প্রয়োজন কিছু বিষয় মেনে চলা।
সমস্যা যেমন আছে, উত্তরণেরও অনেক উপায় আছে। দাম্পত্যকলহের উদ্ভব হলে প্রথমেই দুজন মিলে উদ্ভবের কারন চিন্হিত করে সমাধানের চেষ্টা নিজেদেরই করতে হবে।ব্যক্তি সচেতনতা,সহনশীলতা, সমঝোতা করে বিশ্বাসের ভিত শক্ত করতে হবে। শান্তি,সুখ ও ভালবাসার নীড় সাজানোর জন্য উভয়কে ছাড় দিতে হয়। পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা,বিশ্বস্ততা,শ্রদ্ধা বোধ থাকা জরুরী।
করোনা পরিস্থিতি আমাদের দূরত্ব না কমিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে। সমাজের কথা,সামাজিকতার কথা,পরিবার তথা সন্তানদের কথা ভেবে আমরা ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেই। সফল হতেই পারি। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন,ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে বিবাহ বিচ্ছেদ চরম আকার ধারন করেছে। প্রতিদিন ই শতশত বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন । এ সংবাদ পরিবার,সমাজ তথা দেশের মানুষের জন্য সুখকর হতে পারেনা।
অনেকেই আইনবিধি নিয়ম কানুনের ধারে কাছে না গিয়ে নোটিশ গোপন করে ৯০ দিন পর বিচ্ছেদের ঘোষনা নিচ্ছে। স্বামী স্ত্রী বিদেশে অবস্থান করছে,বিদেশে তালাক ঘটানো ব্যয় বহুল তাই দেখা যায় ফাঁকে দেশে এসে গোপনে তালাক দিয়ে মেয়েটি/ছেলেটিকে প্রতারিত করছে। অনেকে ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে, নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে বেআইনী, নিয়মবহির্ভূতভাবে তালাক প্রদান করছে।
বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে বিয়ে, তালাক দুটোরই ডিজিটালাইজেশন জরুরী। বিয়ে হলে অনলাইন যেমন জানতে পারবে, বিচ্ছেদ হলেও অনলাইনে বিষয়টি অবহিত করা জরুরী। বাংলাদেশের প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও তালাক রেজিষ্ট্রেশন অনলাইন হওয়া সময়ের দাবী। তাতে করে প্রতারিত হওয়ার মাত্রা কমে যাবে যা নারী পুরুষ দুপক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক ও কল্যানকর।
আমরা ভাল কিছুর প্রত্যাশায় থাকি।
একটি বিচ্ছেদ ও আর না হোক, তাই হোক সবার অঙ্গীকার।
-জেসমিন সুলতানা, এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply