ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে যা বললেন ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু
চাঁদপুর প্রতিদিন ডেস্ক
চাঁদপুরে সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর ভাই জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বক্তব্যে বলেন, ‘বাবা ছোটকাল থেকে শিখিয়েছেন- রাজনীতি করা মানে দেশের জন্য কিছু করা, মানুষের জন্য কিছু করা। যখন কী নিয়ে পড়বো- বলেছেন, তোমরা বড় হয়ে রাজনীতি করবা, তাই ডাক্তারি বা ওকালতি পড়ো, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ডাক্তার হয়েছি, মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর আমার বোন ডাক্তার, ওকালতি দুটোই পড়েছে এবং দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমি একজন প্রতিষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ঢাকায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের (Ibrahim Diabetic Foot Care Hospital, Wari, Dhaka) পরিচালক ও সিনিয়র কনসালটেন্ট। আমি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী দেখি, অপারেশন করি ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করি। বিকেলে ধানমন্ডি বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতির আরেকটি হাসপাতালে (Ibrahim General Hospital, Dhanmondi 10/A, Dhaka) রোগী দেখি ও অপারেশন করি।’
জাওয়াদুর রহিম বলেন, ‘আমি পদ-পদবীর জন্য রাজনীতি করি না। ২০১৬ সালের সম্মেলনে একটি বিশেষ কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আমাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রার্থী করা হয়েছিল। কিন্তু সম্মেলনে জননেত্রী নাসিরউদ্দিন ভুইয়াকে সভাপতির দায়িত্ব দেন এবং পরবর্তী সময়ে আমাকে সহসভাপতির দায়িত্ব দেন। সেই সময় থেকেই আমি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’
তিনি বলেন, ‘জেলার সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমার পক্ষে কষ্টসাধ্য হলেও অংশগ্রহণ করি। অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করি। এজন্যই জেলা আওয়ামী লীগ চাঁদপুর সদর, পৌর ও হাইমচর উপজেলাসমূহের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠান ও অন্যান্য সংগঠনিক কার্যক্রম পরিচর্যা টিমের প্রধান হিসেবে (১৬/০৬/২০১৯) দায়িত্ব অর্পণ করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি সদরের প্রতিটি ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ করি ও কমিটি দেওয়া হয়। পৌর সব ওয়ার্ড সম্মেলন করি। প্রায় প্রতিটি সম্মেলনে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। পৌর ওয়ার্ড সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রার্থী বেশি থাকায় এবং মেয়র নির্বাচন নিকটবর্তী হওয়ায় সবার সঙ্গে পরামর্শক্রমে এবং নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রুপিং ও সংঘাত যাতে তৈরি না হয় তা বিবেচনায় নিয়ে কমিটি দেওয়া থেকে বিরত থাকা হয়। কারণ পৌর মেয়র নির্বাচন আমাদের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের পর কমিটি দেওয়া হয়। হাইমচর ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ করি, কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন কেন্দ্র করে সবার সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটি দেওয়া থেকে বিরত থাকি। ইউপি নির্বাচন শেষ খুব শিগগিরই কমিটি দিয়ে দেওয়া হবে।’
জাওয়াদুর রহিম বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে আমি সদর, হাইমচর ও পৌর- এই তিনটি ইউনিটে সম্মেলন করার জন্য ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে জেলা সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়েছি। এ ছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি নেতাকর্মীর সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক। আমি আওয়ামী পরিবারের সকল সদস্যকে আমার পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করি ও আমার সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। ঢাকায় চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে সকলকে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। জেলা কমিটির প্রতিটি নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। প্রতিটি উপজেলার সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ও গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক আছে। অন্যান্য উপজেলার অনেক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক আছে। চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ নির্বাচন, হাইমচর ও চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাচন, পৌর মেয়র নির্বাচনে আমাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, কচুয়া ও মতলব দক্ষিণ পৌরসভার নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করি।’
তিনি বলেন, “জনাব নাসির উদ্দিন আহমেদ, আমার উপরোক্ত কর্মকাণ্ডকে যদি আপনি ‘রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করি’ বলে মনে করে থাকেন, তবে হ্যাঁ, আমি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করি। সেটা নিজ গুণে ও দক্ষতা দিয়ে করি। আমার কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেই এবং ঠিকাদারি কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত নই। বিগত ১৩ বছরে চাঁদপুর বা দেশের অন্য কোথাও কোনো টেন্ডার প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
জাওয়াদুর রহিম বলেন, ‘আপনি ১৫ বছর মেয়র থাকাকালে পৌরসভার টেন্ডার নিয়ে কী হয়েছে, মেয়র পদ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় পৌরসভার কর্মচারীদের কত মাসের বেতন বকেয়া রেখে গেছেন, কত টাকার বিদুৎ বিল বকেয়া রেখে গেছেন এবং অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন, যার ফিরিস্তি দিতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। চাঁদপুরবাসী সব জানেন।’
তিনি বলেন, ‘সেলিম খানের বালু মহালের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোনো টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বিচার-সালিশ, ভূমি দখল, ক্ষমতার অপব্যবহার, বালু ব্যবসার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততার একটা প্রমাণ দেখান যদি পারেন…। আপনাকে ছোট করবো না, কারণ নিজেকে ছোট করা হবে, দলকে ছোট করা হবে, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ছোট করা হবে, আদর্শিক পিতা বঙ্গবন্ধুকে ছোট করা হবে।’
জাওয়াদুর রহিম বলেন, ‘আমার ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে গেছে, বিদেশে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করছে। ওদের জন্য আমাকে খরচ করতে হয় না। স্ত্রী বিদেশি হওয়ায় শাড়ি, গয়নার পিছনে খরচ করতে হয় না। কোনো বাজে অভ্যাস নেই। ঢাকায় মায়ের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকি। সুতরাং প্রতি মাসে যা আয় করি তার ১০ ভাগের এক ভাগও খরচ করতে পারি না। সুতরাং সুযোগ পেলেই সামর্থ্য অনুযায়ী নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াই। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই।’
তিনি বলেন, ‘করোনার সময়ে আরটিপিসিআর ল্যাব ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের ক্ষেত্রে ডা. দীপু মনিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। হাসপাতালের কাজের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ও সুচিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অনেক কাজ করেছি এবং করছি। চাঁদপুরের যুব সমাজকে মাদকের কড়াল গ্রাস থেকে রক্ষা করা ও বয়স্কদের সবল রোগবিহীন দীর্ঘ জীবনযাপনের জন্য চাঁদপুরে ঢাকার কয়েকটি ভালো জিমের সঙ্গে তুলনা করার মতো একটি জিম বানিয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ, আল মাহমুদ স্বপন, ড. সেলিম মাহমুদ দেখে গেছেন এবং ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। হাইমচরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে একটি খামার করছি। সেখানে বর্তমানে একটি স্কুল, মসজিদ ও বাজার হয়েছে। নদী ভাঙনের শিকার প্রায় ৬০টি পরিবারের জন্য প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রায় ২০০ পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা আছে। প্রজেক্টটি সম্পূর্ণ হলে সেখানে কয়েকদিন করে থাকার জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত নেতাদের পরিবারসহ পাঠানোর ইচ্ছা আছে। আপনি কি করেছেন জনাব নাসির উদ্দিন আহমেদ?’
জাওয়াদুর রহিম বলেন, ‘সেলিম খান লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। সুতরাং তার পদ-পদবী ও একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তার সঙ্গে যতটুকু সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন তা বিরাজমান।’
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের শেষ দিকে আমি লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য যাই। এলাকার পরিবর্তন দেখে আমি বিস্মিত হই। সেলিম খান জানান, তিনি এখানে একটি ফিল্ম সিটি করবেন, তার জন্য জায়গা তৈরি করছেন। আমি অনেকদিন যাবৎ একটি হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য জায়গা খুঁজছিলাম। নদীর পাশে মনোরম পরিবেশ ও শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় জায়গাটি আমার হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য উপযোগী একটি স্থান বলে মনে হয়। আমি তাকে আমার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাই ও ৪-৫ একর জমি কেনার ইচ্ছা পোষণ করি। সেই হিসেবে আমি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আমার জন্য অল্প অল্প করে জমি কেনা শুরু করি। কিন্তু ২০২১ সালে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয় তার মধ্যে আমার জমিও পড়ে যায়। সুতরাং আমার স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হওয়ায় এবং অন্যদিকে আমার ছোট বোন ডা. দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী হওয়ায় আমি জমি বিক্রি করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই। কারণ সরকার জমি নিলে আমি আর্থিকভাবে লাভবান হবো- তা হওয়া উচিত নয় এবং হলে মানুষ ভালোভাবে দেখবে না।’
জাওয়াদুর রহিম বলেন, ‘অনেকদিন চেষ্টা করে জমি বিক্রি করতে না পেরে বিগত ৬/১২/২০২১ অফেরতযোগ্য দলিল নং ৮০৪১ এর মাধ্যমে জমি হস্তান্তর করে দেই। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গায় আমার কোনো জমি নেই। এ ব্যাপারগুলো নিয়ে যে কোনো ধরনের তথ্য জানতে হলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইল। আমি সকল ধরনের প্রশ্ন মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। কারণ আমার উপরোক্ত লিখিত বক্তব্য সম্পূর্ণ সঠিক, এখানে কোনো অসত্য তথ্য নেই।’