শাহরাস্তিতে স্কুলড্রেস না থাকায় ৩০ শিক্ষার্থীকে বের করে দিলেন শিক্ষক
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে স্কুলড্রেস পরে বিদ্যালয়ে না আসায় প্রায় ৩০ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সোমবার উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের বেরনাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, প্রতিদিনের মত আজও সকালে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় আসে। এসময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম খলিলের নির্দেশনায় বিদ্যালয়ের নির্ধারিত ড্রেস পড়ে যে সকল শিক্ষার্থী আসেনি তাদের সবাইকে বের করে দেওয়া হয়। এসময় তাদেরকে ক্লাস করতে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয় পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোন কোন অভিভাবক অনুরোধ করতে আসলেও তাদের কোনো কথাই তিনি কর্ণপাত করেননি। এতে শুধু শিক্ষার্থী নয় অভিভাবকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা এসে ইভটিজিং বা বিভিন্ন প্রকার ঝামেলা সৃষ্টি করাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বের করে দেওয়া এক শিক্ষার্থীর বাবা (ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার মনিকার বাবা মনির হোসেন) জানান, আমার মেয়ে গত তিন-চার দিন আগে স্কুলড্রেস বানিয়ে দেওয়ার জন্য তার মাকে বলে। কিন্তু তার মা বিষয়টি আমাকে জানায়নি। পরে সকালে তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিলে বিষয়টি আমি জানতে পারি এবং তাকে নিয়ে পুনরায় বিদ্যালয়ে যায় কিন্তু প্রধান শিক্ষক আমার কোন কথাই শুনতে রাজি হননি এবং তাকে ক্লাস করার অনুমতি দেননি। শুধু তাই নয় এসময় তিনি রাগান্বিত হয়ে স্কুলড্রেস বানিয়ে দিতে না পারলে টিসি নিয়ে অন্য বিদ্যালয় চলে যাওয়ার কথা বলেন। আমার মত আরো কয়েকজন অভিভাবক এসেও উনার কাছে পাত্তা পাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেরনাইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল জানান, আমাদের এই বিদ্যালয়টি স্থানীয় বাজারে অবস্থিত। আমি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্কুল ড্রেস পরিধান করে বিদ্যালয় আসার জন্য নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী (৩০ শতাংশ) এ বিষয়ে উদাসীন। বিদ্যালয় স্কুল ড্রেস পড়ে আসা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া অনেক সময় সিভিল ড্রেসে থাকা যুবকরা বিদ্যালয় প্রবেশ করে। নানা ধরনের ইভটিজিং এর অভিযোগ আসে আমার কাছে। আজকেও এ ধরনের একটি অভিযোগ আসে। এতে আমি বিব্রত হই। অভিযোগকারীকে বলেছি আবার বিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে যদি কোন কিছু হয়ে থাকে আমি অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্কুল ড্রেস পড়ে বিদ্যালয়ে আসতে আমি বারবার বলে আসছি। এতে বহিরাগতরা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
১৫ মার্চ থেকে বিদ্যালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরোদমে পাঠদান চালু হলে শিক্ষার্থীদের আরও কিছুদিন সময় দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ মার্চ থেকে নয়, আমি গত জানুয়ারি মাস থেকেই তাদেরকে এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করছি। বিদ্যালয়ের নির্ধারিত ড্রেস পরিধান করে আসার নির্দেশনা দিচ্ছি। তাই সর্বশেষ বাধ্য হয়ে আজকে আমার কঠোর হতে হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গিয়াসউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, বিষয়টি শুনেছি। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলছি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি আরও বলেন, স্কুলড্রেস না পড়ে আসলে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার মতো কোনো প্রজ্ঞাপন এখনো জারি হয়নি।