চাঁদপুরে করোনাকালে নামকরা ৫ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বেতনে ছাড় দিচ্ছে না

চাঁদপুর প্রতিদিন রিপোর্ট :
এই করোনা মহামারীতে চাঁদপুরের বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা তথা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর বেশ কয়েকটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাদের বেতন আদায়ে গ্রহণ করেছে নানা অভিনব কৌশল। আর এই অভিনব কৌশলগুলো শহরের বেশ কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন ভিত্তিক স্কুল করেছে। যেমন শহরের উদয়ন শিশু বিদ্যালয়। গত কয়েক মাসে করোনাকালিন সময়ে তাদের নিজস্ব ফেইজে নিয়মিত বেতন পরিশোধে তাগিদ দিয়ে রেখেছে অভিভাবকদের। শেষ তারা একটি নোটিশ করে দিন কয়েক আগে এরকম- ‘আপনি যদি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত আপনার সন্তান তথা শিক্ষার্থীর বেতন দেন- তাহলে আপনি ১৫% ছাড় পাবেন।’ অপ্রিয় হলেও সত্য, এটি আবার বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে লিখা! অথচ স্কুলের ক্লাস যথানিয়মে সরকারি আদেশে বন্ধ। শিক্ষকরা মূল্যায়ণ পরীক্ষার নামে যবথব পরীক্ষা নিয়েছে। ২/১টা ক্লাসের ২/১ জন শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিয়েছেন। কিন্তু জুম ক্লাসের ব্যবস্থাই ছিলো না। স্কুলটিতে নেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। অথচ ওই স্কুলের শিক্ষার্থীর ন্যুনতম বেতন ৪০০ টাকা। এখন তাদের এই ১৫% ছাড় অফারে ৩৪০ টাকা। অনেক অভিভাবকদেরই প্রশ্ন- যিনি ৩৪০ টাকাই দিতে পারেন তো তিনি তো ৪০০ টাকাও পরিশোধ করতে পারেন! আর এলো না এখনো ডিসেম্বর মাস, বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল- আর এই সময়ে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের এই চাপ দিয়ে বা হাস্যকর অফার দিয়ে বেতন আদায় করা কতোটুকু যৌক্তিক!
এ ব্যাপার ওই স্কুলের অধ্যক্ষ নাজমুন নাহারের সাথ যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এই নোটিশ আমি দিয়েছি স্কুল সভাপতির মৌখিক নির্দেশে এবং মিটিং একটা মিটিং হয়েছে। কিন্তু ওই স্কুলের অভিভাবক সদস্য মোস্তাক আহমেদ জানান, এই ব্যপারে আমি জানিই না। বরং নোটিশ দেখে আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছি যে, এটা কোন্ ধরনের নোটিশ আপদকালে? স্কুলের সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারি ও প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি সদস্য সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ২ জনের কেউই বিষয়টি জানেন না। বরং উনারা এই করোনাকালে এই নোটিশ স্কুলের বারান্দায় এবং ফেইজবুকে দেখে হতবাক হয়েছেন। বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে উদয়ন শিশু বিদ্যালয়ের সভাপতি আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সেলিমের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি আসলে এটি কিভাবে হয়েছে জানিনা। তবে দেখি কি করা যায়। এ কথা বলে তিনি ফোন রেখে দেন। অনেক অভিভাবকেরই প্রশ্ন- উদয়ন স্কুল এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কারণ, উদয়ন স্কুল একটি প্রতিষ্ঠিত কিন্ডারগার্টেন। তারা নিজেরা নিজেদের ভবন ব্যবহার করে। এছাড়া তারা বছরের প্রথমেই যথেষ্ট টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে বেতন দিয়ে ফেলেছেন। যারা দিতে পারিনি তারা আতংকে আছে।
অভিভাবকরা বলছেন, হ্যাঁ, তারা শিক্ষকদের বেতন বাবদ প্রতি স্টুডেন্ট থেকে ১০০০ বা দেড় হাজার সর্বসাকুল্যে চাইতে পারতো। এই হিসেবেই তারা ৫/৬ শ স্টুডেন্ট থেকে একটা মোটা অংক পেতো। বাকীটা ভর্তুকি দিতো। আর সেই ভর্তুকি দেয়ার অবস্থান তাদের আছে।
একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় বেসিক ব্যাংকে এবং অন্য একটি ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির বিপুল টাকার সঞ্চয় রয়েছে। যার মধ্য থেকে ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন দেয়া কোনভাবেই অসম্ভব নয়। তবে শিক্ষকরা বলছেন, তারা নিয়মিত বেতন ভাতাদি পেয়ে আসছেন।
এদিকে এদিকে প্রায় একই পথ অনুসরণ করে চলেছে, ওআইডাব্লিউসিএ, কালক্টারেট, খ্রিষ্টান মিশনারী স্কুল এবং ড্যাফোডিল। এদের প্রত্যেকেই নিজস্ব ভবনে। কেউই ভাড়া বাড়িতে থেকে স্কুল পরিচালনা করছে না। আবার এই ৪টি স্কুলের মধ্যে শিক্ষার্থী বেতনও অনেক। ড্যাফোডিল ১৬০০, কালেক্টরেট ১০০০ খ্রিষ্টান স্কুল ও মিশনারী ৫শ’ ৬শ’ টাকা। তবে নীচের ৪টি স্কুল গত ৭/৮ মাসের করোনায় অনেক আধুনিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসগুলো সম্পাদন করেছে বলে দাবি করেছে। এ ক্ষেত্রে ড্যাফোডিল ও কালেক্টর স্কুল জুম ক্লাস নিচ্ছে নিয়মিত। তবে বেতন আদায় করার ব্যাপারে কায়দা-কানুন প্রয়োগে কেউই পিছিয়ে ছিলেন না এবং নেই। সব প্রধানদেরই একই কথা ছিলো শিক্ষকদের বেতন দিতে হয়। কিন্তু এই যে কোভিড-১৯ এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে আসা বন্ধ থাকায় অন্য সব ৫০ ভাগ খরচও তো কমে গেছে! এখন প্রশ্ন উঠেছে- এই হার ধরে বেতন তুললে তো আর অভিভাবকদের, শিক্ষার্থীদের বিষয়টা আর কেউ দেখলো না। এরপর আবার নতুন বছর আসতে মাত্র ২ মাস বাকি! তখন তো আবার বেতনসহ বিভিন্ন ফি নামে বেতন আদায়! তাহলে কি করবে অভিভাকরা?
এদিকে চাঁদপুর কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশের সভাপতি ওমর ফারুক এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন টিটোর সাথে কথা হলে তারা জানান, জেলায় মোট ৬৮৬টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক ও ইকরা মডেল কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক বলেন, সবমিলিয়ে ৪০ হাজার টাকা আমাদের বাড়িভাড়া দিতে হয় যা শহরের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লাগে না। তিনি বলেন, অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেনই বাড়াবাড়িতে গড়ে উঠা। তারপর আমাদের ওই ৪/৫টি স্কুলের তুলনায় শিক্ষার্থীর বেতন কম। কিন্তু আমরা এমন কোন নোটিশ করিনি অভিভাবকদের। অনুরোধ করেছি মৌখিকভাবে।
এসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, এ পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা পেয়েছি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। তিনি বলেন, শিক্ষা কোন পণ্য সামগ্রী নয় ছাড় দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে। তাছাড়া করোনা চলছে। অভিভাবকরা স্বস্তিতে নেই। তিনি বলেন, উপজেলা গ্রামে-গঞ্জে অনেক কিন্ডারগার্টেনই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং গেছে। ওরা এবং আমরা তো চাপাচাপি করছি না, আবার সহযোগিতাও পাচ্ছি না। কিন্তু যেহেতু প্রতিষ্ঠান গড়েছি, তাকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের। তিনি বলেন, শহরের এইসব স্কুল বেতন তুলে এভাবে, কিন্তু আমরা তুলতে গেলেই নানারকম কথা আসে। অথচ আমাদেরই সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি সরকারের কাছ থেকে কিন্ডারগার্টেনগুলোর জন্য প্রনোদনা দাবি করেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply