চাঁদপুরে অটোচালকের উদারতা, পুলিশের সহযোগিতায় ৬১ লাখ টাকা ফিরে পেলেন বিকাশ এজেন্ট

আশিক বিন রহীম :
চাঁদপুরে অটোরিকশায় চালকের উদারতায় ৭ ঘন্টা পর ভুল করে ফেলে যাওয়া ৬১ লাখ টাকা ফিরে পেলো বিকাশ এজেন্ট। ২১ জুন রোববার সন্ধ্যায় চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ পুরাণবাজার পুরাতন ফায়ার সার্ভিস এলাকা থেকে এই টাকা উদ্ধার করে। এর আগে একই দিন সকাল সাড়ে ১১টার সময় শহরের জোরপুকুরপাড় মনের ভুলে অটো-রিক্সায় ৬১ লাখ টাকার একটি ভ্যাগ ফেলে যায় চাঁদপুরে বিকাশের এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল। টাকা পাওয়ার পর অটোচালক আধাঘন্টা ওই টাকা নিয়ে অপেক্ষা করার পর কেউ না আসায় তা নিয়ে গ্যারেজে চলে যায়।
পুলিশ ও বিকাশের এজেন্ট সূত্র জানায়, রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় বিকাশ এজেন্ট কর্মী মাসুদ হোসেন শহরের ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ৬১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ব্যাংক থেকে নেমে ব্যাগভর্তি সেই টাকা নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় উঠে শহরের জোড় পুকুরপাড় এলাকায় এসে নামেন। তখন ভুলক্রমে তিনি অটোরিকশাতে টাকাগুলো রেখেই মাসুদ নেমে পড়েন। সেখানে বিকাশের এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে মাসুদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এরপর তারা দুইজন ফরিদগঞ্জে কাজে চলে যান। প্রায় আধ ঘন্টা পর বুঝতে পারেন যে টাকার ভ্যাগ অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন।
এদিকে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে স্থানীয় একটি নির্মাণাধীন ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, অটোরিকশায় থেকে মাসুদ নেমে যাবার পর অটোরিকশা চালক সজিব প্রায় আধঘন্টা সেখানে অপেক্ষা করেন। এরপর টাকার ভ্যাগটা সে নিজের কাছে নিয়ে সেখান থেকে চলে যাবার দৃশ্য ধরে পরে। ভিডিও ফুটেজ দেখার পরে বিকাশ এজেন্ট জুয়েল তার কর্মী মাসুদকে নিয়ে সদর মডেল থানায় ছুটে যান। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে।
এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছে বিকাশ এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল। অভিযোগের ভিত্তিতে সদর মডেল থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকটি দল নিখোঁজ অটো চালককে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে খুঁজতে শুরু করেছে।
অপরদিকে অটোরিকশায় চালক সজিব সেখান থেকে পুরাণবাজার পুরাতন ফায়ার সার্ভিস এলাকাস্থ গ্যারেজে যায়। সেখানে যাবার পরে প্রথমে বিষয়টি সে জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারি বাদলের কাছে টাকা পাওয়ার কথা জানায়। বাদল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ঘটরাটি পূর্বেই জানবার কারণে সে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের অফিস সহকারি বাদল জানান, অটোরিকশা চালক সজিব আমাকে বিষটি জানানোর পর আমি সাথে সাথে মডেল থানার ওসিকে জানাই।
অটোরিকশার চালক সজীব জানান, তিনি টাকাগুলো পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। টাকাগুলো ফেরত দিতে তিনি ওই স্থানে প্রায় আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেন। পরে কেউ না আসায় সরাসরি তার পুরানবাজার গ্যারেজে চলে যান।
খবর পেয়ে সন্ধ্যায় চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) নাসিম উদ্দিন পুরাণবাজার পুরাতন ফায়ার সার্ভিস এলাকা থেকে টাকা উদ্ধার করে।
বিকাশ এজেন্ট আলমগীর হোসেন জুয়েল জানান, ব্যাংক থেকে তোলা টাকাগুলো বিকাশ কর্তৃপক্ষের। এসব টাকা বিভিন্ন বাজারের ছোট ছোট এজেন্টদের মাঝে বিতরণের জন্য তোলা হয়েছিল। এই ঘটনায় থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাসিম উদ্দিন জানান, সিসিটিভির ফুটেজ দেখেই থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম অটো চালককে খুঁজতে শুরু করি। পরে সন্ধ্যায় খবর পেয়ে শহরের পুরানবাজার হরিসভা রোডের পুরান ফায়ার সার্ভিস এলাকায় অটোরিকশার চালক সজীবের (১৮) কাছ থেকে ৬১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। একটি অটোবাইকের গ্যারেজ থেকে লাল রঙের ব্যাগ ভর্তি অবস্থায় টাকাগুলো উদ্ধার হয়।
ওসি বলেন, ছেলেটি এখনো থানায় আছে। আমরা তাকে জিজ্ঞসাবাদ করছি। তারা ভুলক্রমে টাকা ফেলে রেখে যায়। এরপর টাকার ব্যাগ পেয়ে অটোচালক আধাঘন্টা ওই স্থানে অপেক্ষাও করে। এসব মিলে মনে হচ্ছে- তার মধ্যে কোন গিলটি নেই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply